মানুষের কষ্ট লাঘবে এগিয়ে আসুন

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৮: ০৯

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘোষিত কর্মসূচি শাটডাউনের কারণে দেশের পরিস্থিতি একসময় অস্বাভাবিকতার দিকে চলে যায়। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কারফিউ দিতেবাধ্য হয়। এখনো কারফিউ চলছে। পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু তারপরও জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সরকার নির্বাহী আদেশে তিন দিন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ তৈরি পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। 

বুধবার থেকে ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেওয়া হয়েছে। অফিস চলবে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। লোকাল ও দূরপাল্লার বাসও চালু হবে। জনমনে স্বস্তি ফিরে আসতে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। কিন্তু সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষেরা বিপদে পড়েছেন।

রিকশাওয়ালা, পাড়া-মহল্লা ও রাস্তার চা দোকানদার, ফুটপাতের ছোট দোকানদারেরা ভালো নেই। কারণ তাঁরা প্রতিদিনের আয়-রোজগার দিয়ে জীবন নির্বাহ করেন। অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় ও নিরাপত্তাহীনতায় মানুষের স্বাভাবিক চলাচল কম। ফলে রিকশাওয়ালাদের আয় কমে গেছে। যাঁরা ফুটপাতে দোকান বসিয়ে জিনিসপত্র বিক্রি করেন, তাঁদেরও কোনো আয় নেই বললেই চলে। ফলে তাঁদের অনেককে কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।

ঢাকাসহ সারা দেশে পরিবহন বন্ধ থাকায় মহা দুর্ভোগে পড়েছেন পরিবহন সেক্টরের শ্রমিকেরা। আমাদের দেশে দূরপাল্লার পরিবহন সেক্টরের চালক, সহকারী ও সুপারভাইজার মাসিক বেতন পান। কিন্তু লোকাল পরিবহন সেক্টরের চালক, সহকারী ও কন্ডাক্টররা মাসিক বেতন পান না। তাঁরা দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। তাঁদের আয় মূলত গাড়ি চলার ওপর নির্ভর করে। গাড়ি না চললে তাঁদের আয়ও হয় না।

এদিকে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও অস্বাভাবিক বেড়েছে। এমনিতেই সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দাপট তো আছেই। সবশেষে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে আন্দোলন ও কারফিউ পরিস্থিতি। বাজারে সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। এক দিকে আয় নেই, অন্যদিকে সব ধরনের জিনিসের বাড়তি দামের কারণে অসহায় হয়ে পড়েছেন অন্তত কয়েক কোটি মানুষ।

সারা দেশে গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী এবং বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানে সংশ্লিষ্ট সবাই ইতিবাচক সাড়া দেবেন। দেশের অসংখ্য মানুষ কষ্টে থাকলে শান্তি-স্বস্তি কিছুই আশা করা যায় না। অথচ এখন দরকার দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা। পুলিশ-র‍্যাব-বিজিবি-সেনাবাহিনী দিয়ে বাইরের উত্তেজনা প্রশমিত করা গেলেও আয়-উপার্জনের পথ বন্ধ থাকলে, অর্থাৎ ঘরে ঘরে মানুষ প্রায় অনাহারে থাকলে প্রকৃত শান্তি আসবে না।

গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট লাঘব করতে হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা জরুরি। এটা শুধু সরকারের একার কাজ নয়। এখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সবাইকে আন্তরিকভাবে মনোযোগী হতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত