চুয়াডাঙ্গায় মো. রাসেল আলী (১৭) নামের এক কিশোরকে ভারতে পাচার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাকে ফিরে পেতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন এলাকাবাসী। গতকাল বুধবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ শেষে মানববন্ধন করা হয়। পরে তার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ রাসেলের বাবা নাজমুল হক বলেন, তাঁর বাড়ি চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সুমুরদিয়া কলোনিপাড়ায়। তাঁর ছেলে রাসেল আলী গত ২৯ অক্টোবর রাতে নিখোঁজ হয়। কোথাও খুঁজে না পেয়ে ২ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় অপহরণ মামলা করেন। পরে ৯ নভেম্বর পুলিশ চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সন্দেহভাজন চুয়াডাঙ্গা পুরোনো ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকার মো. অনীক (২২) ও মো. কালাম (২৪) নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে।

নাজমুল হক আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন এলাকার পুরোনো স্টেডিয়ামের পাশের এক গ্যারেজে কাজ করত তাঁর ছেলে রাসেল। কাজের সূত্র ধরে কালাম ও অনীকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ২৯ অক্টোবর রাতে অনীক আর কালাম মোবাইল ফোনে রাসেলকে ডেকে নিয়ে ফুসলিয়ে ভারতের ট্রেনে তুলে দেয়।

নাজমুল হক বলেন, পুলিশের কাছ থেকেই তাঁরা এই তথ্য পেয়েছেন। এর আগে রাসেলকে খুঁজে না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এর সূত্র ধরে তদন্তে নামে পুলিশ। একপর্যায়ে চুয়াডাঙ্গা রেলবাজার এলাকা থেকে অনীক ও কালামকে আটক করে হেফাজতে নেয় পুলিশ।

নাজমুল হক আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে সিসিটিভি ফুটেজে কালাম ও অনীককে রাসেলের সঙ্গে দেখা যায়। তারা দুজন মিলে কৌশলে রাসেলকে বেনাপোলের ট্রেনে তুলে দেয়। বেনাপোলে দুজন অনীককে রিসিভ করে। সিসিটিভি ফুটেজে সেই বিষয়টিও ধরা পড়েছে। তিনি বলেন, মামলা করায় বিভিন্ন দিক থেকে তাঁকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা বলেন, নিখোঁজ রাসেলের বাবা বাদী হয়ে মামলা করলে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। একপর্যায়ে রাসেলের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে অনীক ও কালামের জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে আসে। পরে তাদের আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। মামলাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাব্বুর রহমান বলেন, ‘আমরা স্টেশনের সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করেছি। সেখানে রাসেলকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার আলামত পাইনি। সে ওপেন ঘোরাফেরা করছিল। তার সঙ্গে কালাম ও অনীককে দেখা গেছে। আমরা তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছি।’

ওসি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কালাম ও অনীক জানিয়েছে, রাসেল ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। রাসেল তাদের ভারতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে বলেছিল। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া ভারতে যাওয়া যাবে না জেনেও কালাম ও অনীক মিলে রাসেলের কাছে থাকা ২ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছে। এরপর যশোরের ট্রেনে উঠিয়ে দিয়েছে।

মাহাব্বুর রহমান জানান, পরে রাসেল যে দোকানে কাজ করত, তার মালিকের কাছ থেকে ৫০০ টাকা নেয়। অপহরণ হলে ৫০০ টাকা নেওয়ার কথা না। কালাম ও অনীককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। রাসেলকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।