নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের আটটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন আগামী সোমবার। এ নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়ার পরও ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এসব ইউপিতে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী ও চলমান বিরোধের কারণে জনমনে এ শঙ্কা কাটছে না বলে জানা গেছে।

সরেজমিন জানা গেছে, এক বছরের অধিক সময় ধরে চলমান দলীয় বিরোধের জেরে উপজেলায় বেশ কয়েকটি বন্দুকযুদ্ধ ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে একজন সাংবাদিক ও এক পরিবহন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। নির্বাচনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সবক’টি ইউনিয়নে পক্ষ-বিপক্ষ প্রার্থীদের প্রচারণা নিয়ে বেশ কয়েকটি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতেও চরকাঁকড়া ইউপির এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগে গত মঙ্গলবার দিনেদুপুরে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা উপজেলার একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা ও সাবেক জনপ্রতিনিধি আনছার উল্যাহকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তাঁর (কাদের মির্জা) বিরুদ্ধে রামপুর ইউনিয়নে ঝাড়ু মিছিল হয়েছে। এ সময় দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এড়াতে গিয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি ও ৭ পুলিশ সদস্যসহ ১১ জন আহতের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে পুলিশ বাদী হয়ে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ায় মামলা হয়েছে।

এ ছাড়া সিরাজপুর ইউপিতে মেয়র সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী নাজিম উদ্দীন মিকনের লোকজন চশমা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল হাশেমের কর্মী শাহেদের (২০) ওপর একাধিকবার হামলা চালান।

এদিকে গত সোমবার মুছাপুর ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন চৌধুরীর এক কর্মী ও ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহেদা বেগমের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটের ঘটনা ঘটে। একই ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী আইয়ুব আলীও অভিযোগ করেছেন তাঁর মহিলা কর্মীদের ওপর হামলার।

বিভিন্ন ইউনিয়নে নানা হুমকির কারণে প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকেরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। অবশ্য প্রশাসন এক্ষেত্রে ভোটারদের ভয়ভীতি দূর করার জন্য ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজ্জাদ রোমন বলেন, উপজেলার আট ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ হাটবাজারে পুলিশি পথসভা করে নির্ভয়ে ভোট দিতে ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। প্রতিটি চেকপোস্ট ও ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে বডি অন ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে।

যেকোনো স্থান থেকে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই স্পেশাল ডিউটিতে থাকা পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া পুলিশি তৎপরতায় ইতিমধ্যে গুলিসহ দুটি অবৈধ অস্ত্র, চরপার্বতী ইউপি থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র উদ্ধার ও তিনজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের এসব অভিযানের ফলে অনেক সন্ত্রাসী গা-ঢাকা দিয়েছেন। বহিরাগতদের কোম্পানীগঞ্জে প্রবেশে কঠোরতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, আগামী সোমবার সপ্তম ধাপে কোম্পানীগঞ্জের আট ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে আওয়ামী লীগের বিদ্যমান দুই পক্ষের কোন্দলের কারণে কোনো পক্ষকেই নৌকা প্রতীক দেয়নি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।