প্রতিবন্ধী ভাতা তুলছেন ১২ জন সুস্থ ব্যক্তি

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৩: ১৮

কেউ ব্যবসায়ী, কেউ দোকানদার, কেউ গরুর খামারি। আবার কারও আছে হাঁসের খামার, মুরগির খামার। এমন ১২ জন সুস্থ-সবল ব্যক্তি পাচ্ছেন প্রতিবন্ধী ভাতা। সম্পর্কে তাঁরা পরস্পরের আত্মীয়–স্বজন। দুই বছর ধরে নিয়মিত তাঁরা প্রতিবন্ধী ভাতা তুলছেন। এমন প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নে।

জালিয়াতির মাধ্যমে এ ভাতা ভোগ করা ব্যক্তিরা হলেন এনাম মিয়া, এংরাজ মিয়া, আনেছা বেগম, জাবেদ মিয়া, আবেদ মিয়া, বানেছা বেগম, খুশ বানু, রাহিমা বেগম, হালিমা বেগম, তানজিলা আক্তার, জান্নাতুল ফেরদৌস ও সানজিদা বেগম।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাতলপাড় ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী ওই ১২ জনের কেউই প্রতিবন্ধী নন। তাঁদের অধিকাংশই মৃত প্রতিবন্ধীর স্থলে নাম অন্তর্ভুক্ত করে সরকারি ভাতা পাচ্ছেন।

উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবুল কালাম বলেন, ‘আনেছা বেগমের একই পরিবারের ১২ জন সুস্থ মানুষ প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। এটা এলাকার সবাই জানেন। অথচ আমরা জনপ্রতিনিধি হয়েও প্রকৃত প্রতিবন্ধীর নাম অন্তর্ভুক্ত করতে গেলে সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মচারীরা হয়রানি করেন। এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, আনেছা বেগম প্রভাবশালী। তাঁর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চান না।

এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলার চাতলপাড় গ্রামে আনেছা বেগমের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। এ সময়ে তাঁর দুই ছেলের বউ তানজিলা বেগম ও জান্নাতুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা শাশুড়ি আনেছা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে আনেছা বেগমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।

জানা যায়, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হয়। তবে ভাতা পেতে তাঁকে আগে প্রতিবন্ধী সনদ গ্রহণ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের প্রত্যয়নের প্রয়োজন হয়। সুস্থ মানুষ কীভাবে চিকিৎসকের প্রতিবন্ধী প্রত্যয়ন পেলেন এ বিষয়ে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা  অভিজিৎ রায় বলেন, ‘চিকিৎসকেরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখেই প্রত্যয়ন দিয়েছেন। আমার হাসপাতালের কোনো চিকিৎসক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত না।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রাখেশ পাল বলেন, ‘একই পরিবারের ১০-১২ জন সুস্থ ব্যক্তি প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। এটা জানার পর আমি ভাতাভোগীদের বাড়িতে গিয়ে যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পেয়েছি। তবে অনিয়মটি আমার এ কর্মস্থলে আসার এক বছর আগেই হয়েছে।’

অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে রাখেশ পাল বলেন, এখন তদন্ত করা হবে। তদন্তে যাঁদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, অনিয়মের বিষয়টি প্রমাণিত। তদন্ত করে দ্রুত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত