শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
রমজান মাসে শেষ রাতে পুরান ঢাকায় গলির ধারে বয়স্করা অপেক্ষা করতেন। তাঁদের হাতে থাকত খুরমা কিংবা অন্য কোনো মিষ্টান্ন। জানালার ফাঁক গলে উঁকি দিতেন নারীরা। দূর থেকে ভেসে আসত সমবেত কণ্ঠ, ‘বাহারে সাওম গুজরি যা রাহি হ্যায়, দিলে সায়েমপে বাদলি ছা রাহি হ্যায়’ (কাসিদা)। পুরান ঢাকার ষাটোর্ধ্ব বয়সী সবারই এই দৃশ্য চেনা। তবে এখন রমজানের রাতে পুরান ঢাকার গলিতে এমন দৃশ্য তেমন একটা দেখা যায় না। কাসিদার সুরে ঢাকাবাসীকে সাহ্রি জাগিয়ে তোলার রীতি হারিয়ে গেছে বললেই চলে। যেটুকু আছে, তা না থাকার মতোই।
পুরান ঢাকার একসময়কার পঞ্চায়েতপ্রধান মাওলা বখশ সরদারের বড় ছেলে আজিম বখশ স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘এখন আর আগের মতো ও রকম কাসিদা হয় না। আগে প্রতি পাড়ায় কাসিদার দল থাকত। পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের মানুষ আমি। এলাকার ফরিদাবাদে দিগন্ত মজলিস নামে একটা সংগঠন ছিল। ওরা প্রতিবছর কাসিদার আয়োজন করত। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি, হ্যাজাক বাতি মাথায় নিয়ে এরা ঘুরত। হারমোনিয়াম সব দলের কাছে থাকত না। সাধারণত ২০-২৫ জনের দল হতো। দলের লোকেরা মাসের শেষে বাড়ি বাড়ি যেত। ওদের বকশিশ দেওয়া হতো।’
কাসিদার প্রতিযোগিতাও হতো। আজিম বখশ বলেন, ‘বংশাল, নয়াবাজার, এই দিকের অংশের ফরিদাবাদেই প্রতিযোগিতা হতো। দুই দিনব্যাপী চলত। পুরস্কার দেওয়া হতো দলগতভাবে। লালবাগের ওদিকেও অনেক জায়গায় হতো। এখন আমার জানামতে, হোসেনি দালানে এর প্রচলন আছে। অন্য জায়গায় এখন আর এ রকম কম্পিটিশন হয় না।’ তবে তিনি জানালেন, এখনো রমজানে দু-এক জায়গায় কাসিদার আয়োজন হয়। কিছু দল টিকে আছে। আজিম বললেন, ‘গত বছর লোহারপুল পঞ্চায়েত একটা আয়োজন করেছিল। ওটা প্রতিযোগিতা না, একটা দল কিছু পারফর্ম করেছিল।’
পুরান ঢাকার ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা ঢাকাবাসী সংগঠনের সভাপতি শুকুর সালেক অবশ্য কিছু আশার কথা শোনান। তিনি জানান, এখনো কিছু দল আছে, যারা কাসিদা নিয়ে কাজ করে। দু-একটি এলাকায় এখনো রমজানে কাসিদা শোনা যায়। আগামী ২১ ও ২২ রমজান কাসিদা পাঠের একটি আয়োজন হওয়ারও কথা চলছে।
বুড়িগঙ্গার তীরে রমজানের চাঁদ দেখা, কাসিদা শুনে সাহ্রি করা আর ঈদের মিছিল রোজাকেন্দ্রিক পুরান ঢাকার ঐতিহ্য। এসবের মধ্যে কাসিদা জায়গা করে নিয়েছিল অনন্যভাবে। কাসিদার প্রচলন ঠিক কবে থেকে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। হাকীম হাবিবুর রহমানের ‘ঢাকা পাঁচাশ বারাস পাহেলে’ বইয়ের তথ্যমতে, বিশ শতকের গোড়ার দিকে ঢাকায় কাসিদার পুনরাবির্ভাব ঘটে। তৎকালীন মহল্লা সরদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘ক্বাসীদা সংগীত’ বিকাশ লাভ করতে থাকে।
তবে রমজান ঘিরে পুরান ঢাকার সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন ঘটেছে নানা কারণে। নগরায়ণ ও পেশাগত কারণে ভেঙেছে পরিবার ও মহল্লাকেন্দ্রিক জীবনব্যবস্থা। পঞ্চায়েতব্যবস্থা নেই বললেই চলে। প্রযুক্তির কারণেও কাসিদার চাহিদা কমেছে। আজিম বখশ বলেন, সাহ্রী খাওয়ার ডাকে কাসিদার মূল ভূমিকা ছিল। তখন মানুষ এত প্রযুক্তি পায়নি। মসজিদের আজানে মাইকের প্রচলনও বেশি দিনের নয়। কাজেই কাসিদার দলরাই মূলত সাহ্রী খাওয়ার জন্য জাগিয়ে দিত।
ঢাকায় যাঁরা কাসিদা পাঠ করেন, তাঁদের মধ্যে জুম্মন মিয়া, আনোয়ার হোসেন, মঞ্জুর আলম, আব্দুস সামাদ, মানিক চাঁদ, সৈয়দ ফাসীহ হোসেনের নাম শোনা যায়। জুম্মন মিয়ার কথা থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ ও পরের দুই বছর কাসিদার প্রতিযোগিতা বন্ধ ছিল। স্বাধীনতার পরে প্রথম ১৯৭৪ সালে উর্দু রোডে কাসিদা প্রতিযোগিতা হয়। পুরান ঢাকার কিছু কাসিদাশিল্পী এখনো এই ধারা বয়ে চলছেন।
রমজান মাসে শেষ রাতে পুরান ঢাকায় গলির ধারে বয়স্করা অপেক্ষা করতেন। তাঁদের হাতে থাকত খুরমা কিংবা অন্য কোনো মিষ্টান্ন। জানালার ফাঁক গলে উঁকি দিতেন নারীরা। দূর থেকে ভেসে আসত সমবেত কণ্ঠ, ‘বাহারে সাওম গুজরি যা রাহি হ্যায়, দিলে সায়েমপে বাদলি ছা রাহি হ্যায়’ (কাসিদা)। পুরান ঢাকার ষাটোর্ধ্ব বয়সী সবারই এই দৃশ্য চেনা। তবে এখন রমজানের রাতে পুরান ঢাকার গলিতে এমন দৃশ্য তেমন একটা দেখা যায় না। কাসিদার সুরে ঢাকাবাসীকে সাহ্রি জাগিয়ে তোলার রীতি হারিয়ে গেছে বললেই চলে। যেটুকু আছে, তা না থাকার মতোই।
পুরান ঢাকার একসময়কার পঞ্চায়েতপ্রধান মাওলা বখশ সরদারের বড় ছেলে আজিম বখশ স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘এখন আর আগের মতো ও রকম কাসিদা হয় না। আগে প্রতি পাড়ায় কাসিদার দল থাকত। পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের মানুষ আমি। এলাকার ফরিদাবাদে দিগন্ত মজলিস নামে একটা সংগঠন ছিল। ওরা প্রতিবছর কাসিদার আয়োজন করত। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি, হ্যাজাক বাতি মাথায় নিয়ে এরা ঘুরত। হারমোনিয়াম সব দলের কাছে থাকত না। সাধারণত ২০-২৫ জনের দল হতো। দলের লোকেরা মাসের শেষে বাড়ি বাড়ি যেত। ওদের বকশিশ দেওয়া হতো।’
কাসিদার প্রতিযোগিতাও হতো। আজিম বখশ বলেন, ‘বংশাল, নয়াবাজার, এই দিকের অংশের ফরিদাবাদেই প্রতিযোগিতা হতো। দুই দিনব্যাপী চলত। পুরস্কার দেওয়া হতো দলগতভাবে। লালবাগের ওদিকেও অনেক জায়গায় হতো। এখন আমার জানামতে, হোসেনি দালানে এর প্রচলন আছে। অন্য জায়গায় এখন আর এ রকম কম্পিটিশন হয় না।’ তবে তিনি জানালেন, এখনো রমজানে দু-এক জায়গায় কাসিদার আয়োজন হয়। কিছু দল টিকে আছে। আজিম বললেন, ‘গত বছর লোহারপুল পঞ্চায়েত একটা আয়োজন করেছিল। ওটা প্রতিযোগিতা না, একটা দল কিছু পারফর্ম করেছিল।’
পুরান ঢাকার ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা ঢাকাবাসী সংগঠনের সভাপতি শুকুর সালেক অবশ্য কিছু আশার কথা শোনান। তিনি জানান, এখনো কিছু দল আছে, যারা কাসিদা নিয়ে কাজ করে। দু-একটি এলাকায় এখনো রমজানে কাসিদা শোনা যায়। আগামী ২১ ও ২২ রমজান কাসিদা পাঠের একটি আয়োজন হওয়ারও কথা চলছে।
বুড়িগঙ্গার তীরে রমজানের চাঁদ দেখা, কাসিদা শুনে সাহ্রি করা আর ঈদের মিছিল রোজাকেন্দ্রিক পুরান ঢাকার ঐতিহ্য। এসবের মধ্যে কাসিদা জায়গা করে নিয়েছিল অনন্যভাবে। কাসিদার প্রচলন ঠিক কবে থেকে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। হাকীম হাবিবুর রহমানের ‘ঢাকা পাঁচাশ বারাস পাহেলে’ বইয়ের তথ্যমতে, বিশ শতকের গোড়ার দিকে ঢাকায় কাসিদার পুনরাবির্ভাব ঘটে। তৎকালীন মহল্লা সরদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘ক্বাসীদা সংগীত’ বিকাশ লাভ করতে থাকে।
তবে রমজান ঘিরে পুরান ঢাকার সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন ঘটেছে নানা কারণে। নগরায়ণ ও পেশাগত কারণে ভেঙেছে পরিবার ও মহল্লাকেন্দ্রিক জীবনব্যবস্থা। পঞ্চায়েতব্যবস্থা নেই বললেই চলে। প্রযুক্তির কারণেও কাসিদার চাহিদা কমেছে। আজিম বখশ বলেন, সাহ্রী খাওয়ার ডাকে কাসিদার মূল ভূমিকা ছিল। তখন মানুষ এত প্রযুক্তি পায়নি। মসজিদের আজানে মাইকের প্রচলনও বেশি দিনের নয়। কাজেই কাসিদার দলরাই মূলত সাহ্রী খাওয়ার জন্য জাগিয়ে দিত।
ঢাকায় যাঁরা কাসিদা পাঠ করেন, তাঁদের মধ্যে জুম্মন মিয়া, আনোয়ার হোসেন, মঞ্জুর আলম, আব্দুস সামাদ, মানিক চাঁদ, সৈয়দ ফাসীহ হোসেনের নাম শোনা যায়। জুম্মন মিয়ার কথা থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ ও পরের দুই বছর কাসিদার প্রতিযোগিতা বন্ধ ছিল। স্বাধীনতার পরে প্রথম ১৯৭৪ সালে উর্দু রোডে কাসিদা প্রতিযোগিতা হয়। পুরান ঢাকার কিছু কাসিদাশিল্পী এখনো এই ধারা বয়ে চলছেন।
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
৩ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪