পানি না দিয়েও টাকা আদায়

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮: ৩৮
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ০১

মাত্র ৪০ শতাংশ ভোক্তাকে পানি দিয়ে শতভাগ হোল্ডিং থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগে কুষ্টিয়া পৌরসভার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। অর্ধশত নাগরিকের পক্ষে অ্যাডভোকেট মো. নওশের আলী গত ৮ ডিসেম্বর পৌর কর্তৃপক্ষের আচরণকে ‘চরম নৈরাজ্য ও স্বেচ্ছাচারমূলক’ আখ্যা দিয়ে এর প্রতিকার ও টাকা আদায়ে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে মামলা করেন।

কুষ্টিয়া সদর জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতের বিচারক রাশেদুর রহমান অভিযোগটি আমলে নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেন। পৌরসভার পানি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ৪ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য সময় প্রার্থনা করেন। আদালত পৌর কর্তৃপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২০ এপ্রিল সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দাখিলের আদেশ দিয়েছেন। আইনজীবী নওশের বলেন, ‘আমি এবং আরও ৪৯ জন যাঁদের বাসায় পৌরসভা পানি দেয় না; কিন্তু ৫০০ টাকা করে দিতে বাধ্য করে তাঁদের পক্ষে মামলাটি করেছি। আদালত এর ব্যাখ্যা চেয়েছে।’

আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র, নির্বাহী প্রকৌশলী, সচিব, সহকারী প্রকৌশলী (পানি) এবং মোকাবিলা বিবাদী করা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসককে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী বলেন, ‘পৌর এলাকায় নাগরিক সেবার গুরুত্বপূর্ণ খাত পানি সরবরাহ। দীর্ঘদিন ধরেই এখানে চাহিদার তুলনায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় সক্ষমতার ঘাটতি আছে। ঘাটতি পূরণে এরই মধ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন এলাকায় সাব-মার্জেবল বোরিং স্থাপনসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাতে শুষ্ক মৌসুমে শতভাগ না হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরিবারের পানির জোগান দেওয়া সম্ভব হবে।’

মামলার বাদীদের একজন কুষ্টিয়া উপজেলা সড়কের বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস। তাঁর বাসায় পৌরসভার লাইন নেই, কিন্তু তিনি পানি সেবা কর দিচ্ছেন। জান্নাতুল বলেন, ‘পৌরসভার আচরণ অসহনীয়। সোজা কথা হচ্ছে, আপনি আমাকে সেবা দেবেন, আমার কাছ থেকে সেবার কর নেবেন। পানি দেবেন না, আবার অন্যায়ভাবে জুলুম করে টাকা নেবেন কেন? কোথাও এটা নাই।’

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘৪২ দশমিক ৭৯ বর্গকিলোমিটারের পৌরসভায় প্রায় ৮৬ হাজার পরিবারে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করে। পৌরসভার মোট হোল্ডিং সংখ্যা ৩৬ হাজার ৩০২টি। এর মধ্যে পানির গ্রাহক ১০ হাজার ৬৫৩টি হোল্ডিং। অর্থাৎ ৪০ শতাংশ হোল্ডিং পানি পায়।’ প্রতিটি পরিবারে দিনে প্রায় এক ঘনমিটার করে পানি সরবরাহ করা হয় জানিয়ে প্রকৌশলী বলেন, ‘পৌরসভা প্রতিদিন ১০ হাজার ৪০০ ঘনমিটার পানি উৎপাদন ও সরবরাহ করে।’

রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এ ছাড়া তিন হাজার ৫০০ হস্তচালিত চাপকল, এক হাজার ৩৬৫টি সাব মার্জেবল মোটর এবং ২৮৯টি জেড-টাইপ মোটর (চাপকল বোরিংয়ের সঙ্গে সংযুক্ত) অনুমোদন দিয়েছে পৌরসভা। ধারণা করা হচ্ছে, পৌরসভার অনুমোদন ছাড়া আরও অন্তত সহস্রাধিক সাব-মার্জেবল এবং জেড-টাইপ পাম্প রয়েছে।’ তবে পৌরবিধি মতে, পৌর এলাকার যেখানেই বসবাস করেন না কেন, অবশ্যই পানি সেবা কর দিতে বাধ্য বলে দাবি করেন নির্বাহী প্রকৌশলী।

জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম কাদরী শাকিল বলেন, ‘পৌসভার সর্বমোট হোল্ডিং সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। এর মধ্যে মাত্র ১০ হাজার হোল্ডিংয়ে পানি দিতে পারে পৌরসভা। বাকিরা নিজ নিজ উদ্যোগে হস্তচালিত চাপকল, জেড-টাইপ পাম্প টিউবওয়েল এবং বিভিন্ন সাইজের সাব-মার্জেবল স্থাপন করে পানির চাহিদা পূরণ করছেন। এ জন্য পৌরসভাকে দিতে হচ্ছে সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ৮৭ হাজার টাকা; ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি টাকা আদায় করছে পৌরসভা। এ ছাড়া ওই সব হোল্ডিংধারীদের কাছ থেকে মাসিক পানি সেবা কর আদায় করছে। হোল্ডিং প্রতি ৫০০ টাকা করে কোটি কোটি টাকা আদায় করলেও পানি সেবা খাতের উন্নয়নে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই পৌরসভার।’

কুষ্টিয়া স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মৃণাল কান্তি দে বলেন, ‘পৌরসভা একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। স্থান-কাল বাস্তবতায় উন্নয়ন ও নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে পৌর পরিষদের কিছু এখতিয়ার আছে; তবে এখতিয়ার বা ক্ষমতা যাই থাক না কেন সেটা কোনোভাবেই জনস্বার্থ বিরোধী হবে না। তেমন কোনো ঘটনায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে অবশ্যই তাঁরা প্রতিকার চাইতে পারেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত