নেতা-কর্মীর কথার লড়াইয়ে উত্তপ্ত বিএনপি-জামায়াত

খান রফিক, বরিশাল
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০: ৫৫

জোট বেঁধে রাষ্ট্র পরিচালনার পাশাপাশি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে সরব ছিল বিএনপি ও জামায়াত। কিন্তু ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সেই সম্পর্কে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। দল দুটির নেতাদের বক্তব্যে বিভক্তির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বরিশালে কথার লড়াইয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির ময়দান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি নানা অনুষ্ঠানে এক দলের নেতা-কর্মীরা অন্য দলকে লক্ষ্য করে তির্যক মন্তব্য করছেন। 

সদর উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল সাবু সম্প্রতি ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, ‘কার কার মনে আছে ১৯৯৬ সালের ভোটের কথা! কারা যেন আম পার্টির তালে পড়ে একা ভোট করে তিনটি আসন পাইছিল।’ তিনি মূলত ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের ইঙ্গিত করেন। তখন জামায়াত এককভাবে নির্বাচন করে তিনটি আসন পেয়েছিল।

ওই পোস্টে শাহরিয়ার আবেদীন রাসেল নামের একজন বলেন, জামায়াত এবার বেশি হলে ২০টি আসন পাবে। জবাবে মেহেদি হাসান নামের একজন মত দেন, বিএনপি যে পরিমাণ লুটপাট শুরু করেছে, তাতে জামায়াত ২২০টি আসন পেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। এর পাল্টা হিসেবে সাবু লেখেন, ‘এত দিন আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলা লোকগুলো হঠাৎ জামায়াতকে ভালোবাসছে।’

মেহেদী উত্তরে বলেছেন, ‘জামায়াতের আমির দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেভাবে দৌড়াচ্ছেন, দেশের এমন ক্রান্তিলগ্নে যে ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে, অন্য কোনো দলের নেতাকে দেখা যাচ্ছে না। আপনার দলের নেতার কথা কিছু বলার নেই।’

এ প্রসঙ্গে কথা হলে সাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জামায়াতের লোকেরা বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তুলনা করতে চান। তাঁরা বলছেন, দখল-বাণিজ্য করছে বিএনপি। কিন্তু কোথায় দখল? তাদের কথাবার্তার কারণে বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। জামায়াত আকারে-ইঙ্গিতে বলে বেড়ায়, তারা একাই বিএনপিকে বাদ দিয়ে দেশ চালাবে।’

এ নিয়ে কথা হলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান বলেন, ‘জামায়াত যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে ছিল। জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি নেতার করা মন্তব্য সাংগঠনিক বিধিবহির্ভূত।’ 

এদিকে জামায়াত সাম্প্রতিক সময়ে নগরীতে মসজিদে আলোচনা সভা করছে। তা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপি সমর্থকেরা নানাভাবে কটাক্ষ করে আসছেন। জামায়াত মসজিদে রাজনীতি করছে কি না, এমন প্রশ্ন করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
বরিশাল নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, ‘জামায়াতের এখনকার কর্মকাণ্ড ও কথাবার্তা সঠিক নয়। তারা একক রাজনীতি এবং আধিপত্য সৃষ্টি করতে চায়। বিএনপি ছাড়া ভোটে গেলে সামনেও একই অবস্থা হতে পারে জামায়াতের।’ আফরোজা জানান, জামায়াত স্থানীয়ভাবে তাদের কোনো কর্মসূচিতে আসে না। তাঁরাও যান না। জামায়াতের আমির নিজেই বলেছেন, তাঁরা আর বিএনপির সঙ্গে নেই।

অন্যদিকে মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মিজানুর রহমান বলেন, ‘সাধারণ মানুষ চাচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কার। বিএনপি চাচ্ছে ক্ষমতা। আমরা সাধারণ মানুষের পক্ষে থেকে সংস্কার চাচ্ছি। মানুষ বিএনপির লুটপাটের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় দলটির নেতারা এখন উল্টাপাল্টা বকছেন। বিএনপির সঙ্গে আর কোনো দিন জোট হবে না।’ 

যোগাযোগ করা হলে মহানগর জামায়াতের আমির জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা কথার ঝড় তোলেন, তাঁরা তো দলের দায়িত্বশীল নন। বিএনপির স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। একটা সময় কর্মসূচিতে যাওয়া-আসা ছিল। দিন যায়, সময় পরিবর্তন হয়। এখন তাদের কর্মসূচিতে যদি না ডাকে, তাহলে কী করার আছে। তা ছাড়া নিজেরাই তো বক্তব্য দিতে দিতে স্পেস পায় না। হয়তো কেন্দ্রীয় নির্দেশনা নেই, তাই আমাদের কর্মসূচিতে ডাকা হয় না।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত