Ajker Patrika

এক বিচারকে চলছে তিন আদালত

এম আসাদুজ্জামান সাদ, গাজীপুর
এক বিচারকে চলছে তিন আদালত

গাজীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক একাই তিনটি আদালতের বিচারিক কাজ পরিচালনা করছেন। তাঁকে প্রতিদিন গড়ে ৭০-৮০টি মামলার শুনানিসহ অন্যান্য বিচারিক কাজ সম্পাদন করতে হয়। ফলে বিলম্বিত হচ্ছে বিচারকাজ, বাড়ছে মামলাজট। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা। বর্তমানে ওই তিনটি আদালতে ৬ হাজার ৬৬২টি মামলা বিচারাধীন।

আইনজীবীরা বলছেন, বিশাল মামলাজটের মধ্যে একজন বিচারকের পক্ষে বিচারের মতো স্পর্শকাতর কাজ সম্পাদন করা অত্যন্ত কঠিন ও দুঃসাধ্য। একইভাবে বিচারপ্রার্থীদেরও সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

আদালত-সংশ্লিষ্টরা জানান, আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি দুই হাজার মামলার জন্য একজন বিচারক থাকার কথা। সে হিসাবে রাজধানীর বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং হবিগঞ্জ জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তিনজন বিচারক নিয়োজিত রয়েছেন; কিন্তু গাজীপুরে মামলার জট থাকলেও এখানে তা মানা হয়নি। তাই এখানে দ্রুত বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।

গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালসহ অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, একজন বিচারক ও চারজন সহকারীর সমন্বয়ে এই ট্রাইব্যুনাল চলছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম শামীমা আফরোজ একাই তিনটি আদালতে বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন।

এগুলো হলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, শিশু আদালত এবং মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল। এই তিনটি আদালতে বর্তমানে ৬ হাজার ৬৬২টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলার সংখ্যা ৪ হাজার ৮৪৮ টি, শিশু আদালতে মামলার সংখ্যা ১ হাজার ১৮১ টি, মানব পাচার মামলা ৮৫টি এবং কোর্ট পিটিশন (সিপি) মামলার সংখ্যা ৫৪৮ টি। এ ছাড়া জেলার পাঁচটি ও মহানগরী এলাকার আটটি থানায় প্রতিদিনই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নতুন মামলা রেকর্ড হচ্ছে।

গত বুধবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে গিয়ে দেখা যায়, পেশকার মানিক নিজের টেবিলে বসেই দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। এর মধ্যে আইনজীবীরা মামলার কাগজপত্র নিয়ে আসছেন, জমা দিচ্ছেন, বিভিন্ন নথি দেখতে চাচ্ছেন। পাশেই একজন সহকারী দিনের শুরু থেকে শুনানি হওয়া মামলার নথিপত্র সাজিয়ে রাখছেন। তাঁর কাছে কেউ আসছেন মামলার পরবর্তী তারিখ জানতে, কেউ আসছেন কী আদেশ হয়েছে জানতে। কারও ক্ষণিকের ফুরসত নেই।

গাজীপুরে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন। তিনি জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ৮০টি মামলা কার্যতালিকায় থাকে। এর মধ্যেই ১৫-২০টি নতুন কেস ফাইল হয়। অন্য আদালত থেকেও দুই-তিনটা মামলা স্থানান্তর হয়ে আসে। দুই-তিনটা সিপি দাখিল হয়। এ ছাড়া পাঁচ-ছয়টি সাক্ষ্য গ্রহণ হয়। প্রতিদিন ১৫-২০টি জামিন শুনানি হয়ে থাকে।

দৈনিক আট-নয়টি মামলার চার্জ গঠনের শুনানি হয়। তারপর রায় ঘোষণা করা হয়। এসব কাজ একজনকেই করে যেতে হচ্ছে। গাজীপুর আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বারিউল সিদ্দিক বলেন, মামলার জট থাকায় সাত-আট মাস পর মামলার তারিখ পড়ে। ফলে মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময় লাগছে। এভাবে মানুষকে ন্যায়বিচার প্রদান করা খুবই দুঃসাধ্য। এতে বিচারপ্রার্থীদের মধ্যেও হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে, তাঁদের ভোগান্তি এবং দুর্ভোগ বাড়ছে। এই ট্রাইব্যুনালের একাধিক বিচারক থাকলে মামলার চাপ কমবে, বিচারকাজে গতি আসবে।

গাজীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি এ বি এম আফফান বলেন, গাজীপুরে হাজার হাজার মামলা থাকার কারণে এখানে মামলার বিচারকার্য বিলম্বিত হচ্ছে। ফলে বিচারকের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। বিচারপ্রার্থীরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘ইতিমধ্যে গাজীপুর আদালত পরিদর্শনে এসেছিলেন প্রধান বিচারপতি ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব। আমরা তাঁদের এখানে একাধিক বিচারক নিয়োগের জন্য আবেদন জানিয়েছি। আরও দুই বা ততোধিক বিচারক নিয়োগ করা হলে বিচারকের ওপর চাপ কমবে, মামলা নিষ্পত্তিতে গতিশীলতা আসবে এবং ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির পথ সুগম হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত