Ajker Patrika

মাদক মামলায় জব্দ করা গাড়ি নিজেই ব্যবহার করতেন বিচারক

রাসেল মাহমুদ, ঢাকা ও  মো. সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১: ০২
মাদক মামলায় জব্দ করা গাড়ি নিজেই ব্যবহার করতেন বিচারক

মাদকদ্রব্যসহ জব্দ করা একটি ব্যক্তিগত গাড়ি হবিগঞ্জের এক আদালতের বিচারক নিজেই ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন। বর্তমানে মাগুরায় যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ সুলতান উদ্দিন প্রধান হবিগঞ্জ মালখানার ভারপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে থাকাকালে এক আদেশে নিজেই নিজেকে ওই গাড়ি ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিলেন।

এমনকি একপর্যায়ে নিয়মের তোয়াক্কা না করে বিচারক গাড়িটি নিলামে অন্য এক ব্যক্তির নামে বিক্রি করে আবার নিজে ব্যবহার করতে থাকেন। অনিয়মের এসব তথ্য মিলেছে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের এক আদেশ এবং গাড়ির মালিকের অভিযোগ থেকে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর অবশ্য বিচারক সুলতান উদ্দিন প্রধান গাড়িটি ফেরত দেন।

আলামতের গাড়ি বিচারকের নিজের জিম্মায় নিয়ে ব্যবহার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা করতে পারেন না। কেউ যদি নিজে নিজে ব্যবহার করেন, সেটা অবশ্যই অন্যায়।’ জানা যায়, মালিক মো. আমজাদ আলী শেখ গাড়িটি নিজের জিম্মায় নিতে হবিগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুবার আবেদন করলেও তা নামঞ্জুর করা হয়। একপর্যায়ে তিনি হাইকোর্টে মামলা করেন।

এ ছাড়া আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন এবং বিচার বিভাগের সচিব বরাবর অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ে দেওয়া ব্যাখ্যায় ওই বিচারক দাবি করেন, আমজাদ আলী কোনো আদালতেই এমন কোনো কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি, যাতে গাড়ির মালিকানা প্রমাণিত হয়। তাই অভিযোগও সত্য নয়। তবে বিচারক সুলতান উদ্দিন অনুরোধ করেন, তাঁর কোনো পদ্ধতিগত বা অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে বিবেচনা করতে।

আমজাদ আলী শেখের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার অবশ্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যে বিষয়ে বলছেন, তা আমরা জানি না।’

হবিগঞ্জ আদালতের নথি থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ৪ এপ্রিল হবিগঞ্জের মাধবপুরে ১০০ বোতল ফেনসিডিল পাওয়ায় ওই প্রাইভেট কারটি জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় ওই গাড়ির চালক মো. সাইদুর রহমান ও তাঁর সহযোগী মো. আবু সুফিয়ান শেখকে। দুই আসামি জামিন পেলেও গাড়িটি জব্দ রাখা হয়। একপর্যায়ে গাড়ির কোনো বৈধ দাবিদার না থাকা এবং পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকার অজুহাত দেখিয়ে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সুলতান উদ্দিন প্রধান গাড়িটি নিজের জিম্মায় নিয়ে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিলেন।

গাড়িটি ফিরে পেতে মালিক আমজাদ আলী শেখ ২০২০ সালের ১২ আগস্ট এবং ২০ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করলে দুবারই তা নামঞ্জুর করা হয়। পরে মূল মামলাটি বিচারের জন্য যায় হবিগঞ্জ অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে। আমজাদ গাড়িটি জিম্মায় নিতে সেখানেও আবেদন করেন। সেই আবেদন নামঞ্জুর হলে ২০২২ সালে তিনি হাইকোর্টে মামলা করেন। ২০২৩ সালের ২৫ মে সেই মামলার রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে আমজাদকে গাড়ি বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ১৭ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতও এক আদেশে গাড়িটি মালিককে ফেরত দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তারপরও গাড়িটি ফেরত পাননি আমজাদ। 

হবিগঞ্জ জেলা জজকোর্টে আমজাদের পক্ষের আইনজীবী মোজাম্মেল হক রাসেল বলেন, হাইকোর্ট আদেশ দেওয়ার পরও মালিক গাড়িটি ফিরে পাননি। আদালতকে জানানোর পর আদালত গাড়িটি ফেরত বা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দেন। তারপরও গাড়িটি পাওয়া যায়নি। 

হবিগঞ্জ অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. ইয়াছির আরাফাত গত বছরের ২ অক্টোবর এক আদেশে উল্লেখ করেন, মালখানার ভারপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সুলতান উদ্দিন প্রধান দায়রা আদালতে বিচারাধীন মামলায় জব্দ করা প্রাইভেট কার দায়রা আদালতের আদেশ বা অনুমতি ছাড়া সচেতনভাবে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। এককভাবে নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। ওই নিলামের বিষয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। মনোনীত কোনো কমিটির মাধ্যমেও নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়নি।

সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সুলতান উদ্দিনের এমন গুরুতর অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতামূলক কার্যক্রমের কারণে হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী গাড়িটি মালিক মো. আমজাদ আলী শেখের জিম্মায় দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার জন্য গাড়িটির জিম্মাসংক্রান্ত প্রতিবেদনসহ হবিগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও দায়রা জজ আদালতের সব আদেশের অনুলিপি হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের (বিচার) কাছে পাঠানোর আদেশ দেন অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত। 

এদিকে হাইকোর্ট ও অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের নির্দেশের পরও গাড়ি ফিরে না পেয়ে আমজাদ আলী ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর আইন ও বিচার বিভাগের সচিবের কাছে অভিযোগ করেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, হাইকোর্ট ২০২৩ সালের ২৫ মে গাড়িটি তাঁর জিম্মায় দিতে রায় দেন। কিন্তু গাড়িটি তিনি ফিরে পাননি। সুলতান উদ্দিন প্রধান গাড়িটি নিলামে বিক্রি করে দেন। গাড়িটি নিলামে কেনেন রিপন নামের এক ব্যক্তি। অথচ ২০২১ সালের ১৪ জুন থেকে গাড়িটি ব্যবহার করেছেন বিচারক নিজে। 

গাড়ির মালিক আমজাদ আলী শেখ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিচারক সুলতান উদ্দিন প্রধান গত ২০ জানুয়ারি গাজীপুরের কাপাসিয়ায় কাগজপত্র করে গাড়িটি আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।’

বিচারাধীন মামলায় জব্দ থাকা আলামত উপযুক্ত আদালতের অনুমতি ছাড়া নিলাম এবং সেই গাড়ি বিচারকের ব্যবহার করার বিষয়ে হবিগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এপিপি ক্ষিতীশ চন্দ্র গোপ বলেন, আইনগতভাবে এটি পারেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের বিপক্ষে সেমির আগেই ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত