আশ্রয়ণের ১৫ ঘর ফাঁকা, বঞ্চিত ভূমিহীনেরা

অরূপ রায়, সাভার
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২২, ১৫: ১৮
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২২, ১৫: ৫৮

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের খলিশা ডহরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশেই সুজাদ আলীর বাড়ি। নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। এরপরও তিনি ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে কোনো ঘর পাননি।

শুধু সুজাব আলী নন, খলিশা ডহরা গ্রামে আরও অনেক ভূমিহীন পরিবার রয়েছে, যাদের কেউ ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পায়নি, অথচ বরাদ্দ পেয়েও অনেকে সেখানে থাকেন না।

সাটুরিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ধলেশ্বরী নদীর পাশে খলিশা ডহরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের অবস্থান। ২০২০-২১ অর্থবছরে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রকল্পটিতে ১৭টি ঘর নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের কয়েক মাসের মধ্যেই জমিসহ ১৭টি ঘর উপকারভোগীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় ২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিটি ঘরে দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি শৌচাগার নির্মাণ করা হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে মাত্র দুটি ঘরে বাসিন্দা পাওয়া গেলেও বাকি ১৫টি ঘরই তালাবদ্ধ দেখা যায়। বাসিন্দা না থাকায় জঙ্গল ঘিরে ধরেছে ফাঁকা ঘরগুলো। বারান্দায় রয়েছে আবর্জনার স্তূপ। কয়েকটি ঘরে ফাটলও ধরেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করেই ঘরের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে প্রকল্প এলাকার আশপাশে ভূমিহীন ও দরিদ্র পরিবার থাকলেও তাঁরা বরাদ্দ পাননি। ঘর পেয়েছেন প্রকল্প এলাকা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বালিয়াটি ইউনিয়নের বালিয়াটি ও হাজিপুর গ্রামের বাসিন্দারা।

তাঁরা জানান, প্রকল্পের ২ নম্বর ঘরের বাসিন্দা পাপন খান একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তাঁর বাড়ি হাজিপুর গ্রামে। তাঁকে গাড়িচালক দেখিয়ে স্ত্রী সুমা খানম ও তাঁর নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে পাপন খান জানান, এক সময় তাঁর বাড়িঘর সবই ছিল; কিন্তু ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তাঁকে ঘর ও বাড়ি বিক্রি করতে হয়েছে। এ কারণে নিরুপায় হয়ে তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে একটি ঘরের বরাদ্দ নিয়েছেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশেই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে খাসজমিতে বসবাস করেন ভূমিহীন আব্দুল বারেক। তাঁকে ঘর দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও তিনি ঘর পাননি।

আব্দুল বারেকের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, তাঁদের বাড়ি নাটোর সদর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে। দারিদ্র্যের কারণে বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে ৩৫ বছর আগে তাঁরা খলিশা ডহরা এসে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এর কয়েক বছর পর খাসজমিতে ঘর তুলে বসবাস করতে শুরু করেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হলে তাঁকে ঘর দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়; কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁরা ঘর পাননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপকারভোগী বলেন, বরাদ্দ পাওয়ার পর জমিসহ ঘর বিক্রি করার পরিকল্পনা করে অনেকেই টাকার বিনিময়ে ঘরের বরাদ্দ নিয়েছেন; কিন্তু বরাদ্দ পাওয়ার পর তা বিক্রি করতে না পেরে জমিসহ ঘর ফেলে রেখেছেন।

স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ভূমিহীন বাছাই ও জমি বরাদ্দে ত্রুটির কারণে ঘরগুলো ফাঁকা পড়ে আছে।

জানতে চাইলে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আরা বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। আগের বরাদ্দ বাতিল করে স্থানীয় ভূমিহীনদের মধ্যে ঘরগুলো বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত