Ajker Patrika

ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে নিতে তৎপর ব্যবসায়ীরা

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২২, ০৯: ১১
ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে নিতে তৎপর ব্যবসায়ীরা

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কথা বলে বেশি দরে ভোজ্যতেল আমদানির জন্য সরকারের দিকনির্দেশনা চেয়েছেন মিলমালিক ও আমদানিকারকেরা। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছে। মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেক প্রতিষ্ঠান রমজান মাসেই বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এখন বেশি দামে তেল আমদানির কথা বলে দাম বাড়িয়ে নেওয়ার তৎপরতা শুরু হয়েছে। সেটা কার্যকর হলে দেখা যাবে, ঈদের পর তেলের দাম আরেক দফা বাড়বে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অধিশাখা-২) এ কে এম আলী আহাদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর জন্য দেশের সব পরিশোধনকারী মিলের মালিকেরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।

আমদানি করা তেলের দাম কত হবে, তা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ শুরু করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। ঈদের পর এ ব্যাপারে চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, দেশের বৃহত্তম শিল্পপ্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের পক্ষ থেকে সয়াবিন তেল ও পাম তেল আমদানি জন্য দিকনির্দেশনা চেয়ে ৩ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল। চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে বাজারে সরকারনির্ধারিত খুচরা দামে যে তেল বিক্রি হচ্ছে, তা প্রতি টন সয়াবিন তেল ১ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলারে এবং পাম তেল ১ হাজার ২৯৫ মার্কিন ডলারে আমদানি করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার প্রবণতার মধ্যে গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেঘনা এডিবল অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড প্রতি টন পাম তেল ১ হাজার ৬০০ ডলারে আমদানি করেছে, যা সরকারনির্ধারিত দামে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির কারণ হবে। ওই তারিখে প্রতি টন ক্রুড সয়াবিন তেল আন্তর্জাতিক বাজার ১ হাজার ৭৮০ ডলারে এবং পাম তেল ১ হাজার ৭২০ ডলারে লেনদেন হচ্ছে জানিয়ে তিনি ‘আশু মূল্য সমন্বয়ের’ ওপর জোর দেন।

জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপের প্রধান বিক্রয় কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন নিশ্চিত করেছেন, এ বিষয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

জানা গেছে, সয়াবিন তেল আমদানিতে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সিটি গ্রুপ ঋণপত্র খুলেছে টনপ্রতি ১ হাজার ৭৪০ থেকে ১ হাজার ৮৭০ ডলারে, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড ১ হাজার ৮৮২ ডলারে, বসুন্ধরা ১ হাজার ৮৮৬ ডলারে এবং টিকে গ্রুপ ১ হাজার ৮৭৬ ডলারে। পাম তেল আনতে এস আলম গ্রুপ ১ হাজার ৬৮২ ডলারে ঋণপত্র খুলেছে।

মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, সিটি ও মেঘনা গ্রুপ মন্ত্রণালয়ে পৃথক আবেদনে বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানালেও অন্যরা তাদের অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে অবগত করেছে।

সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে বাজারে যে তেল রয়েছে তা ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৪৬০ ডলারে আমদানি করা হয়েছিল। আর নতুন করে ঋণপত্র খোলা হয়েছে ১ হাজার ৭৪০ থেকে ১ হাজার ৮৭৬ ডলারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সব ধরনের তথ্য রয়েছে। ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে মন্ত্রণালয় ও মিলাররা বৈঠক করছেন। দাম লিটারপ্রতি কত পড়বে তা ঈদের পর মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। তবে দাম বাড়বে তা তিনি নিশ্চিত করেছেন।

বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের বিপণন ও হিসাব শাখার কর্মকর্তা দিদার মো. দবিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে বাড়ছে, সেটি সমন্বয় করে দেশে দাম বাড়ানো না হলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অপর দিকে আমদানি অব্যাহত না থাকলে ভবিষ্যতে সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দাম সমন্বয় করবে, এটাই আশাবাদ তাঁদের।

ভোজ্যতেল আমদানিতে কেন সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হচ্ছে, জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আলী আহাদ খান বলেন, ১৯৫৬ সালে প্রণীত এসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্ট অনুযায়ী বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৭টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিতে পারবে। সে আইন অনুযায়ী মিলমালিকদের ভোজ্যতেলের দাম বেঁধে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, এপ্রিল মাসের শুরুতে দেশে রাজধানীর বাজারে প্রতিমণ (৩৭ কেজি ৩২০ গ্রাম) খোলা সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৫ হাজার ৭০০ টাকা। এ হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ১৫২ টাকা ৭৩ পয়সা। গতকাল বুধবার তা বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ১৫০ টাকায়। এ হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ১৯১ টাকা ৫৯ পয়সা। অর্থাৎ চার সপ্তাহে মণপ্রতি দাম বেড়েছে ১ হাজার ৪৫০ টাকা এবং কেজিতে দাম বেড়েছে ৩৮ টাকা ৮৫ পয়সা। পাম সয়াবিনের পাশাপাশি বাজারে সরিষার তেলের দামও বেড়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, চলতি মাসের ১ তারিখে রাজধানীর বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছিল ১৪৫-১৫৪ টাকা। গতকাল ২৭ এপ্রিল তা বিক্রি হয়েছে ১৭০-১৭২ টাকায়। অর্থাৎ চার সপ্তাহে লিটারপ্রতি দাম বেড়েছে ১৮-২৫ টাকা। আর ১ এপ্রিল প্রতি লিটার পাম তেলের দাম ছিল ১৩১-১৪৩ টাকা। গতকাল বুধবার তা বিক্রি হয়েছে ১৫৬-১৬২ টাকা। অর্থাৎ চার সপ্তাহের ব্যবধানে লিটারপ্রতি দাম বেড়েছে ১৯-২৫ টাকা। আর সরকারনির্ধারিত দাম প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৩৬ টাকা এবং পাম তেল ১৩০ টাকা।

আন্তর্জাতিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইনডেক্স মুডি ডটকম সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ১ হাজার ৪৬৯ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে দাম বেড়ে হয় ১ হাজার ৫৯৫ ডলার এবং মার্চে আরও দাম বেড়ে বিক্রি হয় ১ হাজার ৯৫৬ ডলার। অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত টনপ্রতি দাম বেড়েছে ৪৮৭ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে গত জানুয়ারিতে প্রতি টন পাম তেলের দাম ছিল ১ হাজার ৩৪৪ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে বিক্রি হয় ১ হাজার ৫২২ ডলার এবং মার্চে আরও বেড়ে হয় ১ হাজার ৭৭৬ ডলার। অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বেড়েছে ৪৩২ ডলার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে ২০ লাখ টন। এর মধ্যে অধিকাংশই আমদানি করে চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে।

ঈদের পরপরই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার ইঙ্গিত প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘সরকার ভোক্তার স্বার্থ সাধ্যমতো রক্ষা করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান হওয়া ইরানি নারী এখন পানামার জঙ্গলে

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত