Ajker Patrika

কমার্শিয়াল সিনেমায় আর কাজ করার ইচ্ছা নেই আমার

শিহাব আহমেদ
কমার্শিয়াল সিনেমায় আর কাজ করার ইচ্ছা নেই আমার

মঞ্চ, টিভি, সিনেমা—সব মাধ্যমের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ডলি জহুর। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী বরেণ্য এ অভিনেত্রীর আজ জন্মদিন। ৬৮ পেরিয়ে ৬৯-এ পা দিলেন তিনি। এই বিশেষ দিনে ডলি জহুরের সঙ্গে সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন শিহাব আহমেদ।

জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা।
বুড়াকালে আবার কিসের জন্মদিন (হাসতে হাসতে)। এখন তো আল্লাহর নাম নেওয়ার সময়। যদিও জন্মদিন পালন এখন কালচার হয়ে গেছে। তাই সবাই করে। তবে আমি এটা সাপোর্ট করি না। 

বিশেষ এই দিনে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না? 
কোনো পরিকল্পনা নেই। আমার নাতিরও কাল (আজ) জন্মদিন। ওর তিন বছর হবে। নাতি আর আমার একই দিনে জন্মদিন হওয়ায় দিনটিকে স্পেশাল মনে হয়। আমি মরে গেলেও ওর জন্মদিনে অন্তত একবার হলেও বলবে আজ আমার দাদিরও জন্মদিন। এ ছাড়া বিশেষ বলতে, এই দিনে সবাই শুভেচ্ছা জানায়, খোঁজখবর নেয়। চ্যানেল আইয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যেতে হয়।
 
কৈশোর থেকে জীবনের বেশির ভাগ সময়জুড়েই অভিনয়ে যুক্ত। ফিরে তাকালে কী মনে হয়? 
মনে হয়, মনে রাখার মতো কিছুই করতে পারলাম না। শুধু কাজই করে গেলাম। বাহবা পাওয়ার মতো কোনো কাজ করতে পারিনি এখনো।

নিজেকে তৃপ্ত করার আকাঙ্ক্ষা এখনো আছে?
শিল্পীদের অভিনয়ের ক্ষুধা কখনোই মেটে না। আমার বেলায়ও ব্যাপারটা সে রকম। 

এখন আর অভিনয়ে আপনাকে তেমন একটা দেখা যায় না। কেন? 
বেছে বেছে কাজ করছি। সব চরিত্রে কাজ করতে ভালো লাগে না। আগে কাজ না করলে ভালো লাগত না। শুটিং স্পটকেই নিজের ঘর মনে হতো। এখন হইহুল্লোড় ভালো লাগে না, চুপচাপ থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। যখন ঘরে থাকি, সবার কথা মনে পড়ে। ফোন দিয়ে খোঁজ নিই। নিয়মিত কাজ না করলেও সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি।

এ বছর প্রথমবার পরিচালনা করেছেন। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা?
কাজটি ঠিকভাবে করতে পারিনি। আমাকে দায়িত্ব দিয়ে বলা হলো এক সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে। তাড়াহুড়ো করে কাজটি করতে গিয়ে ঠিকভাবে মনোযোগ দিতে পারিনি। কাজ শেষে মনে হয়েছে, কিছু্ই হয়নি। আমি একদমই সন্তুষ্ট হতে পারিনি। 

সামনে কি আবারও নির্দেশনা দেবেন?
বয়স হয়েছে। শরীর-স্বাস্থ্য, মনমানসিকতার ওপর নির্ভর করে। এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।
 
আপনার একমাত্র ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। কাজও কম করছেন। সময় কীভাবে কাটে আপনার?
নামাজ পড়ি, বিভিন্ন আমল করি, আল্লাহর অশেষ রহমতে দুইবার হজ করেছি। ইউটিউবে নাটক দেখি। এভাবেই সময় কেটে যায়। আগে নানা রকম খাবার খেতে ইচ্ছা করত, এখন করে না। মাঝে মাঝে ভাবি, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু থেকে মন সরে যায় নাকি! 

সিনেমায় দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। দীর্ঘদিন সিনেমায়ও কাজ করছেন না।
সিনেমার কাজ আরও আগেই ছেড়ে দিয়েছি। বিশেষ করে কমার্শিয়াল সিনেমায় কাজ করার ইচ্ছা একেবারেই নেই। অনেকেই বলে কাজ করতে। এমনও বলে, চরিত্রটি আপনি ছাড়া আর কেউ ঠিকঠাক করতে পারবে না। আমি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি। কমার্শিয়াল সিনেমায় কাজ করার ইচ্ছাই আমার নেই। 

আবারও প্রেক্ষাগৃহে দর্শক ফিরছে। বিশেষ করে গত দুই ঈদে বাংলা সিনেমায় দর্শকের জোয়ার দেখা যাচ্ছে। কেমন লাগছে আপনার? 
দেরিতে হলেও দর্শক আবার হলে ফিরছে। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও সিনেমা নিয়ে রমরমা অবস্থা তৈরি হয়েছে। সিনেমা নিয়ে মানুষের এমন আগ্রহ দেখে ভালো লাগছে। এটা বজায় থাকলে আমাদের সিনেমা আবারও শক্ত অবস্থান ফিরে পাবে। আমি নিজেও ‘প্রহেলিকা’ সিনেমাটি দেখেছি। পরিকল্পনা আছে ‘সুড়ঙ্গ’ ও ‘প্রিয়তমা’ দেখার। 

আপনি এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ডে আছেন। কী মনে হচ্ছে সিনেমাগুলো দেখে? 
ভালো লাগছে না। এখন পর্যন্ত যে সিনেমাগুলো দেখা হয়েছে তার বেশির ভাগই আমাকে হতাশ করেছে। শুধু আমাকে নয়, ১৩ জনের পুরো টিম হতাশ সিনেমা দেখে। সিনেমার মতো সিনেমা হচ্ছে না। আমাদের সময় সিনেমায় ভালো গল্প থাকত। এই সিনেমাগুলোতে গল্প খুঁজে পাচ্ছি না। বিচার করা কঠিন হবে আমাদের জন্য।
 
এখন যাঁরা সিনেমা নির্মাণ করছেন তাঁদের উদ্দেশে কিছু বলার আছে? 
না শিখে, না জেনে, না বুঝে, যথেষ্ট হোমওয়ার্ক না করে কাজে হাত দেওয়া ঠিক না। ইচ্ছা হলো, প্রযোজক পেলাম আর একটা গল্প, কিছু শিল্পী নিয়ে বসে গেলাম—এভাবে সিনেমা হয় না। এ কারণেই সিনেমাগুলো সিনেমা হয়ে উঠতে পারছে না। দিনশেষে অনেক ফাঁক-ফোকর থেকে যাচ্ছে। 

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দর্শকের অনেক ভালোবাসা পেয়েছেন। শিল্পীরাও আপনাকে ভালোবেসে ‘ডলি মা’ বলে ডাকেন। সবার এত ভালোবাসা কতটা উপভোগ করেন? 
সবার ভালোবাসাটা আছে বলেই তো বিদেশে আমার ছেলে আমাকে ধরে রাখতে পারে না। এখানে একা পড়ে আছি সবার ভালোবাসার টানে। এই যে সবার সঙ্গে দেখা হচ্ছে, খোঁজখবর নিচ্ছে, মা বলে ডাকছে। আমি যখন করোনায় আক্রান্ত হলাম, সবাই দৌড়ে চলে এল বাসায়, আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। একটুও ভয় পেল না কেউ। অনেকেই আমার সেবায় হাসপাতালে থেকে গেল। এই ভালোবাসা বলে বোঝানো যাবে না। ভালোবাসা ব্যাখ্যা করা যায় না, অনুভব করা যায়। আমি এটা সব সময় অনুভব করি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কক্সবাজার বিমান ঘাঁটিতে দুর্বৃত্তদের হামলা, সংঘর্ষে নিহত ১

শাশুড়ির মৃত্যুর খবর শুনে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মা-ছেলের মৃত্যু

নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ও প্রতীক নিয়ে কী প্রস্তাব এল, জানালেন আখতার

আবরার হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জেমির পলায়নের বিষয়ে যা জানাল কারা অধিদপ্তর

রামদা হাতে যুবলীগ নেতার ভিডিও ভাইরাল, পরে গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত