গাছ পাচারের জন্য পাহাড় কেটে রাস্তা

বদরুল ইসলাম মাসুদ, বান্দরবান
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭: ০০
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ০৯

বান্দরবানে অনুমতি ছাড়াই পাহাড় ও গাছ কাটা চলছেই। সেই সঙ্গে ঝিরি-ছড়া থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ একটি চক্র বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এ কাজ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে সদর উপজেলার টংকাবতী ইউনিয়নের রঞ্জুপাড়া থেকে বলিপাড়া পর্যন্ত অবৈধভাবে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করেছেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও টংকাবতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক আবদুর রহিম কোম্পানী। বিষয়টি সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম-বিষয়কমন্ত্রী ও বান্দরবানের সাংসদ বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের নজরে এনেছেন স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।

গতকাল বুধবার বান্দরবান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) হক মাহাবুব মোর্শেদ বলছেন, দুই বছর ধরে টংকাবতী রেঞ্জে গাছ কাটার কোনো অনুমতি দেয়নি বন বিভাগ। তবে এই সময়ের মধ্যে ৭০ টুকরা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ জব্দ করেছেন তাঁরা।

স্থানীয় মৌজাপ্রধান হেডম্যান পাইরেং ম্রো অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাগানের গাছ কাটতে বন বিভাগ থেকে অনুমতি প্রয়োজন। এ কাজে মৌজা হেডম্যানের একটি লিখিত প্রতিবেদন দরকার হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর তিনি গাছ কাটার এমন প্রতিবেদন না দিলেও প্রতিনিয়ত গাছ কেটে অন্যত্র নেওয়া হচ্ছে।

টংকাবতী রেঞ্জের অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন সুয়ালক বন চেকস্টেশন কর্মকর্তা মো. মঈনুদ্দিন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অবৈধভাবে গাছ কেটে পাচারের হিড়িক পড়ে গেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গাছ ব্যবসায়ী এ তথ্য স্বীকার করে জানিয়েছেন, বন বিভাগকে ম্যানেজ করা ছাড়া এক ইঞ্চি গাছও কাটা সম্ভব নয়। তাঁরা স্বীকার করেন, অনুমতি ছাড়াই পাহাড়ের বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন বাগান থেকে তাঁরা গাছ কেটে অন্য স্থানে নিয়ে যান।

স্থানীয়রা জানান, টংকাবতী এলাকা থেকে গাছ কেটে বহনের কাজে অন্তত চারটি হাতি ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে দুটি আবদুর রহিম কোম্পানী ও দুটি মহরম আলী নামের অপর ব্যবসায়ীর। এ নিয়ে গত নভেম্বরে আজকের পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর টংকাবতী এলাকায় তদন্তে যায় বন বিভাগ। তবে তা ছিল ‘লোকদেখানো’।

এদিকে খবর প্রকাশের পর আবদুর রহিমের দুটি হাতি সরিয়ে নিলেও মহরম আলীর দুটি হাতি টংকাবতী, রঞ্জুপাড়াসহ আশপাশের এলাকা থেকে গাছ বহনের কাজে রয়েছে।

জানতে চাইলে টংকাবতী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মঈনুদ্দিন জানান, গত দুই বছর তাঁর এলাকায় কোনো গাছ কাটার অনুমতি দেয়নি। তবে কিছু ব্যবসায়ী গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি স্বীকার করেন। সম্প্রতি ওই এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে কড়ই, গুটগুটি, গামারি গাছের ৭০ টুকরা জব্দ করা হয়েছে।

টংকাবতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাংম্রয় ম্রো প্রদীপ বলেন, গত বছর টংকাবতীর রঞ্জুপাড়া থেকে বলিপাড়া পর্যন্ত এক্সকাভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে ওই রাস্তা তৈরি করিয়েছেন আবদুর রহিম কোম্পানী। ওই সড়ক দিয়ে গাছ ও ঝিরির পাথর গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়।

সম্প্রতি টংকাবতী ইউনিয়ন ঘুরে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি, নির্বিচারে ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলন ও অবৈধভাবে গাছ কাটার চিত্র দেখতে পান সাংবাদিকেরা। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা রহিম কোম্পানী, ব্যক্তিমালিকানাধীন বাগান থেকে গাছ কিনেছেন দাবি করলেও সাংবাদিকদের কাছে কোনো অনুমতিপত্র দেখাতে পারেননি। এ ছাড়া তিনি কোনো পাথর উত্তোলনও করছেন না বলে দাবি করেন।

রাস্তা তৈরির বিষয়ে আবদুল রহিম কোম্পানী বলেন, খালের ওপর বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণের ফলে ওই এলাকার মানুষের চলাচলের সুবিধা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত