চা-দোকান যেন বিকল্প পাসপোর্ট অফিস

রুদ্র রুহান, বরগুনা
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৪, ০৯: ৫৯

সম্প্রতি পরিচয় গোপন করে বরগুনা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের পাশের একটি চায়ের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনকে পরামর্শ দিচ্ছেন চা-দোকানি বিজয়। তিনি বলছিলেন, ‘মাধ্যম ছাড়া দ্রুত পাসপোর্ট করতে পারবেন না। আমার লোক আছে, অফিস খরচ দিলে আমি আপনার কাজ করে দিতে পারব। পুলিশ ভেরিফিকেশনও আমরা করে দেব। আপনি শুধু ব্যাংকের টাকা এবং কাগজপত্র জমা দেবেন। এরপর একদিন অফিসে এসে ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিশ দিলেই হবে। বাকি সব কাজ আমাদের। আপনি শুধু এসে পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন।’ 

পাশের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিজয় পাসপোর্ট অফিসের দালাল চক্রের সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন। 

পরে খরচ নিয়ে জানতে চাইলে বিজয় বলেন, ‘আবেদন করতে যেখানে যে খরচ তা আপনার হাতেই পরিশোধ করবেন। শুধু অফিস খরচের জন্য দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আমার কাছে জমা দেবেন।’ 

ওই দোকানে থাকতে থাকতেই পাসপোর্টের জন্য ইতিমধ্যে আবেদন করা বরগুনার পাথরঘাটা থেকে তানিমুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি আসেন। তাঁর বাবার নামে ভুল হওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন তিনি। দালাল চক্রের সদস্য বিজয়কে তাঁর সমস্যার কথা জানান। হাতে থাকা সব কাগজপত্র দেখে সময় একটু বেশি লাগলেও সমাধান করে দিতে পারবেন বলে জানান বিজয়। তবে এর জন্য ১১ হাজার টাকা দাবি করেন তানিমুলের কাছে। 

দোকান থেকে বের হওয়ার পর তানিমুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি নিয়ম মেনেই কাজ করতে চাই। দালালের মাধ্যমে কাজ করলে দ্রুত সমাধান হলেও আমি দালালে বিশ্বাস করি না।’   

বরগুনা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে প্রায় সব দোকানেই যেন ‘বিকল্প অফিস’ বসান দালালরা। পাসপোর্ট করতে এসে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কেউ অফিস থেকে বের হলেই তাঁরা এগিয়ে যান। 

পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা থেকে শুরু করে নানা কাজে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ বরগুনা পাসপোর্ট অফিসে আসেন।  

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মুনতাকীম মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘বরগুনায় আমি নতুন যোগদান করেছি। ইতিমধ্যে জনসাধারণের ভোগান্তি কমাতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। বিশেষ করে অফিসে কর্মরতদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ 

সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসের দালালদের দৌরাত্ম্য রোধে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এরপরও যারা এ কাজে যুক্ত রয়েছে, তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত