তিন আসনের দুটিতেই নেই ভোটের আমেজ

মারুফ কিবরিয়া ও এমাম হোসেন এমাম, ফেনী থেকে
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯: ৫৪
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০: ৩৮

ফেনীর ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম—এই তিনটি উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে ফেনী-১ আসন। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে এই আসনে নির্বাচিত হন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নেই। তবে ভোটে না থেকেও তিনি আলোচনায় আছেন। এই আসনে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম অনায়াসে জিতবেন বলে অনেক ভোটার মনে করেন। ফলে ভোটের উত্তাপ তেমন নেই।

ফুলগাজীর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘আমি রাজনীতিতে জড়িত নই। তবে জন্ম থেকে দেখে আসছি, এই আসনের মানুষ বেগম জিয়াকে ছাড়া কিছু বোঝে না। এবারের নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো আমেজ নেই। মাঠে শুধু নৌকার প্রার্থীর প্রচার দেখছি। সবাই জানে, আলাউদ্দিন নাসিম বিজয়ী হবেন।’ ব্যবসায়ী আরিফুল হক বলেন, মানুষ ভোট নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। তবে এই এলাকার মানুষের কাছে খালেদা জিয়ার জন্য আলাদা আবেগ আছে।

ফুলগাজীর আরেক শিক্ষক বলেন, একসময় খালেদা জিয়ার বাড়ির আশপাশে নৌকার নামও কেউ নিত না। এখন সেখানেই উঠান বৈঠক করছে আওয়ামী লীগ।

গত মঙ্গলবার শ্রীপুর গ্রামে খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, আলাউদ্দিন নাসিমের নির্বাচনী উঠান বৈঠক করছেন তাঁর স্ত্রী ডা. জাহানারা আরজু। পুকুরঘাটে তখন কয়েকজন নারী বসে গল্প করছিলেন। তাঁদের একজন শারমিন বলেন, ‘আমাদের সাথে কথা বলে কী হবে! আমরা তো নির্বাচনেই নেই।’

বিকেলে উঠান বৈঠক শেষ করেন নাসিমের স্ত্রী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেখানেই যাচ্ছি, সুষ্ঠু পরিবেশ  দেখতে পাই। আশা করছি, সুন্দর একটি নির্বাচন হবে।’ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. ইউসুফ বলেন, ‘ভোটের মাঠে তাঁরাই আছেন। তবে কোনো সাড়া নেই। টাকা বিলিয়ে লোক জড়ো করেন। মানুষ এই ভোট প্রত্যাখ্যান করেছে।’

ফেনী-২ (সদর) আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। জাতীয় পার্টির প্রার্থীসহ আটজন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও প্রচারে শুধু নিজাম হাজারী। ফলে ভোটের আমেজ নেই।

ফেনী শহরে ষাটোর্ধ্ব চা-দোকানি জয়নাল মিয়া জানান, ভোট নিয়ে আগের মতো জৌলুশ নাই। চা-দোকানে সে রকম ভোটের আড্ডাও হয় না।

সদর উপজেলা শর্শদি ইউনিয়নের সেরাজুল হক বলেন, দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত শুধু নৌকার প্রচারই হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দলীয় প্রার্থীর মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর মামুনুর রশিদ মিলন বলেন, কোনো দল যদি প্রচারে অংশ না নেয়, সে ক্ষেত্রে নৌকার প্রার্থীর কিছু করার নেই।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম জানান, নিয়ম মেনে তিনটি মাইক বিভিন্ন স্থানে বাজানো হচ্ছে। তবে এখনো পোস্টার ছাপানো হয়নি।

তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আ ই ম আমজাদ হোসেন ভূইয়া বলেন, ‘আমি একা মানুষ। তাই প্রচার করতে পারছি না। তবে আমার ভোটার আছে।’

তবে ফেনী-৩ (দাগনভূঞার-সোনাগাজী) আসনে ভোটের উত্তাপ বাড়ছে দিন দিন। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নেই। জাতীয় পার্টির লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী রহিম উল্লাহসহ ১০ জন প্রার্থী আছেন। মাসুদ উদ্দিন ও রহিম উল্লাহর মধ্যে জোর লড়াই হবে বলে এলাকার অনেকের ধারণা। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী সম্প্রতি দুই উপজেলায় যৌথ মতবিনিময় সভা করে লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর থেকে মাসুদ উদ্দিনের পক্ষে নেমেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রশীদ মিলন বলেন, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বিগত পাঁচ বছরে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত