আ.লীগের দ্বন্দ্ব গড়াল কেন্দ্রে

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৪: ২৩
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ৪৭

অন্তত চার দশক ধরে চলছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব। তবে গত দু বছরে বিবদমান দুটি পক্ষকে মুখোমুখি অবস্থানে দেখা যায়নি। সেই পুরোনো দ্বন্দ্ব আবারও মাথাচাড়া দিয়েছে ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি গঠন নিয়ে। তৃণমূলে দুই পক্ষ আধিপত্য ধরে রাখতে এতটাই মরিয়া, কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। নেতাদের সেই দ্বন্দ্ব এখন কেন্দ্রীয় নেতাদের টেবিলে। ‘মীমাংসা’র জন্য আজ রোববার দুপক্ষের নেতাদের ঢাকায় ডাকা হয়েছে।

সাড়ে ১০টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তাঁদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের বসার কথা। সেই সভায় যোগ দিতে গতকাল শনিবার ঢাকায় পৌঁছেছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের নেতারা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহসভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের সভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’ তবে এই সভা দুপক্ষের মধ্যে বিবদমান বিষয়গুলোর মীমাংসার জন্য কী না তা বলতে চাননি এই নেতা।

আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শতাব্দীর আশির দশকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে দুটি ধারা দেখা দেয়। একভাগের নেতৃত্বে ছিলেন প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। অন্য পক্ষে ছিলেন আরেক প্রয়াত নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তবে ১৯৯৩ সালে শিল্পপতি হুমায়ুন জহির হত্যা মামলার আসামি হয়ে দেশ ছাড়েন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। তখন তাঁর পক্ষের দায়িত্ব পড়ে বাবুর ঘনিষ্ঠ আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাঁধে। এরপর থেকে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন-নাছির পক্ষের বিবাদের শুরু। ২০১৩ সালে আ জ ম নাছির নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর সেই দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে সামনে আনেন অনুসারীরা।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের বরফ কিছুটা গলেছিল। তবে গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম নগরের ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের ইউনিট সম্মেলন শুরু হলে পুরোনো দ্বন্দ্ব আবার মাথাচাড়া দেয়। শুরুর দিনেই দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডের ‘ক’ ইউনিটের সম্মেলন বিক্ষোভের মুখে স্থগিত করা হয়। এরপর উত্তর কাট্টলী, চান্দগাঁও ওয়ার্ডের ইউনিট কমিটি গঠন নিয়ে নেতাদের অবরুদ্ধ করা ও পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ হয়।

মহিউদ্দিন চৌধুরী অনুসারীদের পক্ষে আছেন সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, যুগ্ম সম্পাদক ও সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ। তাঁরা ওয়ার্ড পর্যায়ে নানা ‘অনিয়মের’ বিষয়ে ২২ ডিসেম্বর ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে নালিশ করেন। পরদিন ২৩ ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সম্মেলন বন্ধের নির্দেশ আসে। ২৬ ডিসেম্বর ওয়ার্ড সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত হয়। এই ‘সাফল্যের’ পর মহিউদ্দিন চৌধুরী পক্ষের নেতারা গত ২৮ ডিসেম্বর নগরের ফিরিঙ্গিবাজারে দোভাষের বাসায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার নওফেল ও সাংসদ এম এ লতিফসহ অন্যরা।

অপর দিকে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন নেতা আছেন নাছিরের পক্ষে। চার নেতাকে নিয়ে গতকাল বিকেলে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। তবে তিনি আজকের সভাকে ‘মীমাংসা সভা’ হিসেবে বলতে নারাজ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মীমাংসা-অমীমাংসার বিষয় নয়। আমরা তো সব সময় একসঙ্গে কর্মসূচি পালন করে আসছি। বাজারে যেটা চাউর হয়েছে সেগুলো ঠিক নয়।’ চলমান সম্মেলনগুলো কীভাবে সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়েই সভায় আলোচনা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এই সভা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি মহিউদ্দিন চৌধুরী পক্ষের খোরশেদ আলম সুজন। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ‘সভায় যোগ দিতে আমরা ঢাকায় এসে পৌঁছেছি। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে আমরা সব বিষয়ে কথা বলব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত