বদলাচ্ছে হাওরের অর্থনীতির চেহারা

আশিস রহমান, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ)
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ৪৫
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ০০

এক ফসলের ওপর নির্ভরশীল হাওরাঞ্চলের মানুষের ছিল না বিকল্প কর্মস্থান। ফলে দারিদ্র্য ও বেকারত্বের কারণে অর্থনৈতিক দুরবস্থা লেগেই থাকত। তবে হাওর পাড়ের অর্থনৈতিক এই বেহাল দৃশ্যপট এখন পাল্টেছে। বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করে দোয়ারাবাজার উপজেলার প্রত্যন্ত হাওরপাড়ের এলাকার যুবকেরা এখন স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

মাছ উৎপাদন, আহরণ, পরিবহন এবং বাজারজাতকরণ কাজে বেকার যুবকদের জন্য সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানের। এর পাশাপাশি মিটছে আমিষের চাহিদাও।

উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের যুবক সোহেল আহমদ কর্মসংস্থানের জন্য পাড়ি জমিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। সেখানে প্রায় এক দশক প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ২০১৬ সালে দেশে আসেন তিনি। গ্রামে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেও ভাগ্যের চাকা পাল্টায়নি তাঁর। পরে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে শুরু করেন বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ। বর্তমানে তার ৩০০ শতাংশ জমির একটি বিশাল পুকুরসহ ছোট্ট বড় আরও চার থেকে পাঁচটি পুকুর রয়েছে। এখানে মাছ চাষ করে প্রতিবছর কয়েক লাখ টাকা লাভবান হচ্ছেন তিনি।

সোহেল আহমদ বলেন, ‘প্রবাসে যেই সময় ব্যয় করেছি দেশে তাঁর চেয়ে কম সময় ব্যয় করেও এখন অধিক উপার্জন করছি। বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করে আমি লাভবান। দেশে এখন পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে আছি। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মাছ চাষের খামারকে আরও সম্প্রসারণ করা। শুধু সরকারি চাকরি আর বিদেশগামী না হয়ে যুবকদের প্রত্যেকের নিজ এলাকায় আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করা উচিত।’

শুধু প্রবাস ফেরত যুবক সোহেল আহমদ একাই নয়, তাঁর মতো আলীপুর গ্রামের সিরাজ মিয়া, হাবীবুর রহমান, আব্দুস শহীদ, সজীব মিয়াসহ আশপাশের গ্রামের বেকার যুবকেরা এখন মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। মাছ চাষ ও ব্যবসায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই গ্রাম থেকে কয়েকজন মৎস্যখামারী ইতিমধ্যে একাধিকবার জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষি স্বীকৃতি ও সম্মাননা পেয়েছেন।

সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর ছাড়াও নূরপুর, টেংরাটিলা, বৈঠাখাই, সোনাপুর ও নন্দীগ্রামে কনছখাই এবং কানলার হাওরপাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে শত শত বাণিজ্যিক মাছ চাষের পুকুর। এসব পুকুরে চাষ হচ্ছে পাঙাশ, তেলাপিয়া, কাতলাসহ সকল প্রকার বিদেশি জাতের কার্প জাতীয় মাছ। গ্রামের প্রধান সড়ক ও হাওরের পাশে একের পর এক পুকুর দেখে মনে হয় প্রতিটি গ্রাম যেন পুকুরে ঘেরা।

আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা জেলার শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষি সম্মাননা প্রাপ্ত আব্দুর রহিম ও নূরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশিক্ষণ ও সহজে ঋণ প্রাপ্তি এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা গেলে অদূর ভবিষ্যতে হাওরপাড়ে মৎস্য বিপ্লব ঘটবে। হাওরপাড়ের এই প্রত্যন্ত এলাকা হবে দেশের মাছ উৎপাদনের রোল মডেল।’

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি বর্মন বলেন, ‘পুরো উপজেলায় ৪ হাজার ৬৬৬টি মাছ চাষের পুকুর রয়েছে। হাওরপাড়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের পুকুরের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেখানকার আবহাওয়া ও মাটি মাছ চাষের উপযোগী, এ কারণে সেখানে মাছের উৎপাদন ভালো হয়। আমরা মাছ চাষিদের মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে সকল ধরনের পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা করছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত