চার যুগেও হয়নি সেতু

মো. বায়েজীদ বিন ওয়াহিদ, জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ)
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২১, ০৯: ০৪
আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২১, ১০: ২৩

জামালগঞ্জ উপজেলায় বঙ্গারকুড়ি নদীর ওপর প্রায় চার যুগেও তৈরি হয়নি সেতু। এ উপজেলার ১৩টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস হলেও উন্নতি হয়নি যোগাযোগ ব্যবস্থার। বাঁশের সাঁকোই ঝুঁকি নিয়ে পারাপর হতে হয় তাঁদের। এ ভোগান্তি নিরসনে সেতুর দাবি জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, আছানপুর, হরিপুর, দুর্গাপুর, মদনাকান্দি, রামজীবনপুর, হরিনাকান্দি, পৈন্ডুপ, মামুদপুর, হিজলাসহ প্রায় ১৩টি গ্রামের বাসিন্দারা বাঁশের সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও কোনো এ নদীতে একটি সেতু হয়নি। এদিকে যোগাযোগ ব্যবস্থার তেমন উন্নয়ন না হওয়ায় রাষ্ট্রের অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে এই হাওরাঞ্চলের জনপদ।

স্থানীয়রা আরও জানান, প্রতি বছরই শুকনো মৌসুমে বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে এই বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়। আর এটিই উপজেলা সদরের সঙ্গে ১৩ গ্রামের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম।

ইনাতনগর গ্রামের সমিরণ দাস বলেন, বঙ্গারকুড়ি নদীতে সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতে হয়। ১৩ গ্রামের কর্মজীবী, শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৩০ হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হতে হয়। এতে চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সেতুটির উত্তর পশ্চিমে অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষকে নিত্যদিন কৃষিপণ্য, বিপণন, চিকিৎসা ও শিক্ষার্থীদের নানা কাজে আসতে হয়। তা ছাড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সাচনা বাজার থেকে বর্ষা মৌসুমে নৌকা দিয়ে ৪ মাস এসব গ্রামের মানুষের চলাচল করে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমের আট মাসই এই পথ দিয়ে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়।

এদিকে কৃষকেরা জানান, তাঁদের উৎপাদিত ধানসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য সহজভাবে বাজারজাত করতে না পারায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেকটা বাধ্য হয়ে জমিতেই বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে কৃষিপণ্য বিক্রি করছেন।

হাওরিয়া আলিপুরের আ. জব্বার জানান, এই এলাকার ছোট-বড় প্রায় ১৩টি গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটি। বাঁশের সাঁকোর দুই পাশে ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এলজিইডি প্রকল্পের মাধ্যমে সাবমারসেবল রাস্তা করা হয়েছে। এ সড়কটি বর্ষায় ডুবে যায়। কিন্তু হেমন্তের ৮ মাস সাঁকোর দুই পাশে পাকা রাস্তা থাকলেও ১০০ ফিটের মতো বঙ্গারকুড়ি মরা নদীতে এসে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে মানুষদের পারাপার হতে হয়।

এ ব্যাপারে বেহেলী ইউপি চেয়ারম্যান অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে প্রতি বছরই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে টিআরের মাধ্যমে বাঁশের সাঁকো করে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিদিন শত শত গাড়ি আসা-যাওয়ার কারণে প্রতি সপ্তাহেই সাঁকোটি মেরামত করতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, এই মরা নদীতে একটি কংক্রিট সেতু হলে এসব গ্রামের ৩০-৩৫ হাজার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছি। আশা করছি এ বছরই দ্রুত সেতুটি করে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ কমবে।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘বেহেলীর মরা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। গত বছর আমরা মাপজোক করে করোনার জন্য আর এগোতে পারিনি। তবে এ বছর চেষ্টা করব যত দ্রুত সম্ভব প্রস্তাব পাঠানোর জন্য। তা ছাড়া আমাদের কাছে পুরো মাপজোকের হিসাব আছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত