ড. মইনুল ইসলাম
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সিটি করপোরেশনের গৃহকর বাড়ানোর জন্য করহার নির্ধারণে ১৯৮৬ সালের ‘দ সিটি করপোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস’ অধ্যাদেশটি অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি মনে করি এটা মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত। ২০২১ সালে আমি তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলাম যে ভূতপূর্ব মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ২০১৬ সালে একই অধ্যাদেশের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণ করতে গিয়ে তাঁর জনপ্রিয়তা হারিয়ে চরম বিপদে পড়েছিলেন। ওই অধ্যাদেশের ভিত্তিতে বর্ধিত গৃহকর বিদ্যমান করের তুলনায় ছয় থেকে দশ গুণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছিল।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীও ওই আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন। এর কিছুদিনের মধ্যে একই ভুল অধ্যাদেশ অনুসরণ করতে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তদানীন্তন মেয়র সাঈদ খোকনকেও ব্যাপক আন্দোলন মোকাবিলা করতে হয়েছিল। ঢাকা ও চট্টগ্রামের আন্দোলনের তীব্রতায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ব্যাপারটা স্থগিত হয়েছিল। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেওয়া রেজাউল করিম চৌধুরী ভুল অধ্যাদেশটির সংশোধনের উদ্যোগ না নিয়ে আবারও ওটাই অনুসরণে গৃহকর বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই করদাতাদের কাছে নতুনভাবে নির্ধারিত গৃহকরের চাহিদাপত্র পৌঁছে গেছে। সাবেক মেয়র নাছির উদ্দীনের মতো পত্রপত্রিকায় মেয়র রেজাউল করিম মন্তব্য করে চলেছেন যে সংক্ষুব্ধ করদাতা সিটি করপোরেশনের কাছে আপিল করলে গৃহকর কমিয়ে দেওয়া হবে।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ঘুষ-দুর্নীতির ফ্লাডগেট যে খুলে দেওয়া হচ্ছে, সেটা কি তিনি বুঝতে পারছেন না? অযৌক্তিকভাবে গৃহকর বাড়িয়ে দিয়ে আপিলের মাধ্যমে তা কমিয়ে দিলে শুধু দুর্নীতিই বাড়বে। সরকারকেও উপলব্ধি করতে হবে যে বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণ মারাত্মক ভুল পদ্ধতি। গৃহকর যেহেতু সম্পত্তি কর (প্রোপার্টি ট্যাক্স), তাই সারা বিশ্বের সিটি গভর্নমেন্টগুলো সম্পত্তির লোকেশন, স্থাপনার মান ও ধরন এবং আয়তনের ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করে থাকে। করদাতার বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে যেহেতু এনবিআর কর্তৃক আয়কর নির্ধারিত হয়, তাই আবার হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণেও যদি বাড়িভাড়ার আয়কেই নির্ধারক বিবেচনা করা হয়, তাহলে ‘ডবল ট্যাক্সেশন অব ইনকাম’ সমস্যার উদ্ভব হবে, যা করনীতির চরম লঙ্ঘন বিধায় বাতিলযোগ্য।
২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকের প্রধান শিরোনাম হিসেবে যে চাঞ্চল্যকর খবরটা প্রকাশিত হয়েছিল তা হলো, দেশের ১১টি সিটি করপোরেশনে মোট ছয় ধরনের গৃহকরের হার বলবৎ রয়েছে, যেখানে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বার্ষিক সর্বনিম্ন ১২ শতাংশ, খুলনা সিটি করপোরেশনে ১৬ শতাংশ, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে ১৭ শতাংশ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ১৯ শতাংশ, সিলেট ও রংপুর সিটি করপোরেশনে ২০ শতাংশ এবং রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে ২৭ শতাংশ হারে গৃহকর আদায় করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু এই ছয় রকমের গৃহকরের হারের ফলে রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের করদাতারা অন্য ৯ নগরীর করদাতাদের চেয়ে বেশি পরিমাণ গৃহকর দিচ্ছেন বলে ধারণা করলে ভুল হবে। কারণ, এই ১১টি সিটি করপোরেশনে বাড়ির ভ্যালুয়েশনে কোনো ইউনিফর্ম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না। বাংলাদেশের ১১টি সিটি করপোরেশনের গৃহকর নির্ধারণ ও আদায়ের পদ্ধতিগুলোতে চরম নৈরাজ্য বিরাজ করছে। অতএব অবিলম্বে দেশের সব সিটি করপোরেশনের গৃহকর নির্ধারণ পদ্ধতিকে ইউনিফর্ম করার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন (বা কমিটি) গঠন করে কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক অবিলম্বে সংসদে একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া ফরজ হয়ে গেছে। কারণ, ১৯৮৬ সালের ‘দ্য সিটি করপোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস’ অনুসরণে এই ১১টি সিটি করপোরেশনের যেখানেই গৃহকর নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে, সেখানেই করদাতাদের তোপের মুখে পড়তে হবে কর্তৃপক্ষকে।
বর্তমানে এই ১১টি সিটি করপোরেশনের কোনোটিতেই গৃহকরের হার নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে বাড়িভাড়ার আয়কে এখনো ব্যবহার করা হয় না। অথচ ১৯৮৬ সালের দ্য সিটি করপোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস অধ্যাদেশটি জারি করা হয়েছিল দেশের তদানীন্তন চারটি সিটি করপোরেশন—ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীর জন্য। অধ্যাদেশ জারির ৩৬ বছর পার হয়ে গেলেও দেশের রাজধানী ঢাকাসহ কোনো নগরেই বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হয়নি। দেখা যাচ্ছে, খোদ ঢাকা সিটি করপোরেশনে বাড়ির মেঝের আয়তন বর্গফুটের ভিত্তিতে হিসাব করে প্রতি বর্গফুট চার টাকা থেকে শুরু করে ষোলো টাকা ধরে সম্পত্তির ভ্যালুয়েশন নির্ধারণ করে ওই ভ্যালুয়েশনের ওপর ১২ শতাংশ হারে গৃহকর নির্ধারণের নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে। ১৯৮৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে তিনবার গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে, প্রতিবারই বাড়ির মেঝের আয়তন বর্গফুটের ভিত্তিতে ভ্যালুয়েশন করে তা করা হয়েছে। প্রতিবারই নতুন নির্ধারিত গৃহকর পুরোনো গৃহকরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি নির্ধারিত হলেও এগুলো নিয়ে ২৯ বছরে ব্যাপক প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আন্দোলন দেখা যায়নি। কারণ, ওই বর্ধিত গৃহকরের পরিমাণ কোনোবারই করদাতাদের কাছে অস্বাভাবিক ও অসহনীয় বিবেচিত হয়নি। কিন্তু ২০১৬ সালে নাছির উদ্দীন ১৯৮৬ সালের ওই অধ্যাদেশের ভিত্তিতে বাংলাদেশের ১১টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে চট্টগ্রামে প্রথম বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন শুরু করেন। এর ফলে ব্যাপক ক্ষোভ ও আন্দোলন হয়েছিল।
আমি আবারও বলছি, বিশ্বের কোথাও হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় না। কারণ, হোল্ডিং ট্যাক্স প্রকৃতপক্ষে যেহেতু সম্পত্তি কর বা প্রোপার্টি ট্যাক্স, তাই বিশ্বের সব সিটি করপোরেশনে প্রোপার্টি ট্যাক্সের নিয়মে এই কর আদায় করা হয়। নিয়মটি হলো: বিশ্বের প্রোপার্টি ট্যাক্স আরোপ করা হয় সম্পত্তির ভ্যালুয়েশনের ভিত্তিতে। আর সম্পত্তির ভ্যালুয়েশন করা হয় ওই সম্পত্তির অবস্থান ও আয়তনের (বর্গমিটার) ভিত্তিতে। নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় হোল্ডিং ট্যাক্সের হার প্রতি বর্গমিটারে সবচেয়ে বেশি হবে, এর পরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে এই হার ক্রমেই কমবে। এভাবে নগরীর কেন্দ্রে যে হারে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারিত হবে তা ক্রমেই কমতে কমতে শহরতলিতে এসে সর্বনিম্ন হবে। বাড়ির গুণগত মানের ভিত্তিতেও ভ্যালুয়েশন বাড়বে বা কমবে। যেমন মার্বেল পাথর বা টাইলসের মেঝে হলে প্রতি বর্গমিটারে যে ভ্যালুয়েশন হবে, মোজাইকের হলে তার চেয়ে কমবে। শুধু সিমেন্টের মেঝে হলে ভ্যালুয়েশন আরও কমে যাবে।
টিনের ছাউনির পাকা ঘর হলে ভ্যালুয়েশন একেবারেই কমে যাবে। বেড়ার ঘর হলে হয়তো কোনো গৃহকরই ধার্য হবে না। ২০১৬ সালে আমি নিজের উদ্যোগে ভারতের কলকাতা নগরী থেকে ওখানকার গৃহকর নির্ধারণের পদ্ধতি সম্পর্কে খবরাখবর সংগ্রহ করে এনেছিলাম। কলকাতা সিটি করপোরেশনেও সম্পত্তির অবস্থান, বাড়ির মেঝের আয়তন ও বাড়ির গুণগত মান বিবেচনা করে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়। ভারতের সব সিটি করপোরেশনে একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীও নিজের উদ্যোগে কলকাতা, দিল্লি ও মুম্বাইয়ের মতো সিটি করপোরেশনের গৃহকর পদ্ধতি সম্পর্কে খবরাখবর সংগ্রহ করে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেন। এরপর তাঁর দায়িত্ব হবে ১৯৮৬ সালের দ্য সিটি করপোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস অধ্যাদেশ সংশোধনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো। একটি ভুল অধ্যাদেশের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনগুলোর গৃহকর আদায়ের ‘তুঘলকি জবরদস্তি’ সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। স্বৈরাচার এরশাদের আমলে বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের যে ধারণা বেরিয়ে এসেছে, সেটাকে অপরিবর্তনীয় বিবেচনা করা ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের জন্য বড় ভুল হয়ে যাচ্ছে। ১৯৮৬ সালের দ্য সিটি করপোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস যথাযথ সংশোধন করে একটি নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। এই আইন প্রণীত হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আগের নিয়মে গৃহকর আদায় অব্যাহত রাখুক—এটাই আমার প্রত্যাশা।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সিটি করপোরেশনের গৃহকর বাড়ানোর জন্য করহার নির্ধারণে ১৯৮৬ সালের ‘দ সিটি করপোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস’ অধ্যাদেশটি অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি মনে করি এটা মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত। ২০২১ সালে আমি তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলাম যে ভূতপূর্ব মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ২০১৬ সালে একই অধ্যাদেশের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণ করতে গিয়ে তাঁর জনপ্রিয়তা হারিয়ে চরম বিপদে পড়েছিলেন। ওই অধ্যাদেশের ভিত্তিতে বর্ধিত গৃহকর বিদ্যমান করের তুলনায় ছয় থেকে দশ গুণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছিল।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীও ওই আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন। এর কিছুদিনের মধ্যে একই ভুল অধ্যাদেশ অনুসরণ করতে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তদানীন্তন মেয়র সাঈদ খোকনকেও ব্যাপক আন্দোলন মোকাবিলা করতে হয়েছিল। ঢাকা ও চট্টগ্রামের আন্দোলনের তীব্রতায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ব্যাপারটা স্থগিত হয়েছিল। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেওয়া রেজাউল করিম চৌধুরী ভুল অধ্যাদেশটির সংশোধনের উদ্যোগ না নিয়ে আবারও ওটাই অনুসরণে গৃহকর বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই করদাতাদের কাছে নতুনভাবে নির্ধারিত গৃহকরের চাহিদাপত্র পৌঁছে গেছে। সাবেক মেয়র নাছির উদ্দীনের মতো পত্রপত্রিকায় মেয়র রেজাউল করিম মন্তব্য করে চলেছেন যে সংক্ষুব্ধ করদাতা সিটি করপোরেশনের কাছে আপিল করলে গৃহকর কমিয়ে দেওয়া হবে।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ঘুষ-দুর্নীতির ফ্লাডগেট যে খুলে দেওয়া হচ্ছে, সেটা কি তিনি বুঝতে পারছেন না? অযৌক্তিকভাবে গৃহকর বাড়িয়ে দিয়ে আপিলের মাধ্যমে তা কমিয়ে দিলে শুধু দুর্নীতিই বাড়বে। সরকারকেও উপলব্ধি করতে হবে যে বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণ মারাত্মক ভুল পদ্ধতি। গৃহকর যেহেতু সম্পত্তি কর (প্রোপার্টি ট্যাক্স), তাই সারা বিশ্বের সিটি গভর্নমেন্টগুলো সম্পত্তির লোকেশন, স্থাপনার মান ও ধরন এবং আয়তনের ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করে থাকে। করদাতার বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে যেহেতু এনবিআর কর্তৃক আয়কর নির্ধারিত হয়, তাই আবার হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণেও যদি বাড়িভাড়ার আয়কেই নির্ধারক বিবেচনা করা হয়, তাহলে ‘ডবল ট্যাক্সেশন অব ইনকাম’ সমস্যার উদ্ভব হবে, যা করনীতির চরম লঙ্ঘন বিধায় বাতিলযোগ্য।
২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকের প্রধান শিরোনাম হিসেবে যে চাঞ্চল্যকর খবরটা প্রকাশিত হয়েছিল তা হলো, দেশের ১১টি সিটি করপোরেশনে মোট ছয় ধরনের গৃহকরের হার বলবৎ রয়েছে, যেখানে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বার্ষিক সর্বনিম্ন ১২ শতাংশ, খুলনা সিটি করপোরেশনে ১৬ শতাংশ, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে ১৭ শতাংশ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ১৯ শতাংশ, সিলেট ও রংপুর সিটি করপোরেশনে ২০ শতাংশ এবং রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে ২৭ শতাংশ হারে গৃহকর আদায় করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু এই ছয় রকমের গৃহকরের হারের ফলে রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের করদাতারা অন্য ৯ নগরীর করদাতাদের চেয়ে বেশি পরিমাণ গৃহকর দিচ্ছেন বলে ধারণা করলে ভুল হবে। কারণ, এই ১১টি সিটি করপোরেশনে বাড়ির ভ্যালুয়েশনে কোনো ইউনিফর্ম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না। বাংলাদেশের ১১টি সিটি করপোরেশনের গৃহকর নির্ধারণ ও আদায়ের পদ্ধতিগুলোতে চরম নৈরাজ্য বিরাজ করছে। অতএব অবিলম্বে দেশের সব সিটি করপোরেশনের গৃহকর নির্ধারণ পদ্ধতিকে ইউনিফর্ম করার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন (বা কমিটি) গঠন করে কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক অবিলম্বে সংসদে একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া ফরজ হয়ে গেছে। কারণ, ১৯৮৬ সালের ‘দ্য সিটি করপোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস’ অনুসরণে এই ১১টি সিটি করপোরেশনের যেখানেই গৃহকর নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে, সেখানেই করদাতাদের তোপের মুখে পড়তে হবে কর্তৃপক্ষকে।
বর্তমানে এই ১১টি সিটি করপোরেশনের কোনোটিতেই গৃহকরের হার নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে বাড়িভাড়ার আয়কে এখনো ব্যবহার করা হয় না। অথচ ১৯৮৬ সালের দ্য সিটি করপোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস অধ্যাদেশটি জারি করা হয়েছিল দেশের তদানীন্তন চারটি সিটি করপোরেশন—ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীর জন্য। অধ্যাদেশ জারির ৩৬ বছর পার হয়ে গেলেও দেশের রাজধানী ঢাকাসহ কোনো নগরেই বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হয়নি। দেখা যাচ্ছে, খোদ ঢাকা সিটি করপোরেশনে বাড়ির মেঝের আয়তন বর্গফুটের ভিত্তিতে হিসাব করে প্রতি বর্গফুট চার টাকা থেকে শুরু করে ষোলো টাকা ধরে সম্পত্তির ভ্যালুয়েশন নির্ধারণ করে ওই ভ্যালুয়েশনের ওপর ১২ শতাংশ হারে গৃহকর নির্ধারণের নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে। ১৯৮৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে তিনবার গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে, প্রতিবারই বাড়ির মেঝের আয়তন বর্গফুটের ভিত্তিতে ভ্যালুয়েশন করে তা করা হয়েছে। প্রতিবারই নতুন নির্ধারিত গৃহকর পুরোনো গৃহকরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি নির্ধারিত হলেও এগুলো নিয়ে ২৯ বছরে ব্যাপক প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আন্দোলন দেখা যায়নি। কারণ, ওই বর্ধিত গৃহকরের পরিমাণ কোনোবারই করদাতাদের কাছে অস্বাভাবিক ও অসহনীয় বিবেচিত হয়নি। কিন্তু ২০১৬ সালে নাছির উদ্দীন ১৯৮৬ সালের ওই অধ্যাদেশের ভিত্তিতে বাংলাদেশের ১১টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে চট্টগ্রামে প্রথম বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন শুরু করেন। এর ফলে ব্যাপক ক্ষোভ ও আন্দোলন হয়েছিল।
আমি আবারও বলছি, বিশ্বের কোথাও হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় না। কারণ, হোল্ডিং ট্যাক্স প্রকৃতপক্ষে যেহেতু সম্পত্তি কর বা প্রোপার্টি ট্যাক্স, তাই বিশ্বের সব সিটি করপোরেশনে প্রোপার্টি ট্যাক্সের নিয়মে এই কর আদায় করা হয়। নিয়মটি হলো: বিশ্বের প্রোপার্টি ট্যাক্স আরোপ করা হয় সম্পত্তির ভ্যালুয়েশনের ভিত্তিতে। আর সম্পত্তির ভ্যালুয়েশন করা হয় ওই সম্পত্তির অবস্থান ও আয়তনের (বর্গমিটার) ভিত্তিতে। নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় হোল্ডিং ট্যাক্সের হার প্রতি বর্গমিটারে সবচেয়ে বেশি হবে, এর পরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে এই হার ক্রমেই কমবে। এভাবে নগরীর কেন্দ্রে যে হারে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারিত হবে তা ক্রমেই কমতে কমতে শহরতলিতে এসে সর্বনিম্ন হবে। বাড়ির গুণগত মানের ভিত্তিতেও ভ্যালুয়েশন বাড়বে বা কমবে। যেমন মার্বেল পাথর বা টাইলসের মেঝে হলে প্রতি বর্গমিটারে যে ভ্যালুয়েশন হবে, মোজাইকের হলে তার চেয়ে কমবে। শুধু সিমেন্টের মেঝে হলে ভ্যালুয়েশন আরও কমে যাবে।
টিনের ছাউনির পাকা ঘর হলে ভ্যালুয়েশন একেবারেই কমে যাবে। বেড়ার ঘর হলে হয়তো কোনো গৃহকরই ধার্য হবে না। ২০১৬ সালে আমি নিজের উদ্যোগে ভারতের কলকাতা নগরী থেকে ওখানকার গৃহকর নির্ধারণের পদ্ধতি সম্পর্কে খবরাখবর সংগ্রহ করে এনেছিলাম। কলকাতা সিটি করপোরেশনেও সম্পত্তির অবস্থান, বাড়ির মেঝের আয়তন ও বাড়ির গুণগত মান বিবেচনা করে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়। ভারতের সব সিটি করপোরেশনে একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীও নিজের উদ্যোগে কলকাতা, দিল্লি ও মুম্বাইয়ের মতো সিটি করপোরেশনের গৃহকর পদ্ধতি সম্পর্কে খবরাখবর সংগ্রহ করে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেন। এরপর তাঁর দায়িত্ব হবে ১৯৮৬ সালের দ্য সিটি করপোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস অধ্যাদেশ সংশোধনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো। একটি ভুল অধ্যাদেশের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনগুলোর গৃহকর আদায়ের ‘তুঘলকি জবরদস্তি’ সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। স্বৈরাচার এরশাদের আমলে বাড়িভাড়ার আয়ের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের যে ধারণা বেরিয়ে এসেছে, সেটাকে অপরিবর্তনীয় বিবেচনা করা ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের জন্য বড় ভুল হয়ে যাচ্ছে। ১৯৮৬ সালের দ্য সিটি করপোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস যথাযথ সংশোধন করে একটি নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। এই আইন প্রণীত হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আগের নিয়মে গৃহকর আদায় অব্যাহত রাখুক—এটাই আমার প্রত্যাশা।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে