Ajker Patrika

নয় বছর ধরে ফাইলবন্দী

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ জুন ২০২২, ১৫: ০৯
নয় বছর ধরে ফাইলবন্দী

বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বাড়ায় প্রতিনিয়তই নিচে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। খোদ সরকারি সংস্থার জরিপেই উঠে এসেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলের কোথাও কোথাও মাটির নিচে পানিই নেই।

গবেষকেরা বলছেন, পানির স্তর নেমে যাওয়ায় মরুকরণ ত্বরান্বিত হচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলে। তাঁরা কৃষিকাজে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।

ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ নিশ্চিত করতে ২০১৩ সালেই গ্রহণ করা হয় ‘উত্তর-রাজশাহী সেচ প্রকল্প’। কিন্তু গত ৯ বছর সেটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দী হয়ে আছে। এখন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ভূগর্ভস্থ পানি তুলে কৃষকদের কাছে বিক্রি করছে। তা-ও চাষিরা চাহিদামতো পানি পাচ্ছেন না।

বোরো ধানের জমিতে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে পানি না পেয়ে গত মার্চে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দুই সাঁওতাল কৃষক বিষ পানে আত্মহত্যা করেন। এরপর থেকে আবারও উত্তর-রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের জোর দাবি উঠেছে। গত রোববার বিশ্ব পরিবেশ দিবসের কর্মসূচি থেকেও রাজশাহীতে এ দাবি জানানো হয়েছে।

উত্তর-রাজশাহী সেচ প্রকল্পের ভাবনাটা প্রথমে আসে ১৯৬২ সালে। তখন পদ্মা নদী থেকে পানি তুলে রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষিকাজ করার পরিকল্পনা করা হয়। এর মধ্যেই ১৯৮০ সালের দিকে বরেন্দ্র প্রকল্পের কাজ শুরু হলে উত্তর-রাজশাহী সেচ প্রকল্প থমকে যায়। কিন্তু পানি নিয়ে বিএমডিএর সংকট শুরু হলে ২০১৩ সালে আবার রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) উত্তর-রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পাঠায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে।

তারপর থেকে ওই প্রকল্প ফাইলবন্দী হয়ে আছে। পানির জন্য দুই কৃষকের আত্মহত্যার পর এখন সবাই নড়েচড়ে বসছেন। ওই প্রকল্পের বাস্তবায়নের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করা সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছেন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খান বলেন, সেচ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো সারা বছর স্থায়ী ও কার্যকরভাবে নদীর পানি দিয়ে চাষিদের সেচ সুবিধা দেওয়া। এখন ভূগর্ভস্থ পানির সেচব্যবস্থার কারণে এই অঞ্চলে এখনো লাখ লাখ একর জমি পানির অভাবে অনাবাদি পড়ে থাকে।

জামাত খান আরও বলেন, ক্রমাগত ভূগর্ভস্থ পানি তোলার কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। আর্সেনিকের মাত্রা বাড়ছে। তা ছাড়া ভূগর্ভস্থ পানিতে সেচ দিতে চাষিদের খরচও বাড়ছে। তাই উত্তর-রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন আমাদের প্রাণের দাবি। বরেন্দ্র অঞ্চলকে রক্ষা করতে হলে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন দরকার।

প্রকল্পটি নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘উত্তর-রাজশাহী সেচ প্রকল্প নিয়ে আমরা আবার নতুন করে ভাবছি। দাতা সংস্থাও সাড়া দিচ্ছে। দ্রুতই তাঁরা আবার একটি সমীক্ষা কার্যক্রম চালাতে চায়। মূলত রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় পদ্মার প্রবেশমুখে পাম্প বসিয়ে পানি তোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এবার যেন প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যাওয়া যায়, আমরা সে চেষ্টাই করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত