অতিরিক্ত খরচের বোঝা নিয়ে জমিতে কৃষক

সাইফুল ইসলাম সানি, সখীপুর
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২২, ০৬: ৩৬
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২২, ১২: ৪৭

মাঠে মাঠে রোপা আমন ধান রোপণের প্রস্তুতি। এর মধ্যে হঠাৎ বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। সারের দাম বেড়েছে কদিন আগেই। মৌসুমের শুরুতেই অতিরিক্ত খরচের বোঝা নিয়ে কৃষকদের নামতে হচ্ছে জমিতে। এমন অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সখীপুরের প্রায় ২০ হাজার কৃষক।

ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষের খরচ বেড়েছে একরপ্রতি প্রায় হাজার টাকা। ফলে কৃষকের বাড়তি দুশ্চিন্তা যোগ হয়েছে ডিজেলের বাড়তি দামে।

বাড়তি খরচ নিয়ে কৃষকেরা বলছেন, কয়েক দিন আগে সারের দাম বেড়েছে, এবার যুক্ত হলো জ্বালানি তেলের দাম। চাষের খরচও বাড়ল। এমন অবস্থায় ধানের দাম বাড়ানো না হলে ভবিষ্যতে ব্যাহত হতে পারে উৎপাদন।

উপজেলার বেশ কয়েকজন পাওয়ার টিলার মালিক ও কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতে পাওয়ার টিলার দিয়ে এক পাকী (৫৬ শতাংশ) জমিতে ধানের চারা রোপণের উপযোগী করতে ২ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হতো। ডিজেলের দাম বাড়ার পর একই পরিমাণ জমি চাষে নেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার টাকা। ফলে শুধু জমি চাষেই প্রতি একরে খরচ বেড়েছে প্রায় হাজার টাকা। মৌসুমের শুরুতেই রোপা আমন মাঠের খরচ বৃদ্ধির উত্তাপে কৃষকেরা দিশেহারা।

অনেক কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমন অবস্থা চলমান থাকলে তাঁদের পক্ষে চাষাবাদ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।

পাওয়ার টিলারের মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই অঞ্চলের ধানের মাঠে মৌসুম শেষে প্রচুর পরিমাণে ঘাস জন্মে। ফলে এক জমিতে অন্তত চারবার চাষ দিলে চারা রোপণের উপযোগী হয়।

তিনি দাবি করেন, সখীপুরে ধান চাষের জমি চাষ করার খরচ অন্যান্য এলাকার চেয়ে একটু বেশি হয়।

উপজেলার প্রতিমা বংকী গ্রামের কৃষক আবদুস সালাম মিয়া বলেন, ‘সব খরচ বাদ দিলে এমনিতেই কৃষক ধান চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ওপর আবার সারের দাম বেড়েছে। এখন আবার যুক্ত হলো জ্বালানি তেলের দাম। কৃষকের মরা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকব না।’

সার ও কীটনাশকের স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহ আলম শিকদার বলেন, ইউরিয়া সারের দাম প্রতি বস্তায় ৩০০ টাকা বেড়েছে। অঘোষিতভাবে বেড়েছে পটাশ সারের দামও। এর মধ্যে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, কৃষকেরা যদি ধানের উপযুক্ত মূল্য না পান, তবে ভবিষ্যতে চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, এই অঞ্চলে মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি কম হয়েছে। পানির সংকট কাটিয়ে বর্তমানে উপজেলার কৃষকেরা জমি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই সময়ে চাষের খরচ বাড়ায় কৃষকেরা হতাশ। তবে ধানের উপযুক্ত মূল্য পেলে কৃষকের মুখে পুনরায় হাসি ফুটবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষির যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে কিছুটা বিরূপ প্রভাব পড়বে। কৃষকের উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে শুধু কৃষিক্ষেত্রে ভর্তুকি মূল্যে ডিজেল পেলে ধান চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়বে। এ ছাড়া উৎপাদন খরচের সঙ্গে ধানের বাজারমূল্য সমন্বয় করাও জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত