কর ছাড় পেতে সময় বাড়ানোর দাবি

জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৩, ১১: ৩৩

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল চলতি বছরের ৩০ জুন। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে উৎপাদনে যেতে ব্যর্থ হওয়ায় করমুক্ত সুবিধা পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে কেন্দ্রটি। এ অবস্থায় কর সুবিধা পেতে সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল)।

সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি এনবিআরে চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যথায় করের বোঝার কারণে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছে তারা।

এ ব্যাপারে বিআইএফপিসিএলের অংশীদার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সদস্য (কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স) মো. সামছুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, করোনায় কাজ বন্ধ থাকায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এখনো সম্পূর্ণভাবে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারেনি। তবে চলতি বছরের শেষের দিকেই বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার জন্য বিআইএফপিসিএল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই সময় বাড়ালে, ওই সময়ের মধ্যেই তারা পারবে বলে আশা করি।

এনবিআরের জারি করা এসআরও অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করলে আয়ের ওপর ১৫ বছর কর ছাড় (বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ থেকে) পাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এ ছাড়া কর্মরত বিদেশি ব্যক্তিদের আয়ের ওপর আগমনের তারিখ থেকে তিন বছর কর ছাড় পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের সুদ, রয়্যালিটি, বিভিন্ন ফি ও শেয়ার হস্তান্তরে মূলধনী মুনাফার ওপর কর ছাড় পাবে প্রতিষ্ঠান। তবে ৩০ জুন ২০২৩ সালের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে না পারায় এ সুযোগ শেষ হয়েছে। প্রকল্প অফিসকে এখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

কর ছাড়ের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে সময় চেয়ে এনবিআরকে লেখা চিঠিতে বিআইএফপিসিএল বলেছে, ২০১৭ সালের এপ্রিলে রামপাল প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। করোনার প্রথম ঢেউয়ে প্রকল্পের কাজ ৫ মাস বন্ধ ছিল এবং পরবর্তী সময়ে পুরোদমে কাজ শুরু হতে আরও দুই মাস সময় লেগে যায়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিদেশের লোকবলকে কাজে ফেরাতেও সময় লেগেছে। এ ছাড়া টেস্টিং ও কমিশনিং কাজ সম্পন্নের ক্ষেত্রে গ্রিডের সীমাবদ্ধতার কারণে ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুতে দেরি হয়েছে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ও মনিটিরং সংস্থাগুলো অবগত আছে বলে জানানো হয়েছে। 
বিআইএফপিসিএল আরও জানায়, সবার প্রচেষ্টায় ৬৬০ মেগাওয়াটের ১ম ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। ইউনিটটির বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ অথবা প্রকল্পের ইনিশিয়াল অপারেশন ডেট (আইওডি) ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি বছরের ২৮ জুন ২য় ইউনিটের টেস্ট সিনক্রোনাইজেশন শেষ হয়েছে এবং পরীক্ষামূলকভাবে গ্রিডের সঙ্গে অল্প সময়ের জন্য সংযুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ৬৬০ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় ইউনিটের টেস্টিং ও কমিশনিং কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

ইউনিটটির বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ বা প্রকল্পের কমার্শিয়াল অপারেশন ডেট (সিওডি) চলতি বছরের শেষ দিকে অর্জিত হবে বলে আশা করছে বিআইএফপিসিএল। তাই কর ছাড়সহ বাণিজ্যিক উৎপাদনের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত করার অনুরোধ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, এসআরও জারি করে বিশেষ সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা আবেদন করেছে। রামপাল বিদ্যুৎ নিয়ে দেশে ইতিপূর্বে নানা ধরনের সমালোচনা হয়েছে এবং এটা সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। তাই সবকিছু পর্যালোচনা করে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।

এনবিআরের সাবেক সদস্য (আয়কর নীতি) ড. সৈয়দ আমিনুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে ডলার সংকট ও সাপ্লাই চেইন নষ্ট হওয়ায় বাণিজ্যিক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় দেরি হতে পারে। তারা যদি যুক্তিসংগত কারণ দেখাতে পারে তাহলে মেয়াদ বাড়ানোই উচিত। কারণ, কয়লার ওপর আমাদের আরও নির্ভর করতে হবে। দেশে কয়লা উৎপাদিত হয় আবার সস্তায় পাওয়া যায়। তবে কর ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানোর ইস্যুতে চাপের কিছু নেই।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত