প্রদীপ কুমার গোস্বামী, মিঠাপুকুর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের তালিকায় জায়গা করে নেওয়া রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম এবার গাছ থেকে নামছে ১৫ জুন। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে এই আমকে ঘিরে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও ব্যবসায়ীরা।
দেশে বিভিন্ন জাতের সুস্বাদু আম উৎপাদনে এক সময় রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আধিপত্য ছিল। কিন্তু আমের এই সাম্রাজ্যে এখন জায়গা করে নিয়েছে হাঁড়িভাঙা। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার হিসেবে এই আম ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে পাঠিয়েছিলেন। এর ফলে আমটির সুখ্যাতি ও পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মিঠাপুকুরে ১ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙার চাষ হয়েছে। উপজেলাতে ছোট-বড় বাগান রয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বাগান ছাড়াও বাড়ির আশপাশে রয়েছে শত শত আমগাছ। সব মিলিয়ে ২ লাখের বেশি গাছ আছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ থেকে ৯৫ হাজার মেট্রিক টন।
গত বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ী ও আমবাগান মালিকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ বছর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা।
উপজেলার ময়েনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক জানান, তাঁর পরিবারের ২২ বিঘা জমিতে বাগান রয়েছে। এখনো তা বিক্রি করেননি। তবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দর-কষাকষি চলছে। ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকার আম বিক্রির আশা করছেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পাওয়া আমচাষি আব্দুস সালাম সরকার বলেন, তাঁর ২৮ বিঘা জমিতে বাগান রয়েছে। তিনি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বাগান বিক্রি করেছেন। তাঁর বাগানের পুরোনো গাছগুলোতে আম কম ধরায় দাম বেশি পাননি।
সালাম জানান, প্রশাসন ১৫ জুন থেকে হাঁড়িভাঙা আম বাজারজাত করার নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় নির্দিষ্ট সময়ের আগে অপরিপক্ব আম বাজারে আনছেন। এসব আমের স্বাদ কম ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তা ছাড়া এ ধরনের আম বাজারজাত করা হলে হাঁড়িভাঙা আমের বদনাম ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
আম ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব আমের বাজারে পড়তে পারে। বাজারজাতের শুরুতে প্রতি কেজি আম ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করা না গেলে লোকসান গুনতে হবে বলে জানান তিনি।
অনলাইনে হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি করেন পলাশ মিয়া। তিনি জানান, হাঁড়িভাঙা আমের বড় বাজার পদাগঞ্জ হাট। কিন্তু হাটে যাতায়াতের সড়কগুলো কাঁচা। চাষি ও ব্যবসায়ীদের জন্য কোনো ছাউনি নেই।
অনলাইনে বেচাকেনা প্রসঙ্গে পলাশ জানান, অনেকেই কিনতে চান। কিন্তু পরিবহন সমস্যার কারণে জটিলতা দেখা দেয়। তবুও ক্রেতার সন্তুষ্টির জন্য মানসম্পন্ন আম সরবরাহ করা হয় বলে জানান তিনি। পলাশ ছাড়াও অনেকে মৌসুমি ব্যবসা হিসেবে অনলাইনে হাঁড়িভাঙা আম বেচার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন।
হাঁড়িভাঙা আমের সঙ্গে নানা রকম ব্যবসা হয়ে থাকে। আম বহনের জন্য বাঁশের ঝুরি, প্লাস্টিকের ঝুরি, কুরিয়ার সার্ভিস, যানবাহন, খাবার, প্যাকেজিং ইত্যাদি ব্যবসার প্রসার ঘটে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
হাঁড়িভাঙার রাজ্য হিসেবে পরিচিত খোড়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমাতুজ জোহরার সহায়তায় পদাগঞ্জ হাটে মাটি ভরাটের কাজ চলছে, যাতে ক্রেতা-বিক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে আম কেনাবেচা করতে পারেন। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পদাগঞ্জ হাট পরিদর্শন এবং আমবাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাইফুল আবেদীন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় হাঁড়িভাঙা আমের ফলন ভালো হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তোলা বাগান ও বাসাবাড়ির আশপাশের গাছ থেকে ৮৫ থেকে ৯০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আরও বেশিও হতে পারে।
সাইফুল আবেদীন জানান, হাঁড়িভাঙা আম বেশি পাকলে স্বাদ কমে যায়। তখন দাম কম হয়। এই আম কাচা অবস্থায় বেশি দরে বিক্রি হয়ে থাকে। তাঁর মতে, বাজার দর ভালো হলে দুই থেকে আড়াই শ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হবে।
এই সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের তালিকায় জায়গা করে নেওয়া রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম এবার গাছ থেকে নামছে ১৫ জুন। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে এই আমকে ঘিরে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও ব্যবসায়ীরা।
দেশে বিভিন্ন জাতের সুস্বাদু আম উৎপাদনে এক সময় রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আধিপত্য ছিল। কিন্তু আমের এই সাম্রাজ্যে এখন জায়গা করে নিয়েছে হাঁড়িভাঙা। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার হিসেবে এই আম ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে পাঠিয়েছিলেন। এর ফলে আমটির সুখ্যাতি ও পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মিঠাপুকুরে ১ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙার চাষ হয়েছে। উপজেলাতে ছোট-বড় বাগান রয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বাগান ছাড়াও বাড়ির আশপাশে রয়েছে শত শত আমগাছ। সব মিলিয়ে ২ লাখের বেশি গাছ আছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ থেকে ৯৫ হাজার মেট্রিক টন।
গত বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ী ও আমবাগান মালিকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ বছর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা।
উপজেলার ময়েনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক জানান, তাঁর পরিবারের ২২ বিঘা জমিতে বাগান রয়েছে। এখনো তা বিক্রি করেননি। তবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দর-কষাকষি চলছে। ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকার আম বিক্রির আশা করছেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পাওয়া আমচাষি আব্দুস সালাম সরকার বলেন, তাঁর ২৮ বিঘা জমিতে বাগান রয়েছে। তিনি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বাগান বিক্রি করেছেন। তাঁর বাগানের পুরোনো গাছগুলোতে আম কম ধরায় দাম বেশি পাননি।
সালাম জানান, প্রশাসন ১৫ জুন থেকে হাঁড়িভাঙা আম বাজারজাত করার নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় নির্দিষ্ট সময়ের আগে অপরিপক্ব আম বাজারে আনছেন। এসব আমের স্বাদ কম ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তা ছাড়া এ ধরনের আম বাজারজাত করা হলে হাঁড়িভাঙা আমের বদনাম ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
আম ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব আমের বাজারে পড়তে পারে। বাজারজাতের শুরুতে প্রতি কেজি আম ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করা না গেলে লোকসান গুনতে হবে বলে জানান তিনি।
অনলাইনে হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি করেন পলাশ মিয়া। তিনি জানান, হাঁড়িভাঙা আমের বড় বাজার পদাগঞ্জ হাট। কিন্তু হাটে যাতায়াতের সড়কগুলো কাঁচা। চাষি ও ব্যবসায়ীদের জন্য কোনো ছাউনি নেই।
অনলাইনে বেচাকেনা প্রসঙ্গে পলাশ জানান, অনেকেই কিনতে চান। কিন্তু পরিবহন সমস্যার কারণে জটিলতা দেখা দেয়। তবুও ক্রেতার সন্তুষ্টির জন্য মানসম্পন্ন আম সরবরাহ করা হয় বলে জানান তিনি। পলাশ ছাড়াও অনেকে মৌসুমি ব্যবসা হিসেবে অনলাইনে হাঁড়িভাঙা আম বেচার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন।
হাঁড়িভাঙা আমের সঙ্গে নানা রকম ব্যবসা হয়ে থাকে। আম বহনের জন্য বাঁশের ঝুরি, প্লাস্টিকের ঝুরি, কুরিয়ার সার্ভিস, যানবাহন, খাবার, প্যাকেজিং ইত্যাদি ব্যবসার প্রসার ঘটে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
হাঁড়িভাঙার রাজ্য হিসেবে পরিচিত খোড়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমাতুজ জোহরার সহায়তায় পদাগঞ্জ হাটে মাটি ভরাটের কাজ চলছে, যাতে ক্রেতা-বিক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে আম কেনাবেচা করতে পারেন। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পদাগঞ্জ হাট পরিদর্শন এবং আমবাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাইফুল আবেদীন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় হাঁড়িভাঙা আমের ফলন ভালো হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তোলা বাগান ও বাসাবাড়ির আশপাশের গাছ থেকে ৮৫ থেকে ৯০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আরও বেশিও হতে পারে।
সাইফুল আবেদীন জানান, হাঁড়িভাঙা আম বেশি পাকলে স্বাদ কমে যায়। তখন দাম কম হয়। এই আম কাচা অবস্থায় বেশি দরে বিক্রি হয়ে থাকে। তাঁর মতে, বাজার দর ভালো হলে দুই থেকে আড়াই শ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হবে।
এই সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৫ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে