Ajker Patrika

দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে লোডশেডিং

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২২, ১৪: ০১
দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে লোডশেডিং

‘জেনারেটরে পাওয়ার সাপ্লাই দিতে গেলে ভোল্টেজ ওঠানামা করে। যে কারণে এখন কারখানার অটোমেটিক যেসব মেশিন আছে, সেগুলো জ্বলে যাচ্ছে। এতে একদিকে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক কারখানার মালিকেরা।

বিদ্যুতের ঘাটতি তৈরি পোশাক কারখানায় কেমন প্রভাব ফেলছে জানতে চাইলে পোশাক কারখানার মালিকেরা এ সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তাঁরা বলছেন, চলমান লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানার উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে চট্টগ্রামের অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে এশিয়ান অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গড়ে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লোডশেডিং পাচ্ছি। যেটি আমরা জেনারেটর চালিয়ে কভার করছি। এ কারণে আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেড়ে যাচ্ছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুস সালাম বলেন, ‘আগে যদি আমার কারখানার রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ১০ লাখ টাকা হতো, এখন সেখানে খরচ পড়ছে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এখন দ্বিগুণের বেশি হয়ে যাচ্ছে। কারণ, যখন বিদ্যুৎ থেকে মেশিনগুলোতে সংযোগ দেওয়া হয়, তখন ২৪০ মেগাওয়াট সাপ্লাই পাওয়া যায়। কিন্তু জেনারেটর থেকে যখন সংযোগ দেওয়া হয়, তখন ভোল্টেজ ওঠানামা করে। তখন অনেক ক্ষেত্রে মেশিনগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে রক্ষণাবেক্ষণ খরচও বাড়ছে।

একই ধরনের বক্তব্য চিটাগাং গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ফারহাত আব্বাসের। তিনি বলেন, ‘যে জেনারেটরগুলো আমাদের কাছে আছে, সেগুলো স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর। এগুলো দিয়ে কনটিনিউ পাওয়ার সাপ্লাই দেওয়া যায় না। এসব ব্যাকআপ জেনারেটর দিয়ে একনাগাড়ে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পাওয়ার সাপ্লাই দেওয়া যায়। একনাগাড়ে এর বেশি সময় পাওয়ার সাপ্লাই দিতে গেলে এগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।’

ফারহাত আব্বাস সরকারঘোষিত এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। অন্যথায় তৈরি পোশাকশিল্প সামনে অনেক পিছিয়ে পড়বে বলে তিনি জানান।

সুযোগ-সুবিধায় পিছিয়ে থাকায় এমনিতেই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে চট্টগ্রামের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো। যে কারণে প্রতিবছর এখানে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক কারখানা। সেখানে এখন নতুন করে লোডশেডিং সমস্যা যুক্ত হওয়ায় সামনে আরও অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিজিএমইএ নেতারা।

বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, গত ৭ বছরে ৫৮টি কারখানা চট্টগ্রামে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এর বাইরে বর্তমানে চট্টগ্রামে নিবন্ধিত যেসব পোশাক কারখানা আছে, সেগুলোর অর্ধেকের বেশি বন্ধ রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের মার্চ থেকে আগস্ট—এ ছয় মাসে ৩০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বাকি ৩০৯টি পোশাক কারখানার মধ্যে মাত্র ১৯০টি প্রতিষ্ঠান আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে নিয়োজিত। এভাবে লোডশেডিং চলতে থাকলে সামনে এসব কারখানার উৎপাদনও ব্যাহত হবে। যথাসময়ে অর্ডার করা পোশাক রপ্তানি করতে না পারলে লোকসানের মুখোমুখি হবেন কারখানার মালিকেরা।

বিজিএমইএর সহসভাপতি রকিবুল আলম বলেন, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাগুলোকে লোডশেডিংয়ের আওতামুক্ত রাখতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি। বিদ্যুতের সংকট এখন সবখানে। তাই এটি নিয়ে আলাদাভাবে কিছু করারও সুযোগ নেই। সরকার চেষ্টা করছে। আশা করছি শিগগিরই বিদ্যুতের ঘাটতির সমাধান হবে। আর যদি সমাধান না হয়, তাহলে শুধু তৈরি পোশাক কারখানা নয়, পুরো দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, এ পরিস্থিতিতে রপ্তানি কমে গেলে দেশের অর্থনীতি আরও ভেঙে পড়বে।

তবে বিদ্যুতের ঘাটতির এ প্রভাব চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকায় পড়ছে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মশিউদ্দিন বিন মেসবাহ। তিনি বলেন, ‘আমাদের ইপিজেডে কোনো লোডশেডিং হচ্ছে না। আমাদের নিজস্ব পাওয়ার জেনারেশন সিস্টেম আছে। আমরা ওখান থেকে পাওয়ার সরবরাহের ব্যবস্থা করছি। আর পিডিবির লাইন যেসব কারখানায় আছে, সেখানে মাঝেমধ্যে লোডশেডিং হচ্ছে। সেটাও তেমন নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত