মহিউদ্দিন খান মোহন
এ লেখাটি প্রকাশ হচ্ছে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের শক্তির মহড়া প্রদর্শনের ঠিক এক দিন পরেই, অর্থাৎ ২৯ অক্টোবর। তার আগের দিন ২৮ অক্টোবর ছিল ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘পাহারা’ কর্মসূচি। তারা রাজপথ দখলে রেখে পাহারা দেওয়ার কথা পূর্বাহ্নেই ঘোষণা দিয়েছিল, যাতে বিএনপি মহাসমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে না পারে। আওয়ামী লীগের এ ঘোষণাকে বক্রদৃষ্টিতে দেখার অবকাশ নেই। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে জনগণের ভালোমন্দের দিকে খেয়াল রাখা তাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তবে উদ্বেগ সৃষ্টি হয় তখনই, যখন এ দায়িত্ব পালনের কথা বলে তাঁরা এমন সব উক্তি করেন, যা শান্তি রক্ষার পরিবর্তে অধিকতর অশান্তি সৃষ্টির অশনিসংকেত বহন করে।
তাদের পাল্টাপাল্টি আক্রমণের বহর দেখে দেশবাসী দিন কাটাচ্ছে চরম উদ্বেগের মধ্যে। কেননা, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের এহেন যুদ্ধংদেহী অবস্থানের ফল কখনোই ভালো হয়নি, এ অভিজ্ঞতা তাদের রয়েছে।
২৮ অক্টোবর কী ঘটতে যাচ্ছিল, তা নিয়ে জনমনে জল্পনা-কল্পনার শেষ ছিল না। পরিচিত অনেকেই প্রশ্ন করেছিলেন, এদিন খারাপ কিছু ঘটবে কি না। আমি নিজেও কনফিউজড ছিলাম এ বিষয়ে। আমরা কেউই চাইনি খারাপ কিছু ঘটুক। তারপরেও অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে আমাদের চারপাশে। সব ঘটনাই কিন্তু দৈবদুর্বিপাকে ঘটে না। কিছু কিছু ঘটে মানুষের কৃতকর্মের কারণেও। অবশ্য আশঙ্কার পাশাপাশি দেশবাসীর মনে এ প্রত্যাশাও রয়েছে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাঁদের প্রজ্ঞা, দায়িত্বশীলতা ও দূরদর্শিতা দিয়ে পুরো পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে এমন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন, যা ফুঁসে ওঠা অসহিষ্ণু পরিস্থিতিকে প্রশমিত করবে। তবে হতাশার কথা হলো, দেশবাসীর সে প্রত্যাশা অধিকাংশ সময়ই পূরণ হয় না। এটা হয়তো আমাদের দুর্ভাগ্য। হয় আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব জনগণের মনের ভাষা পড়তে পারেন না, না হয় পড়তে চান না।
২৮ অক্টোবর-পরবর্তী দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হতে পারে, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা মুশকিল। এদিন যদি বিএনপির কর্মসূচিতে কোনো বাধা না আসত, তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার সম্ভাবনা ছিল, এটা অনেকেই বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, সরকারের পদক্ষেপের ওপরই পরবর্তী পরিস্থিতি নির্ভর করছে। যদিও বিএনপি বলেছে, ২৮ তারিখের পরে তারা সচিবালয়সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাও, সড়ক-মহাসড়ক-নৌপথ অবরোধ, এমনকি অসহযোগ আন্দোলনেও যেতে পারে। অবশ্য আজ সারা দিন হরতালের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। এ ধরনের কর্মসূচি সফল করতে বিএনপির সক্ষমতা নিয়ে রাজনীতিসচেতন মহল কিছুটা সন্দিহান। কেননা, এসব কর্মসূচি সফল করার জন্য যে ধরনের জনসমর্থন ও কর্মী বাহিনী দরকার হয়, বিএনপির তা নেই। তা ছাড়া, অসহযোগ এমন একটি আন্দোলন, যেখানে দেশের সাধারণ মানুষ এবং সরকারি কর্মচারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
সবারই মনে থাকার কথা, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগের ডাক দিয়েছিলেন। সে অসহযোগের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে না যাওয়া, কলকারখানায় শ্রমিকদের কর্মবিরতি, খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যোগ না দেওয়া ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত ছিল। ষাটোর্ধ্ব যাঁরা আছেন, সেসব তাঁদের মনে থাকার কথা। সে সঙ্গে এটাও নিশ্চয়ই স্মরণে আছে, বঙ্গবন্ধুর সে আহ্বানে জনগণ ব্যাপক সাড়া দিয়েছিল, যার ফলে অসহযোগ কার্যকর হয়েছিল। এখন যদি বিএনপি তাদের দাবি আদায়ের জন্য অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়, জনগণ কি সে অর্থে তাতে সাড়া দেবে বা অংশগ্রহণ করবে? নির্দ্বিধায় বলা যায়, তা কখনোই সম্ভব হবে না। আর লাগাতার অবরোধের কী পরিণতি হয়, তার উদাহরণ তো রয়েছে চোখের সামনেই। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি পুলিশের বাধার কারণে পূর্বঘোষিত জনসভায় আসতে না পেরে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যখন একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, ‘ম্যাডাম, তাহলে কি অবরোধ চলবে?’ তিনি উত্তরে বলে দিলেন ‘অবরোধ চলবে’। সে অবরোধের নাজেহাল অবস্থা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। মাত্র দুই-তিন দিন রাস্তায় গাড়ি বের হয়নি। পরে ধীরে ধীরে সড়ক-মহাসড়ক স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। তখনো বিএনপি বলছিল তাদের লাগাতার অবরোধ চলবে। চলছে এখনো। সবারই জানা, বিএনপি এখনো অফিশিয়ালি সে অবরোধ সমাপ্তির ঘোষণা দেয়নি। অবশ্য তিন মাস পর খালেদা জিয়া তাঁর কার্যালয়ে অবরুদ্ধ জীবনের অবসান ঘটিয়ে আন্দোলনের কোনো ফল ব্যতিরেকেই নিজ বাসগৃহে ফিরে গিয়েছিলেন।
এখন যদি বিএনপি আবার হরতাল-অবরোধ-ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচিতে প্রবেশ করে, সরকার যে চুপ করে বসে থাকবে না, তা না বললেও চলে। রাজপথে বিএনপিকে মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ যে তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এর পরিণতি অনিবার্য সংঘাত। ১৮ অক্টোবরের আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ছিল ‘তফসিল ঠেকাতে নামছে বিএনপি’। এতে বলা হয়েছে, দুর্গাপূজার ছুটির পর নতুন যে কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি মাঠে নামছে, তার মূল লক্ষ্য নির্বাচনের তফসিল ঠেকানো। আর সে জন্য নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার অন্তত দুই সপ্তাহ আগে থেকেই কঠোর কর্মসূচি শুরু করতে চায় দলটি। দলটির নেতারা মনে করছেন, লাগাতার কঠোর কর্মসূচি দিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত রাখতে পারলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে তফসিল ঘোষণা করা সহজ হবে না। তাঁরা কঠোর কর্মসূচির মধ্য দিয়েই সরকারের পতন ঘটাতে চান। তাঁদের সেসব কর্মসূচি হবে রাজধানীকেন্দ্রিক। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাব্বির আহমদ আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘বিএনপির আন্দোলন গোছানো মনে হচ্ছে না। এরই মধ্যে তাদের ৪৩ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সাজা হচ্ছে, গ্রেপ্তারও চলছে। ভবিষ্যৎ কঠোর আন্দোলন করতে গেলে গ্রেপ্তার, মামলা আরও বাড়বে, দল চাপে পড়বে। তখন বিএনপি কী করবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।’
বিএনপি কঠোর আন্দোলনে গেলে সরকার যে বসে থাকবে না, তা সরকারি দলের নেতাদের কথা থেকে ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সহযোগিতা করা হবে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে অশান্তি করে জনজীবন বিপর্যস্ত করা, সহিংসতা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে। কীভাবে দমন করতে হয়, সরকার সেটা জানে।’ এ থেকে অনুমান করা যায় বিএনপি কঠোর আন্দোলনে নামলে সরকারও কঠোর হাত নিয়ে এগিয়ে আসবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে বিএনপি এরপর কী কর্মসূচি দেয়, কোন অবস্থান নেয়, তার ওপর।
ফলে জনমনে যে প্রশ্নটি এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হলো, ২৮ অক্টোবরের পরে কী হবে? এমন প্রশ্ন উঠেছিল গত বছর ১০ ডিসেম্বরের আগেও বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে। সে সময় একটি টিভি চ্যানেলের টক শোতে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক এমপি মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘১০ ডিসেম্বরের পরে কী হবে?’ আখতারুজ্জামান চটপট জবাব দিয়েছিলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের পরে ১১ ডিসেম্বর হবে।’ অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বরের পরদিন ক্যালেন্ডারে নতুন তারিখ আসা ছাড়া আর কোনো পরিবর্তন আসবে না। এবারও কি তা-ই হবে? ২৮ অক্টোবরের পরে কি নিয়মমাফিক ২৯ অক্টোবরই শুধু আসবে, নাকি রাজনীতির গতিপথে কোনো পরিবর্তন আসবে?
এ লেখাটি প্রকাশ হচ্ছে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের শক্তির মহড়া প্রদর্শনের ঠিক এক দিন পরেই, অর্থাৎ ২৯ অক্টোবর। তার আগের দিন ২৮ অক্টোবর ছিল ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘পাহারা’ কর্মসূচি। তারা রাজপথ দখলে রেখে পাহারা দেওয়ার কথা পূর্বাহ্নেই ঘোষণা দিয়েছিল, যাতে বিএনপি মহাসমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে না পারে। আওয়ামী লীগের এ ঘোষণাকে বক্রদৃষ্টিতে দেখার অবকাশ নেই। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে জনগণের ভালোমন্দের দিকে খেয়াল রাখা তাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তবে উদ্বেগ সৃষ্টি হয় তখনই, যখন এ দায়িত্ব পালনের কথা বলে তাঁরা এমন সব উক্তি করেন, যা শান্তি রক্ষার পরিবর্তে অধিকতর অশান্তি সৃষ্টির অশনিসংকেত বহন করে।
তাদের পাল্টাপাল্টি আক্রমণের বহর দেখে দেশবাসী দিন কাটাচ্ছে চরম উদ্বেগের মধ্যে। কেননা, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের এহেন যুদ্ধংদেহী অবস্থানের ফল কখনোই ভালো হয়নি, এ অভিজ্ঞতা তাদের রয়েছে।
২৮ অক্টোবর কী ঘটতে যাচ্ছিল, তা নিয়ে জনমনে জল্পনা-কল্পনার শেষ ছিল না। পরিচিত অনেকেই প্রশ্ন করেছিলেন, এদিন খারাপ কিছু ঘটবে কি না। আমি নিজেও কনফিউজড ছিলাম এ বিষয়ে। আমরা কেউই চাইনি খারাপ কিছু ঘটুক। তারপরেও অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে আমাদের চারপাশে। সব ঘটনাই কিন্তু দৈবদুর্বিপাকে ঘটে না। কিছু কিছু ঘটে মানুষের কৃতকর্মের কারণেও। অবশ্য আশঙ্কার পাশাপাশি দেশবাসীর মনে এ প্রত্যাশাও রয়েছে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাঁদের প্রজ্ঞা, দায়িত্বশীলতা ও দূরদর্শিতা দিয়ে পুরো পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে এমন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন, যা ফুঁসে ওঠা অসহিষ্ণু পরিস্থিতিকে প্রশমিত করবে। তবে হতাশার কথা হলো, দেশবাসীর সে প্রত্যাশা অধিকাংশ সময়ই পূরণ হয় না। এটা হয়তো আমাদের দুর্ভাগ্য। হয় আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব জনগণের মনের ভাষা পড়তে পারেন না, না হয় পড়তে চান না।
২৮ অক্টোবর-পরবর্তী দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হতে পারে, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা মুশকিল। এদিন যদি বিএনপির কর্মসূচিতে কোনো বাধা না আসত, তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার সম্ভাবনা ছিল, এটা অনেকেই বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, সরকারের পদক্ষেপের ওপরই পরবর্তী পরিস্থিতি নির্ভর করছে। যদিও বিএনপি বলেছে, ২৮ তারিখের পরে তারা সচিবালয়সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাও, সড়ক-মহাসড়ক-নৌপথ অবরোধ, এমনকি অসহযোগ আন্দোলনেও যেতে পারে। অবশ্য আজ সারা দিন হরতালের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। এ ধরনের কর্মসূচি সফল করতে বিএনপির সক্ষমতা নিয়ে রাজনীতিসচেতন মহল কিছুটা সন্দিহান। কেননা, এসব কর্মসূচি সফল করার জন্য যে ধরনের জনসমর্থন ও কর্মী বাহিনী দরকার হয়, বিএনপির তা নেই। তা ছাড়া, অসহযোগ এমন একটি আন্দোলন, যেখানে দেশের সাধারণ মানুষ এবং সরকারি কর্মচারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
সবারই মনে থাকার কথা, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগের ডাক দিয়েছিলেন। সে অসহযোগের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে না যাওয়া, কলকারখানায় শ্রমিকদের কর্মবিরতি, খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যোগ না দেওয়া ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত ছিল। ষাটোর্ধ্ব যাঁরা আছেন, সেসব তাঁদের মনে থাকার কথা। সে সঙ্গে এটাও নিশ্চয়ই স্মরণে আছে, বঙ্গবন্ধুর সে আহ্বানে জনগণ ব্যাপক সাড়া দিয়েছিল, যার ফলে অসহযোগ কার্যকর হয়েছিল। এখন যদি বিএনপি তাদের দাবি আদায়ের জন্য অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়, জনগণ কি সে অর্থে তাতে সাড়া দেবে বা অংশগ্রহণ করবে? নির্দ্বিধায় বলা যায়, তা কখনোই সম্ভব হবে না। আর লাগাতার অবরোধের কী পরিণতি হয়, তার উদাহরণ তো রয়েছে চোখের সামনেই। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি পুলিশের বাধার কারণে পূর্বঘোষিত জনসভায় আসতে না পেরে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যখন একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, ‘ম্যাডাম, তাহলে কি অবরোধ চলবে?’ তিনি উত্তরে বলে দিলেন ‘অবরোধ চলবে’। সে অবরোধের নাজেহাল অবস্থা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। মাত্র দুই-তিন দিন রাস্তায় গাড়ি বের হয়নি। পরে ধীরে ধীরে সড়ক-মহাসড়ক স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। তখনো বিএনপি বলছিল তাদের লাগাতার অবরোধ চলবে। চলছে এখনো। সবারই জানা, বিএনপি এখনো অফিশিয়ালি সে অবরোধ সমাপ্তির ঘোষণা দেয়নি। অবশ্য তিন মাস পর খালেদা জিয়া তাঁর কার্যালয়ে অবরুদ্ধ জীবনের অবসান ঘটিয়ে আন্দোলনের কোনো ফল ব্যতিরেকেই নিজ বাসগৃহে ফিরে গিয়েছিলেন।
এখন যদি বিএনপি আবার হরতাল-অবরোধ-ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচিতে প্রবেশ করে, সরকার যে চুপ করে বসে থাকবে না, তা না বললেও চলে। রাজপথে বিএনপিকে মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ যে তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এর পরিণতি অনিবার্য সংঘাত। ১৮ অক্টোবরের আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ছিল ‘তফসিল ঠেকাতে নামছে বিএনপি’। এতে বলা হয়েছে, দুর্গাপূজার ছুটির পর নতুন যে কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি মাঠে নামছে, তার মূল লক্ষ্য নির্বাচনের তফসিল ঠেকানো। আর সে জন্য নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার অন্তত দুই সপ্তাহ আগে থেকেই কঠোর কর্মসূচি শুরু করতে চায় দলটি। দলটির নেতারা মনে করছেন, লাগাতার কঠোর কর্মসূচি দিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত রাখতে পারলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে তফসিল ঘোষণা করা সহজ হবে না। তাঁরা কঠোর কর্মসূচির মধ্য দিয়েই সরকারের পতন ঘটাতে চান। তাঁদের সেসব কর্মসূচি হবে রাজধানীকেন্দ্রিক। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাব্বির আহমদ আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘বিএনপির আন্দোলন গোছানো মনে হচ্ছে না। এরই মধ্যে তাদের ৪৩ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সাজা হচ্ছে, গ্রেপ্তারও চলছে। ভবিষ্যৎ কঠোর আন্দোলন করতে গেলে গ্রেপ্তার, মামলা আরও বাড়বে, দল চাপে পড়বে। তখন বিএনপি কী করবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।’
বিএনপি কঠোর আন্দোলনে গেলে সরকার যে বসে থাকবে না, তা সরকারি দলের নেতাদের কথা থেকে ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সহযোগিতা করা হবে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে অশান্তি করে জনজীবন বিপর্যস্ত করা, সহিংসতা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে। কীভাবে দমন করতে হয়, সরকার সেটা জানে।’ এ থেকে অনুমান করা যায় বিএনপি কঠোর আন্দোলনে নামলে সরকারও কঠোর হাত নিয়ে এগিয়ে আসবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে বিএনপি এরপর কী কর্মসূচি দেয়, কোন অবস্থান নেয়, তার ওপর।
ফলে জনমনে যে প্রশ্নটি এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হলো, ২৮ অক্টোবরের পরে কী হবে? এমন প্রশ্ন উঠেছিল গত বছর ১০ ডিসেম্বরের আগেও বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে। সে সময় একটি টিভি চ্যানেলের টক শোতে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক এমপি মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘১০ ডিসেম্বরের পরে কী হবে?’ আখতারুজ্জামান চটপট জবাব দিয়েছিলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের পরে ১১ ডিসেম্বর হবে।’ অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বরের পরদিন ক্যালেন্ডারে নতুন তারিখ আসা ছাড়া আর কোনো পরিবর্তন আসবে না। এবারও কি তা-ই হবে? ২৮ অক্টোবরের পরে কি নিয়মমাফিক ২৯ অক্টোবরই শুধু আসবে, নাকি রাজনীতির গতিপথে কোনো পরিবর্তন আসবে?
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১২ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে