Ajker Patrika

সৈয়দপুরের বট-পুরি

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
সৈয়দপুরের বট-পুরি

নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর একটি রেলের শহর। এ শহরে চার লাখের বেশি লোকের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় ৬৫ হাজার উর্দুভাষী। তাই দেশের উত্তরাঞ্চলের এ শহরে বাংলার পাশাপাশি উর্দু ভাষার প্রচলন আছে। বলাই হয়, সৈয়দপুরের মানুষ বাংলা আর উর্দু এ দুটি ভাষা জানে। ভাষার পাশাপাশি এখানে আছে খাবারের আলাদা এক জগৎ, যেটা উত্তরের আর কোনো শহরে দেখা যায় না। এই জগতের কারিগরেরাও উর্দুভাষী; অর্থাৎ যাদের আমরা বিহারি বলে চিনি। এখানকার খাবারের মধ্যে আছে গরুর মাংসের চাপ, শিক কাবাব, মোগলাই বিরিয়ানি, হায়দরাবাদি বিরিয়ানি, পেশোয়ারি পরোটা, রুটি কাবাব, জালি কাবাব ইত্যাদি।

এ শহরের মানুষের পছন্দের একটি খাবার বট-পুরি। বট মানে গরুর ভুঁড়ি দিয়ে তৈরি করা খাবার। বিকেলে শহরের বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় বট-পুরিপ্রেমীদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। মাঝরাত পর্যন্ত বিক্রি চলে। বাঙালি-বিহারির মিশ্র এ শহরে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বট-পুরির। শহরের বাইরে থেকেও আসে বট-পুরির খদ্দেররা। এমনকি এখানকার বট-পুরি চলে যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে।

বট-পুরি তৈরির মূল উপকরণ গরু ও মহিষের ভুঁড়ি। আশপাশের কসাইখানা থেকে এসব ভুঁড়ি সংগ্রহ করেন রেস্তোরাঁর মালিকেরা। 
প্রতি কেজি ভুঁড়ি কিনতে খরচ হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। অনেকে পুরো ভুঁড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় কিনে নেন।

শহরের বাঁশবাড়ি এলাকার শেখ জামাল রেস্তোরাঁর মালিক শেখ জামাল হোসেন জানান, সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কেজি বট বিক্রি হয় তাঁর রেস্তোরাঁয়। ক্রেতারা পুরি দিয়ে খেতে পছন্দ করেন সুস্বাদু ওই বট। কেউ কেউ গরু বা ছাগলের পায়ের হাড় দিয়ে তৈরি খাবার নেহারিও পছন্দ করেন। তিনি ৪২ বছর ধরে এ খাবার বিক্রি করছেন বলে জানান। শহরের গোলজার হোটেল, ভোলার হোটেল, বিজলী হোটেল, জিআরপি ক্যানটিনে বট-পুরি খেতে প্রতিদিন বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ ভিড় জমান। এসব দোকানে এক প্লেট বট বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।

উত্তরবঙ্গের ছোট্ট রেল শহর সৈয়দপুর। ঢাকা থেকে প্রায় ৩৪০ কি.মি. উত্তরের এই শহরটিতে  বাঙালি ও উর্দুভাষী মানুষদের বসবাস। বাঙালি ও উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর মিশেলে এক দারুণ খাদ্যসংস্কৃতি রয়েছে এ শহরে, যা উত্তরের অনেক শহরে নেই।  

সিনেমা রোডের গোলজার হোটেলে বট-পুরি খেতে আসা দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার স্কুলশিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, এখানকার বট-পুরি অত্যন্ত সুস্বাদু। মাঝে মাঝে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে নিয়ে বট-পুরি খেতে আসেন তিনি। তিনি বলেন, ‘অন্য শহরে বট-পুরি খেয়েছি। কিন্তু সৈয়দপুর শহরের বট-পুরির স্বাদ একেবারেই আলাদা।’

সৈয়দপুর জিআরপি ক্যানটিনের বাবুর্চি সাহাব উদ্দিন জানান, বট রান্না করতে দক্ষতার প্রয়োজন আছে। রুচিসম্মত বটের ফলে কোনো হোটেলে খদ্দের বেশি আবার কোনোটিতে কম। মসলা ও বাবুর্চির গুণে কোনো কোনো রেস্তোরাঁর বট জনপ্রিয়তা পায়। উর্দুভাষী বা বিহারি বাবুর্চিরা বট রান্নায় পারদর্শী বলে জানান সাহাব উদ্দিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত