করোনার ধাক্কায় বাঁশীর বদলে হাতে হাতুড়ি

রাব্বিউল হাসান, কালাই (জয়পুরহাট)
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮: ৩২
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২: ৩১

করোনাভাইরাসের কারণে গণজমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে। এতে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার অর্ধশতাধিক লোকসংগীতের সঙ্গে সম্পৃক্ত কণ্ঠশিল্পী ও যন্ত্রশিল্পীদের জীবন থমকে গেছে। কেননা, এ সময় বেশির ভাগ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ আছে। তাই তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অথচ তাঁরাই গানের মাধ্যমে গ্রামবাংলার সংস্কৃতি তুলে ধরতেন।

উপজেলার লোকশিল্পীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মারফতি, মুর্শিদি, বাউল, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, পল্লিগীতি ও দেহতত্ত্ব গান পরিবেশন করতেন। জীবিকার তাগিদে কেউ কেউ এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। আর যাঁরা এই পেশা ছাড়েননি এবং পেশা বদল করতে পারছেন না, তাঁদের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। কাজ না থাকায় অনেকে বাড়িতে বসে থাকেন। ধারদেনায় চালছে তাঁদের সংসার।

কথা হয় উপজেলার খরপা গ্রামের বংশীবাদক জিয়াউল হকের সঙ্গে। যাঁর সুরের মূর্ছনায় মেতে উঠত মঞ্চ।

তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি প্রায় ১৫ বছর ধরে এই পেশায় জড়িত ছিলাম। বাউলশিল্পীদের সঙ্গে বংশীবাদকের কাজ করি। দূরের সেসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলে ১২০০-১৫০০ টাকা এবং নিজ এলাকায় ১০০০-১২০০ টাকা পারিশ্রমিক পেতাম।’

জিয়াউল হক বগুড়ার সান্তাহার, দুপচাঁচিয়া, আদমদীঘি, শিবগঞ্জ, সোনাতলা, ধুনট, শেরপুর, গাইবান্ধা, গোবিন্দগঞ্জ, জয়পুরহাটের কালাই, ক্ষেতলাল, আক্কেলপুর, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, নওগাঁর নজিপুর, নিয়ামতপুর, মহাদেবপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার অনুষ্ঠানে বাউলশিল্পীদের সঙ্গে বাঁশি বাজানোর জন্য আমন্ত্রণ পেতেন।

করোনা এসে যেন সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে। এখন জীবিকার তাগিদে পেশা বদলে হয়েছেন কাঠমিস্ত্রি। কাঠমিস্ত্রির কাজ করে কোনোভাবে চলছে সংসার। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দেশে সবকিছু খুলে দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু তাঁদের অনুষ্ঠান করার অনুমতি মেলে না। এ ছাড়া করোনা আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত মেলেনি কোনো সরকারি সাহায্য বা প্রণোদনা।

কালাইয়ের লোকসংস্কৃতি পরিষদের কণ্ঠশিল্পী হেলাল হোসেন বলেন, করোনার কারণে বিভিন্ন দিবস ও উৎসব উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন না করায় মানবেতর দিন পার করতে হচ্ছে তাঁদের।

উপজেলার সাংস্কৃতিক সংগঠক আব্দুল মজিদ জানান, উপজেলায় অর্ধশতাধিক লোকশিল্পী ও যন্ত্রশিল্পী আছেন। করোনার জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো না হওয়ায় এসব শিল্পী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ধারদেনায় তাঁদের সংসার চালাতে হচ্ছে। এই কঠিন সময়ে সরকারি সহায়তা দেওয়া হলে কিছুটা হলেও তাঁরা উপকৃত হতেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত