Ajker Patrika

সাগরপথে আসছে ইয়াবার চালান

রুদ্র রুহান, বরগুনা
সাগরপথে আসছে ইয়াবার চালান

বরগুনায় মাদকের সহজলভ্য ও বিস্তার ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। নদীবেষ্টিত ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় হওয়ায় মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চালান সমুদ্রপথে ট্রলারে করে খুব সহজেই বরগুনার নৌ-সীমানার মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে এটি ইয়াবা কারবারের সহজ রুট হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হওয়া মাদক, আটক ও মামলার তথ্যেও ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে।

জেলা পুলিশের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত থানা-পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে ৮ হাজার ৮৬১টি ইয়াবা বড়ি, ৭৮ কেজি ৮৫১ গ্রাম গাঁজা, হেরোইন ৪৫.৪৭ গ্রাম, ৬টি পেথিডিন ইনজেকশনসহ বিভিন্ন মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া মাদক-সংশ্লিষ্টতায় থানায় ২৯৯টি মামলা করে ৩৮২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবশেষ গত ২১ নভেম্বর সদর থানা-পুলিশের অভিযানে শহরের বালিকা বিদ্যালয় সড়কের বাসিন্দা চিহ্নিত মাদক কারবারি গোপাল সাহা ও তাঁর সহযোগী পটুয়াখালীর গলাচিপা থানার রনিস সিকদারকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ২০৫টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়। 

বরগুনায় মাদক বিস্তারের নেপথ্যে: উপকূলীয় বরগুনা জেলা তিন দিক থেকেই নদীবেষ্টিত। শুধু দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মোহনা। বরগুনার পাথরঘাটায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণকেন্দ্র। এ ছাড়া তালতলী উপজেলায় পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালী—এই তিনটি নদ-নদীর মোহনা। ফলে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের সমুদ্রগামী জেলে ট্রলারগুলোর ব্যাপক সমাগম ঘটে বরগুনায়। তার মধ্যে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী, নোয়াখালী, হাতিয়া, সন্দ্বীপ এলাকা থেকেও ট্রলার আসে। ফলে মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চালান সমুদ্রপথে ট্রলারে করে বরগুনার নৌ-সীমানার মধ্যে পৌঁছে যায়। নৌপথেই এসব চালান খালাস হয়ে এক অংশ বরগুনার মাদক কারবারিদের কাছে যায়, বাকি অংশ সড়ক ও নৌপথে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করা হয়। 

প্রত্যন্ত গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা: অনুসন্ধানে মাদকের কারবার পরিচালনার জন্য ওয়ার্ড থেকে পাড়া-মহল্লায় ‘বিক্রয় প্রতিনিধি’ নিয়োগ দেওয়ার তথ্যও মিলেছে। তাঁদের দেখভালের জন্য রয়েছেন এলাকাভিত্তিক ‘বড় ভাই’। এই বড় ভাইয়েরাও আবার আরেক বড় ভাইয়ের লোক হিসেবে পরিচিত, যাঁরা মূলত মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এলাকায় ছোট ছোট উপদল ও তাদের দলনেতারা মাদকের খুচরা বিক্রেতা হিসেবে কারবার পরিচালনা করেন। উপজেলা সদরের ১০টি ইউনিয়নেই হাট বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এখন হাত বাড়ালে পাওয়া যায় ইয়াবা ও গাঁজা। 

যাঁরা জড়িত মাদক কারবারে: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সূত্রমতে, মাদক কারবারি ছাড়াও রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি করা ভালোমানুষির আড়ালে কিছু ব্যক্তি মাদকের কারবার করছেন। এ ছাড়া শহরের ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ কিছু কথিত ব্যক্তিও নেপথ্যে মাদকের কারবারে অর্থলগ্নি করছেন, এমন তথ্য রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। র‍্যাব-৮-এর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্যমতে, বরগুনার বেশ কিছু পরিচিত মুখ আড়ালে মাদক কারবারে জড়িত—এমন তথ্যও গোয়েন্দাদের হাতে রয়েছে। তবে প্রমাণের অভাবে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। তবে তাঁদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানায় ওই সূত্র। 

কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক আরিফ বলেন, ‘শহরের বেশ কিছু কিশোর-তরুণ এখন মাদক কারবারে জড়িত। তারা অনেকে বরগুনা শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ও ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত। তাদের লিডাররা মূল ডিলার আর লিডারদের এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধি রয়েছে। মূলত লিডাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে মাদক কারবার করায় কখনো ধরা পড়েন না। 

বরগুনার পুলিশ সুপার আবদুস ছালাম বলেন, ‘এখানে বড় ধরনের পাইকারি মাদক বিক্রেতা এখনো ধরা পড়েনি। আমাদের অভিযানে খুচরা বিক্রেতা ও সেবনকারীই বেশি ধরা পড়ে। মাদকের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছে।’ 

র‍্যাব-৮-এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আসলে বড় চালানগুলো ধরার চেষ্টা করি। বরগুনায় এখনো উল্লেখযোগ্য বড় চালান ধরা পড়েনি। নৌপথে কম নজরদারি থাকায় সে সুযোগ নিচ্ছে মাদক কারবারিরা। তবে আমরা নৌপথের গণপরিবহনে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও মাঝেমধ্যে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত