কাজে আসছে না কোটি টাকার পানি শোধনাগার

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২২, ১২: ৩৮

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (লজিক) প্রকল্পের  আওতায় পানি শোধনাগারসহ তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।  অপরিকল্পিতভাবে এগুলো বাস্তবায়ন করায় তা উপকারভোগিদের কাজে আসছে না। অভিযোগ রয়েছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বজনপ্রীতি ছিল। ঠিকমতো কাজ করা হয়নি।

জানা গেছে, লজিকের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার চারটি ইউনিয়নে কোটি টাকা ব্যয়ে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে কৃষিজমিতে সেচ সুবিধা, বন্যার সময়ে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে বন্যাসহিষ্ণু পানি শোধনাগারসহ উঁচু টিউবওয়েল স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ প্রকল্পের আওতায় শৌলমারী 
ইউনিয়নে ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৩৪৭ টাকা, রৌমারী সদর ইউনিয়নে ৩১ লাখ ৪০ হাজার ৬০০, বন্দবেড় ইউনিয়নে ৪৩ লাখ ৯৫ হাজার ৬৩২ ও দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নে ২৪ লাখ ৮৫ হাজার ২৭২ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।

শৌলমারী ইউনিয়নের চেংটাপাড়া, রৌমারী সদর ইউনিয়নের ভূন্দরচর, বন্দবেড় ইউনিয়নে ফলুয়ারচর ও দাঁতভাঙ্গা শালুরমোড়ে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি পাম্প স্থাপনে ব্যয় করা হয়েছে ৯ লাখ টাকা। সুবিধাভোগীদের অভিযোগ, প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী না করে অপরিকল্পিতভাবে স্থাপন করা হয়েছে সোলার সেচ পাম্প। ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী। এ কারণে সেচ পাম্প কাজ করছে না। একই অবস্থা পানি শোধনাগার ও উঁচু নলকূপগুলোরও।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও সুবিধাভোগী বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্পগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ করার কথা। কিন্তু তা না করে ইউপি চেয়ারম্যানরা অনিয়ম করে একদিকে যেমন তাঁদের পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিয়েছেন। অপর দিকে সোলারের মাধ্যমে সেচ পাম্প, পানি শোধনাগার ও উঁচু টিউবওয়েলগুলো দিয়েছেন তাঁদের স্বজনদের। প্রকল্পের কাজ দেখভাল ও অর্থ ছাড়ের দায়িত্ব চেয়ারম্যান ও লজিক প্রকল্প কর্মকর্তার হাতে থাকায় অনিয়ম-দুর্নীতি বেশি হয়েছে।’

রৌমারী সদর ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘প্রকল্পগুলো আগের চেয়ারম্যান বাস্তবায়ন করেছেন। এর মধ্যে কিছু অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।’ 
শৌলমারী ইউপির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অন্য প্রকল্প থাকলেও পানি শোধনাগারের কোনো প্রকল্প ইউনিয়নে ছিল না।’

দাঁতভাঙ্গা ইউপির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম  ‘আমাদের ইউনিয়নে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে যে সেচ পাম্প দেওয়া হয়েছে, তা কিছু কিছু চালু রয়েছে।’ 
অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনের কথা স্বীকার করে প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর খোকন কুমার কণ্ডু বলেন, ওই সময় অন্য কোথাও জায়গা না পাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার মানুষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। কেউ যদি ওইগুলো ব্যবহার না করতে না পারেন তাহলে স্থানান্তর করে ব্যবহারের আওতায় আনা সম্ভব।

লজিক প্রকল্পের কুড়িগ্রাম জেলা সমন্বয়ক মো. মুছা বলেন, ‘আমরা ওই সময় বুঝতে পারিনি, বর্তমানে এমন অবস্থা হবে। পাম্পগুলো স্থানান্তর করে কৃষি সেচের আওতায় আনা হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেল (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান বা প্রকল্পের লোকজন যদি আমাকে অবগত করেন, তাহলে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত