Ajker Patrika

বন্ধ থাকায় বাড়ছে দেনা নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি

আশরাফুল আলম আপন, বদরগঞ্জ
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২২, ১৫: ৪৪
বন্ধ থাকায় বাড়ছে দেনা নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি

লোকসানের মুখে পড়ায় বদরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর চিনিকল বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এতে বেকার হয়ে পড়েন অসংখ্য শ্রমিক। মিলটি বন্ধ থাকায় বাড়ছে দেনার পরিমাণ। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ অন্য খাত মিলে বকেয়া প্রায় ২১ কোটি টাকা। নিয়মিত বেতন-ভাতা না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন পার করছেন তাঁরা। এ অনিশ্চয়তা কাটাতে বিকল্প উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে দীর্ঘ সময় উৎপাদন বন্ধ থাকায় চিনিকলের যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। আখ পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক্টরগুলোও বিকল হয়ে পড়ছে

সুগারমিল কার্যালয় সূত্র জানা যায়, ১৯৬৪ সালে ১১১ দশমিক ৪৫ একর জমির ওপর নির্মিত হয় শ্যামপুর চিনিকল। ১৯৬৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আখমাড়াই শুরু হয়। দৈনিক আখমাড়াইয়ের সক্ষমতা রাখা হয় ১ হাজার ১৬ টন। বছরে তিন মাস মিল চালু থাকত। মিলটি শুরু থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত লাভের মুখ দেখত। ২০০০ সালের পর থেকে টানা লোকসানের মুখে পড়ে। ব্যাংক ঋণ, ঋণের সুদ ও শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ অন্যান্য খাত মিলে শেষ পর্যন্ত লোকসান বেড়ে হয় ৫০৫ কোটি টাকা। এ পরিস্থিতিতে শিল্প, বাণিজ্য, অর্থ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি মিলটির মাড়াই কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০-২১ মাড়াই মৌসুমে মিলের কার্যক্রম বন্ধ করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন। মিল এলাকায় আখ উৎপাদন কমে যাওয়ায় এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে লোকসানের বোঝা বাড়ছে বলে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও তা মানতে নারাজ ছিলেন শ্রমিক-কর্মচারী ও আখ চাষিরা। কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, অদক্ষ জনবল ও অব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে বলে দাবি তাঁদের।

এ নিয়ে এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ও আখচাষি কল্যাণ সমিতি আন্দোলনে মাঠে নামে। স্মারকলিপি দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু ফল মেলেনি। শেষ পর্যন্ত বন্ধই হয়ে যায় মিলটি। সেই থেকে মিল এলাকায় বন্ধ আখ চাষও। আখ চাষের জমিগুলোতে কৃষকেরা এখন অন্যান্য ফসল চাষ করছেন।

চিনিকল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সদস্য ও চিনিকলের অফিস সহায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মিলটি বন্ধ থাকায় গত বছরের জুন মাস থেকে বেতন বন্ধ। এর মধ্যে গত জানুয়ারি মাসের বেতন পেলেও বাকি আট মাসের বেতন এখনো পাইনি। এ অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি।’

মিল সূত্রে জানা গেছে, মিলটি বন্ধের আগে ৪৯৩ জন স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন। বন্ধের পর অনেকেই অবসর গ্রহণ করেছেন এবং কিছু জনবল অন্য মিলে বদলি হয়ে গেছেন। বর্তমানে এই চিনিকলে ১০৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত আছেন। তাঁদের দাবি, সরকারিভাবে ভর্তুকি দিয়ে হলেও মিলটি পুনরায় চালু করা হোক।

মিল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড বাবদ ৭ কোটি, গ্রাচ্যুয়িটি বাবদ ১০ থেকে ১১ কোটি এবং বেতন বাবদ প্রায় ৪ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এ অবস্থায় মিলটি উৎপাদনমুখী করতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে গত বছরের নভেম্বরে কিছু প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এগুলো হলো মিলের নিজস্ব জায়গায় আলুর কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ, কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা স্থাপন এবং পিপি ব্যাগ ও চিনির প্যাকেট তৈরির কারখানা স্থাপন। এসব প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছেন মিলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ মো. আহসান হাবিব বলেন, ‘বন্ধ থাকায় মিলটির যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। আখ বহনের কাজে নিয়োজিত গাড়িগুলোও পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কৃষিনির্ভর উত্তরাঞ্চলের অন্যতম একটি ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছিল শ্যামপুর চিনিকল। এর সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার পরিবার। কিন্তু মিলটি বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কষ্টে দিন পার করছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত