বাঙালির বিজয়ের দিন

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ১৮
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ৫৯

বছর! যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়েছিল একাত্তরের মার্চে, তার অবসান হয়েছিল ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে। বাঙালির জীবনে এ রকম আনন্দের দিন আসেনি আর কখনো। পুরো জাতি যে আকাঙ্ক্ষা মনে মনে লালন করেছিল, তারই মূর্ত প্রকাশ ঘটল এদিন।

বিপুল গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতি বিশ্বস্ত হয়ে স্বাধিকার আন্দোলনে ব্রতী হয়েছিল পূর্ব বাংলার মানুষ। এর আগে দেশভাগের যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে এই ভূখণ্ডের মানুষকে। জগদ্দল পাথরের মতো পাকিস্তান নামক এক উদ্ভট রাষ্ট্র চেপে বসেছিল বাংলার বুকে। বাঙালি ধীরে ধীরে বুঝতে শিখল, ব্রিটিশ শাসন-শোষণের অবসানে মুক্তি আসেনি; বরং পাকিস্তান রাষ্ট্রের পশ্চিম অংশটা হয়ে উঠেছিল নতুন শোষক। পূর্ব বাংলার সমস্ত সম্পদ লুটপাট করে তারা অল্প দিনের মধ্যেই পাকিস্তান রাষ্ট্রটির অসারত্ব প্রমাণ করল। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী বাঙালির পক্ষে যে আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন একসময়, তারই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষের ন্যায্য হিস্যা বুঝে পাওয়ার আন্দোলনকে পরিণত করলেন স্বাধিকার আন্দোলনে। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফাই একসময় পরিণত হলো এক দফায়। রক্ত দিয়ে বাঙালি বাংলাদেশের নাম লিখল। বিজয় দিবসে স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি থাকল অতল শ্রদ্ধা।

১৯৭১ সালে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, আমাদের জাতীয় ইতিহাসে সে রকম ঐক্য আর কখনোই দেখা যায়নি। এই ঐক্যের কারণেই নয় মাস যুদ্ধের পর পাকিস্তানি বাহিনীকে হটিয়ে দিতে পেরেছিল মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী। বিধ্বস্ত পাকিস্তানি নেতা নিয়াজী আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় খুঁজে পাননি। রেসকোর্স ময়দানে যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানিরা বিদায় নিল বাংলাদেশ থেকে। এখানে বলে রাখা দরকার, শুধু পাকিস্তানিদের হটিয়ে দেওয়াই স্বাধীনতা বা মুক্তির লক্ষ্য ছিল না; লক্ষ্য ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সবার থাকবে সমান অধিকার।

বিজয়ের ৫০ বছরে এসে দেখতে পাচ্ছি, অর্থনীতির নানা সূচকে আমরা এগিয়েছি অনেক। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। কিছু ক্ষেত্রে আবার পিছিয়েছিও। গণতন্ত্র এখনো শক্তিশালী ভিত্তি পায়নি। এখনো দেশ অসাম্প্রদায়িক হয়ে ওঠেনি। ধর্মব্যবসায়ীদের পরিপূর্ণভাবে রুখে দেওয়া সম্ভব হয়নি। ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজরা সমাজে সম্মান পাওয়া শুরু করেছে, নানাভাবে সৎ মানুষেরা জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না সমাজে।

এই জায়গাগুলোয় আরও অনেক কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। দাম দিয়ে কেনা বাংলাকে সত্যিকার অর্থে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে হলে যে ত্যাগ, নিষ্ঠা ও মেধার প্রয়োগ প্রয়োজন, তারই প্রত্যাশা থাকল নতুন প্রজন্মের কাছে। সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণে ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত