ইফতারির জন্য মুড়ি ভাজার ধুম

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ০৯
Thumbnail image

রমজানে ইফতারে ছোলা ও মুড়ি গ্রামবাংলার প্রধান দুটি উপাদান। রোজার সময় হাটবাজারে ছোলা ভাজা পাওয়া গেলেও বাড়িতে নারীদের মুড়ি ভাজার রেওয়াজ এখনো রয়েছে। রমজান উপলক্ষে মুড়ি ভাজার ধুম পড়েছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মুড়িপল্লিতে।

উপজেলার ১১ নম্বর চর দুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের পূর্ব এখলাসপুর, পশ্চিম আলোনিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সারা বছর চলে মুড়ি ভাজার কর্মযজ্ঞ। পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন মুড়ি ভাজার কারিগরেরা।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে এখন চলছে মুড়ি ভাজার ধুম। দিন-রাত মুড়ি ভাজার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে উপজেলার শতাধিক পরিবার। মুড়ি ভাজার মূল কারিগর নারী হলেও তাঁদের সঙ্গে একযোগে কাজ করছেন পুরুষেরাও।

মুড়ি যাঁদের জীবন-জীবিকার উৎস, সেই মুড়ি তৈরির অখ্যাত কারিগরদের এই গ্রামে দেশীয় মুড়ি সরবরাহের ব্যাপকতার কারণেই এই উপজেলার কয়েকটি গ্রামে এখন প্রায় ৫০টি পরিবার মুড়ি ভেজে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। শতাধিক পরিবার ৪০ থেকে ৪৫ বছর ধরে মুড়ি ভেজে তা বাজারে বিক্রি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে-পরে বেঁচে আছে।

এই মুড়ির কারবারিদের গৃহবধূরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে ভালো মুড়ি করার উপযোগী ধান কিনে আনেন এবং জ্বালানি সংগ্রহ করেন। পরে সেই ধান সেদ্ধ-শুকনা করে ঢেঁকিতে এবং মেশিনে ভেঙে চাল করে এবং চালে লবণ-পানি মিশিয়ে মাটির হাঁড়িতে ভাজা হয়। সেই সঙ্গে পাশের অন্য চুলায় মাটির হাঁড়িতে গরম হয় মিহি বালু। চাল ভাজা হলে তাতে ঢেলে দেওয়া হয় আগুনে তাতানো গরম বালু। আর মুহূর্তেই চাল থেকে ভুর ভুর করে ফুটে ওঠে শুভ্র শিউল ফুলের পাপড়ির মতো সাদা মুখরোচক মুড়ি। গরম মুড়ি চালনিতে ঢেলে বালু ঝেড়ে রাখা হয় বস্তায়। মুড়ি ভাজা হলেই গৃহবধূদের দায়সারা। পরে তা বাজারজাত করার দায়িত্ব বর্তায় পুরুষদের ওপর। মধ্যস্বত্বভোগী পাইকারেরাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাড়ি থেকে মুড়ি কিনে নিয়ে যান। আবার অনেকে মাথায় বস্তাবোঝাই মুড়ি নিয়ে বিক্রি করেন দোকানে দোকানে নয়তো বাসাবাড়িতে।

মুড়ির কারিগর খোকন দাস, ঝুতি রানী, বিষ্ণু চন্দ্র দাস, সুজাতা রানী দাস, শিবানীসহ বেশ কয়েকজন জানান, সাম্প্রতিক কালে মেশিনে তৈরি করা মুড়ি এসে বাজার দখল করায় তাঁদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে। তবু আশার কথা, মেশিনের ইউরিয়া মেশানো মুড়ি বড় হলেও এর আদি স্বাদ মোটেও নেই। সে জন্য এখনো তাঁদের হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা রয়েছে মানুষের কাছে। আর্থিক সহায়তা পেলে তাঁরা এ থেকেই আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে সক্ষম হবেন বলে জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত