Ajker Patrika

ঝুঁকি নিয়ে ভেলায় পারাপার

আতিক ফারুকী, ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ)
আপডেট : ০২ জুন ২০২২, ১৪: ০১
ঝুঁকি নিয়ে ভেলায় পারাপার

নদীতে সেতু নেই, সাঁকোর ব্যবস্থাও নেই। কলার ভেলায় চড়ে কিংবা সাঁতার কেটে পার হতে হয় নদী। এদিকে বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়লে স্রোতের কারণে পার হওয়ার উপায় থাকে না। অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। ৫০ বছর ধরে এভাবেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের ছয় গ্রামের বাসিন্দাদের।

রূপেশ্বরী নদী বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে একটি বিজিবি ক্যাম্পসহ ছয় গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষকে। কলতাপাড়া, রেন্ট্টিপাড়া, কাইদাকোনা, শ্রীপুর, লক্ষ্মীপুর, গিলাগড়া গ্রামের বাসিন্দারা ও মাটিয়ারবন্দ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ক্যাম্পের সদস্যদের নদী পারাপারে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

এর মধ্যে একটি বিজিবি ক্যাম্পসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আছে প্রায় আড়াই হাজারের মতো।

আক্ষেপ নিয়ে স্থানীয়রা জানান, সরকার যায়, সরকার আসে। কিন্তু দুঃখের বিষয় স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এ নদীতে নির্মাণ হয়নি সেতু। একমাত্র কলাগাছের ভেলাই ভরসা।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ৬টি গ্রামে ৫ হাজার লোকের বাস। প্রতিদিন একটি হাইস্কুল ও দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী যাতায়াত করে।

পল্লি চিকিৎসক বিশ্বজিৎ হাজং বলেন, ‘চিকিৎসাসেবা দিতে রাত-দিন এই নদী পার হতে হয়। ভেলা না থাকলে সাঁতার কেটে পার হই। আমাদের এ দুর্ভোগ যেন দেখার কেউ নেই।’

গ্রামবাসী জানান, অনেক সময় ভেলা না থাকলে সাঁতার কেটে পার হতে হয়। শুকনো মৌসুমে যেমন তেমন, বর্ষায় ভোগান্তি বেড়ে যায় কয়েক গুণ। পারাপারের সময় অনেক শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে যায়। তখন বই, খাতা নষ্ট ও কাপড় ভিজে যায়। দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও রূপেশ্বরী ছড়া নদীতে একটি সেতু নির্মাণ করা যায়নি। যেখানে সরকার উন্নয়নের মহাসড়কে; সেই দেশে বসবাস করে ভেলায় পার হতে হচ্ছে। সেতু নির্মাণে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি।

কাইদাকোনা গ্রামের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেঘলা মানকিং বলে, ‘ঝুঁকি নিয়ে ভেলা দিয়ে নদী পার হই। ভেলা থেকে পড়ে গেলে বই, খাতা ভিজে যায়। আর স্কুলে যাওয়া হয় না। স্রোত বেশি হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। আমরা এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই।’

ভোলাগঞ্জ সর্বজনীন উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল কাদির বলেন, ‘আমি নিজেও শিক্ষার্থীদের ভেলা দিয়ে নদী পার করেছি। যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটতে পারে। আমরা এই নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানাই।’

মাটিয়ারবন্দ বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েক সুবেদার মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘সীমান্ত সুরক্ষার জন্য বৃষ্টি হলে নদীতে সেতু না থাকায় আমাদের টহল জোরদার করতে পারি না। কলাগাছের ভেলা দিয়ে নদী পার হতে হয়। জরুরি একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানাই।’

বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর নবী তালুকদার বলেন, ‘এই নদীর ওপর এলাকার লোকজন নিজস্ব অর্থায়নে একটি বাঁশের ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করে। কিন্তু তা টেকসই হয়নি। এ বছরও নির্মাণ করতে ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।’

উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফ উল্লাহ খান বলেন, এই নদীতে একটি সেতু তৈরির প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন পেলে কার্যক্রম শুরু হবে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ‘বর্ষাতে না হলেও আগামী হেমন্তে ওই নদীতে একটি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত