বিভুরঞ্জন সরকার
লেখার মতো একাধিক বিষয় আছে। একবার ভেবেছিলাম, পদ্মা সেতু উদ্বোধন-পরবর্তী উন্মাদনা নিয়ে কিছু লিখি। আবার মনে হলো, না, শিক্ষকদের হেনস্তা করা নিয়ে কড়া ভাষায় লেখাই উত্তম হবে। লিখতে বসে মনে হলো, আরে শিক্ষা তো আমার ক্ষেত্র নয়। শিক্ষার সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁরাই লিখুন শিক্ষার বেহাল অবস্থা নিয়ে। তাহলে আমি কী লিখি? সংসদের বাজেট অধিবেশন কেবলই শেষ হয়েছে। একবার সংসদ অধিবেশনে ঢুঁ মেরে আসলে মন্দ হয় না। সংসদ নিয়ে লেখারও সমস্যা আছে। সংসদে তো আর এক দল নেই। কয়েকটি দলের প্রতিনিধিত্ব আছে। আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য থাকলেও বিএনপির হাতে গোনা কয়েকজন সদস্য হলেও এবং তাঁরা কম সময় পেলেও যা বলেন তাতে কম ঝাঁজ থাকে না; বিশেষ করে হারুনুর রশিদ ও রুমিন ফারহানা তো মুখ খুললে যেন কথার তুবড়ি ছোটান। সংসদে বিরোধী দল হলো জাতীয় পার্টি। কিন্তু তারা সরকারের সঙ্গে সমঝোতার নীতি থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে না আসায় অনেক কিছু বলতে চেয়েও না বলাই থাকে বেশি। তারপরও সংসদ একেবারে ঢিমেতালে চলছে না। মাঝেমধ্যেই কারও না কারও কণ্ঠে ঘুমভাঙানিয়া গান যে শোনা যায় তা-ই বা কম কি!
সংসদের বাজেট অধিবেশনের শেষ দিন কিছু সময়ের জন্য অধিবেশন কক্ষে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল। নির্বাচন কমিশনের জন্য বাজেট বরাদ্দ নিয়ে আলোচনার সময় ওই বরাদ্দ না দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যরা বলেছেন, গত ১০ বছরে নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করে না। নির্বাচন করে প্রশাসন। তাই বরাদ্দ বাড়ালে বাড়াতে হবে পুলিশের, প্রশাসনের।
বিএনপির এমপিরা এটাও বলেছেন যে সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে কোনোভাবেই সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাঁরা বলেছেন, একসময় আওয়ামী লীগ বলত, আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এখন বিএনপিকে ছাড়া কি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে? হবে না।
বিএনপি ছাড়া নির্বাচনের প্রশ্ন কেন আসছে? কারণ, বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, তারা বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি। এর মধ্যে নির্বাচনে বড় প্রভাব রাখা দল মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের কিছু ভোটব্যাংক থাকলেও জামায়াত এখন আর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নয়। সে জন্য এটা বলা হয় যে নির্বাচনে ৩৬টি দল অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি যদি নির্বাচন থেকে বাইরে থাকে, তাহলেও আমাদের দেশে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা হবে না। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপিকে বাইরে রেখে ভোট হলে তাকে সুষ্ঠুও বলা হবে না। কিন্তু এই দুই দলের পারস্পরিক সম্পর্ক এখন এমন যে তাদের একমত হয়ে কিছু করা কঠিন। বিএনপি চায় একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে (একসময় যেটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল) নির্বাচন। কিন্তু বিএনপির এই চাওয়া নাকচ করে দিয়ে সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘এই সংসদে দাঁড়িয়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের এই রায়ের এক সুতাও বাইরে সরকার যাবে না। কারণ বর্তমান সরকার আইনে বিশ্বাস করে। আইনের শাসনে বিশ্বাস করে।’
বিএনপিও তাদের বক্তব্যে ‘দ্ব্যর্থহীন’ কণ্ঠেই বলছে। তাহলে এই বিপরীতমুখী অবস্থান দূর করার উপায় কী? সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি বিএনপির যে অনাস্থা, তা কীভাবে কাটানো যাবে? নির্বাচনকালীন সরকার-সমস্যার সমাধান না করে এখন আবার সামনে আনা হয়েছে ইভিএম বিতর্ক। বিএনপির আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর না করে নির্বাচন কমিশন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোট করার বিষয়ে কমিশনে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে। দলগুলোর মতামত নিয়েছে।
ইভিএম নিয়ে আলোচনার জন্য নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ না নেওয়া ১১টি দল হলো বিএনপি, সিপিবি, বাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। এর মধ্যে শুরু থেকেই বিএনপি একই কথা বলে আসছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এই কমিশন যা করবে বিএনপি তারই বিরোধিতা করবে। এই বিরোধিতার ধারাবাহিকতায় বিএনপি ইভিএমেরও বিরোধিতা করে আসছে।
ইভিএমের যাঁরা বিরোধী, তাঁরা এটাকে একটি ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থা উল্লেখ করে বলছেন, এর মাধ্যমে একজন ভোটার তাঁর পছন্দের প্রতীকে ভোট দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারে না। তা ছাড়া, ইভিএমে খুব সহজেই জালিয়াতির মাধ্যমে ফলাফল পরিবর্তন করার অনেক ‘মেকানিজম’ রয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। এই পদ্ধতি এখনো সব মানুষের কাছে পরিচিত নয় বলেও কেউ কেউ এর বিরোধিতা করছেন। ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সন্দেহ ও অবিশ্বাস থেকেও মনে করা হচ্ছে ইভিএম স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘ভোট চুরির বিশ্বস্ত যন্ত্র’।
কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট গ্রহণের পক্ষে। ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায়ও বিষয়টি স্পষ্ট করেছে দলটি। আওয়ামী লীগের এই মনোভাবের সঙ্গে প্রায় প্রশ্নহীনভাবে একমত পোষণ করেছে ১৪-দলীয় জোটভুক্ত ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল ও গণতন্ত্রী পার্টি। অন্যরা ইভিএম নিয়ে কম-বেশি সংশয়-সন্দেহ, আস্থাহীনতা ও অবিশ্বাসের কথা বলেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা ৩০০ আসনেই ইভিএম চাই। মন থেকে চাই। চেতনা থেকে চাই।’ সংসদের ৩০০ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করতে ইসি কতটা সক্ষম—এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটা তাদের (ইসি) এখতিয়ার।’ওবায়দুল কাদের বলেন, ইসির এখন দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে, যা দিয়ে ৩১ শতাংশ কেন্দ্রে ভোট করা সম্ভব। আগামী নির্বাচনে ইভিএমের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি
করার জন্য ইসির প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরও বলেছেন, আওয়ামী লীগ মনে করে, ইভিএমসহ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার কারণে সব কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বেড়েছে। ইভিএমের কারণে জালিয়াতি ও ভোট চুরি বন্ধ হয়েছে। ইভিএম পদ্ধতি জনগণের কাছে জনপ্রিয় ও সবার ব্যবহারযোগ্য করার
লক্ষ্যে ইসিকে এখন থেকেই প্রচার-প্রচারণার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতেও আহ্বান জানান তিনি।
ইভিএম পদ্ধতিতে কোনো আপত্তি নেই উল্লেখ করে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে সব কটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা উচিত। ইভিএম বিষয়ে যেসব প্রশ্ন আছে, তা নিয়ে পৃথকভাবে আলোচনাও হওয়া দরকার।
প্রযুক্তি হিসেবে ইভিএম উন্নত পদ্ধতি হলেও মানুষ এই যন্ত্র ব্যবহার করে ভোট দিতে পারবে কি না, সেই প্রশ্ন তুলে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব আব্দুল মান্নান বলেছেন, সারা দেশের সব ভোটকেন্দ্রের সব বুথে ইভিএম সরবরাহ ও তা নিয়ন্ত্রণ ইসি করতে পারবে কি না, তা নিয়েও নিজের সংশয়ের কথা তুলে ধরেছেন।
নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলেও ইসিকে দেওয়া এক চিঠিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বলেছে, ইভিএম এখনো বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেনি। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমে ভোটদান পদ্ধতির বিরোধিতা করেছে।
ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি না, তা পর্যালোচনা করবে ইসি। ইসির সামর্থ্য কতটা রয়েছে, সেটা দেখা হবে। আদৌ ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি না বা সম্পূর্ণ কিংবা অর্ধেক আসনে ব্যবহার হবে কি না, সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে।
সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে মানুষের সন্দেহ, সংশয়, অবিশ্বাস, আস্থাহীনতা দূর করার উপায় নিয়ে ভাবতে হবে অবশ্যই।নির্বাচনের সময় যাঁর ক্ষমতা ও শক্তি বেশি, লোকসংখ্যা বেশি, তাঁকে কিছুতেই রোধ করা যায় না বলে মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বাজেট অধিবেশনের শেষ দিনে বলেছেন, ‘মুসলিম লীগ চেষ্টা করেছিল সত্তর সালে। খাজা খয়ের উদ্দিন দাঁড়িয়েছিল, আমি সেই সেন্টারের দায়িত্বে ছিলাম। বহু চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ভোট দিতে পারে নাই। কারণ, আমাদের সক্ষমতা বেশি ছিল।’
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, ‘নির্বাচনে যদি সক্ষমতা নিয়ে না দাঁড়াতে পারে, প্রতিদ্বন্দ্বী যদি সমকক্ষ না হয়, ভোট হয় না। এতে কেউ হারতে চায় না। এটা যুদ্ধক্ষেত্র, এখানে কোনো এথিকস মানে না। যে যেভাবে পারে জিততে চায়।’ শুধু কমিশনের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেওয়া সঠিক নয় উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেছেন, সব কমিশনই সরকারের গঠিত, সরকারের অধীনে কাজ করে। রাজনৈতিক দল না চাইলে কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
কাজী ফিরোজ রশীদ একবারে মন্দ বলেননি। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় হিসেবে ইভিএম নিয়ে বিতর্কে না জড়িয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়টি ভাবা উচিত। মনে রাখতে হবে, যারা ইভিএমে প্রভাব খাটাবে, ব্যালটেও তারা প্রভাব খাটাতে পারে। লেখাটি শেষ করতে চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে। পদ্মা সেতুর ব্যয় যেকোনো বিচারে সাশ্রয়ী উল্লেখ করে জাতীয় সংসদে তিনি বলেছেন, ‘সমালোচনাকারীরা নিজ দেশের শক্তি ও মানুষের সাহস সম্পর্কে অজ্ঞ।’রাজনৈতিক নেতাদের দেশের শক্তি ও মানুষের সাহস সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি।
বিভুরঞ্জন সরকার, সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
লেখার মতো একাধিক বিষয় আছে। একবার ভেবেছিলাম, পদ্মা সেতু উদ্বোধন-পরবর্তী উন্মাদনা নিয়ে কিছু লিখি। আবার মনে হলো, না, শিক্ষকদের হেনস্তা করা নিয়ে কড়া ভাষায় লেখাই উত্তম হবে। লিখতে বসে মনে হলো, আরে শিক্ষা তো আমার ক্ষেত্র নয়। শিক্ষার সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁরাই লিখুন শিক্ষার বেহাল অবস্থা নিয়ে। তাহলে আমি কী লিখি? সংসদের বাজেট অধিবেশন কেবলই শেষ হয়েছে। একবার সংসদ অধিবেশনে ঢুঁ মেরে আসলে মন্দ হয় না। সংসদ নিয়ে লেখারও সমস্যা আছে। সংসদে তো আর এক দল নেই। কয়েকটি দলের প্রতিনিধিত্ব আছে। আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য থাকলেও বিএনপির হাতে গোনা কয়েকজন সদস্য হলেও এবং তাঁরা কম সময় পেলেও যা বলেন তাতে কম ঝাঁজ থাকে না; বিশেষ করে হারুনুর রশিদ ও রুমিন ফারহানা তো মুখ খুললে যেন কথার তুবড়ি ছোটান। সংসদে বিরোধী দল হলো জাতীয় পার্টি। কিন্তু তারা সরকারের সঙ্গে সমঝোতার নীতি থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে না আসায় অনেক কিছু বলতে চেয়েও না বলাই থাকে বেশি। তারপরও সংসদ একেবারে ঢিমেতালে চলছে না। মাঝেমধ্যেই কারও না কারও কণ্ঠে ঘুমভাঙানিয়া গান যে শোনা যায় তা-ই বা কম কি!
সংসদের বাজেট অধিবেশনের শেষ দিন কিছু সময়ের জন্য অধিবেশন কক্ষে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল। নির্বাচন কমিশনের জন্য বাজেট বরাদ্দ নিয়ে আলোচনার সময় ওই বরাদ্দ না দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যরা বলেছেন, গত ১০ বছরে নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করে না। নির্বাচন করে প্রশাসন। তাই বরাদ্দ বাড়ালে বাড়াতে হবে পুলিশের, প্রশাসনের।
বিএনপির এমপিরা এটাও বলেছেন যে সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে কোনোভাবেই সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাঁরা বলেছেন, একসময় আওয়ামী লীগ বলত, আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এখন বিএনপিকে ছাড়া কি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে? হবে না।
বিএনপি ছাড়া নির্বাচনের প্রশ্ন কেন আসছে? কারণ, বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, তারা বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি। এর মধ্যে নির্বাচনে বড় প্রভাব রাখা দল মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের কিছু ভোটব্যাংক থাকলেও জামায়াত এখন আর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নয়। সে জন্য এটা বলা হয় যে নির্বাচনে ৩৬টি দল অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি যদি নির্বাচন থেকে বাইরে থাকে, তাহলেও আমাদের দেশে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা হবে না। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপিকে বাইরে রেখে ভোট হলে তাকে সুষ্ঠুও বলা হবে না। কিন্তু এই দুই দলের পারস্পরিক সম্পর্ক এখন এমন যে তাদের একমত হয়ে কিছু করা কঠিন। বিএনপি চায় একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে (একসময় যেটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল) নির্বাচন। কিন্তু বিএনপির এই চাওয়া নাকচ করে দিয়ে সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘এই সংসদে দাঁড়িয়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের এই রায়ের এক সুতাও বাইরে সরকার যাবে না। কারণ বর্তমান সরকার আইনে বিশ্বাস করে। আইনের শাসনে বিশ্বাস করে।’
বিএনপিও তাদের বক্তব্যে ‘দ্ব্যর্থহীন’ কণ্ঠেই বলছে। তাহলে এই বিপরীতমুখী অবস্থান দূর করার উপায় কী? সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি বিএনপির যে অনাস্থা, তা কীভাবে কাটানো যাবে? নির্বাচনকালীন সরকার-সমস্যার সমাধান না করে এখন আবার সামনে আনা হয়েছে ইভিএম বিতর্ক। বিএনপির আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর না করে নির্বাচন কমিশন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোট করার বিষয়ে কমিশনে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে। দলগুলোর মতামত নিয়েছে।
ইভিএম নিয়ে আলোচনার জন্য নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ না নেওয়া ১১টি দল হলো বিএনপি, সিপিবি, বাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। এর মধ্যে শুরু থেকেই বিএনপি একই কথা বলে আসছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এই কমিশন যা করবে বিএনপি তারই বিরোধিতা করবে। এই বিরোধিতার ধারাবাহিকতায় বিএনপি ইভিএমেরও বিরোধিতা করে আসছে।
ইভিএমের যাঁরা বিরোধী, তাঁরা এটাকে একটি ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থা উল্লেখ করে বলছেন, এর মাধ্যমে একজন ভোটার তাঁর পছন্দের প্রতীকে ভোট দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারে না। তা ছাড়া, ইভিএমে খুব সহজেই জালিয়াতির মাধ্যমে ফলাফল পরিবর্তন করার অনেক ‘মেকানিজম’ রয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। এই পদ্ধতি এখনো সব মানুষের কাছে পরিচিত নয় বলেও কেউ কেউ এর বিরোধিতা করছেন। ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সন্দেহ ও অবিশ্বাস থেকেও মনে করা হচ্ছে ইভিএম স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘ভোট চুরির বিশ্বস্ত যন্ত্র’।
কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট গ্রহণের পক্ষে। ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায়ও বিষয়টি স্পষ্ট করেছে দলটি। আওয়ামী লীগের এই মনোভাবের সঙ্গে প্রায় প্রশ্নহীনভাবে একমত পোষণ করেছে ১৪-দলীয় জোটভুক্ত ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল ও গণতন্ত্রী পার্টি। অন্যরা ইভিএম নিয়ে কম-বেশি সংশয়-সন্দেহ, আস্থাহীনতা ও অবিশ্বাসের কথা বলেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা ৩০০ আসনেই ইভিএম চাই। মন থেকে চাই। চেতনা থেকে চাই।’ সংসদের ৩০০ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করতে ইসি কতটা সক্ষম—এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটা তাদের (ইসি) এখতিয়ার।’ওবায়দুল কাদের বলেন, ইসির এখন দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে, যা দিয়ে ৩১ শতাংশ কেন্দ্রে ভোট করা সম্ভব। আগামী নির্বাচনে ইভিএমের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি
করার জন্য ইসির প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরও বলেছেন, আওয়ামী লীগ মনে করে, ইভিএমসহ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার কারণে সব কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বেড়েছে। ইভিএমের কারণে জালিয়াতি ও ভোট চুরি বন্ধ হয়েছে। ইভিএম পদ্ধতি জনগণের কাছে জনপ্রিয় ও সবার ব্যবহারযোগ্য করার
লক্ষ্যে ইসিকে এখন থেকেই প্রচার-প্রচারণার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতেও আহ্বান জানান তিনি।
ইভিএম পদ্ধতিতে কোনো আপত্তি নেই উল্লেখ করে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে সব কটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা উচিত। ইভিএম বিষয়ে যেসব প্রশ্ন আছে, তা নিয়ে পৃথকভাবে আলোচনাও হওয়া দরকার।
প্রযুক্তি হিসেবে ইভিএম উন্নত পদ্ধতি হলেও মানুষ এই যন্ত্র ব্যবহার করে ভোট দিতে পারবে কি না, সেই প্রশ্ন তুলে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব আব্দুল মান্নান বলেছেন, সারা দেশের সব ভোটকেন্দ্রের সব বুথে ইভিএম সরবরাহ ও তা নিয়ন্ত্রণ ইসি করতে পারবে কি না, তা নিয়েও নিজের সংশয়ের কথা তুলে ধরেছেন।
নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলেও ইসিকে দেওয়া এক চিঠিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বলেছে, ইভিএম এখনো বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেনি। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমে ভোটদান পদ্ধতির বিরোধিতা করেছে।
ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি না, তা পর্যালোচনা করবে ইসি। ইসির সামর্থ্য কতটা রয়েছে, সেটা দেখা হবে। আদৌ ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি না বা সম্পূর্ণ কিংবা অর্ধেক আসনে ব্যবহার হবে কি না, সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে।
সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে মানুষের সন্দেহ, সংশয়, অবিশ্বাস, আস্থাহীনতা দূর করার উপায় নিয়ে ভাবতে হবে অবশ্যই।নির্বাচনের সময় যাঁর ক্ষমতা ও শক্তি বেশি, লোকসংখ্যা বেশি, তাঁকে কিছুতেই রোধ করা যায় না বলে মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বাজেট অধিবেশনের শেষ দিনে বলেছেন, ‘মুসলিম লীগ চেষ্টা করেছিল সত্তর সালে। খাজা খয়ের উদ্দিন দাঁড়িয়েছিল, আমি সেই সেন্টারের দায়িত্বে ছিলাম। বহু চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ভোট দিতে পারে নাই। কারণ, আমাদের সক্ষমতা বেশি ছিল।’
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, ‘নির্বাচনে যদি সক্ষমতা নিয়ে না দাঁড়াতে পারে, প্রতিদ্বন্দ্বী যদি সমকক্ষ না হয়, ভোট হয় না। এতে কেউ হারতে চায় না। এটা যুদ্ধক্ষেত্র, এখানে কোনো এথিকস মানে না। যে যেভাবে পারে জিততে চায়।’ শুধু কমিশনের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেওয়া সঠিক নয় উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেছেন, সব কমিশনই সরকারের গঠিত, সরকারের অধীনে কাজ করে। রাজনৈতিক দল না চাইলে কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
কাজী ফিরোজ রশীদ একবারে মন্দ বলেননি। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় হিসেবে ইভিএম নিয়ে বিতর্কে না জড়িয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়টি ভাবা উচিত। মনে রাখতে হবে, যারা ইভিএমে প্রভাব খাটাবে, ব্যালটেও তারা প্রভাব খাটাতে পারে। লেখাটি শেষ করতে চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে। পদ্মা সেতুর ব্যয় যেকোনো বিচারে সাশ্রয়ী উল্লেখ করে জাতীয় সংসদে তিনি বলেছেন, ‘সমালোচনাকারীরা নিজ দেশের শক্তি ও মানুষের সাহস সম্পর্কে অজ্ঞ।’রাজনৈতিক নেতাদের দেশের শক্তি ও মানুষের সাহস সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি।
বিভুরঞ্জন সরকার, সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ দিন আগে