ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭: ৫৪

ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজির অভিযোগ নতুন নয়। নেত্রকোনায় অটোরিকশাচালকেরা যখন এই হয়রানি বন্ধের জন্য সড়ক অবরোধ করেছিলেন, তখন বোঝা গিয়েছিল তাঁদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। নইলে ট্রাফিক পুলিশকে অল্পবিস্তর ঘুষ দিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, সেভাবেই টিকে থাকে অনিয়মগুলো। চকচকে আইনে সাধারণ মানুষের যে নিরাপত্তা, অধিকার ইত্যাদির বয়ান আছে, তার সঙ্গে যাপিত জীবনকে মেলানো যাবে না।

যাদের হাতে ক্ষমতা থাকে, তারা তার ব্যবহার না করে অপব্যবহার করে যখন, তখনই সংকট তৈরি হয়। অনিয়ম গড়ে উঠতে শুরু করলে একসময় সেটাকেই নিয়ম বলে মনে হয়। আর তখন দুর্নীতি, ঘুষ বাড়তে থাকে। আমাদের সরকারি অফিসগুলোতে স্বাভাবিকভাবে প্রক্রিয়া মাফিক কাজ হয়েছে—এমন নজির কি খুঁজে পাওয়া যায়? অন্য কথা বাদ থাক, খোদ সরকারি চাকরি শেষে নিজের পেনশন পাওয়ার জন্য কতবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে ধরনা দিতে হয়, সে রকম হাজারটা গল্প কি আমাদের জানা নেই? কাক কাকের মাংস খায় না, কিন্তু সরকারি আমলা তার ‘সাবেক’ কলিগকেও ছাড় দেন না।

নেত্রকোনার ঘটনাটি খুবই সরল। পুলিশের দুই কর্মকর্তা তাঁদের ইচ্ছেমতো চাঁদাবাজি করে চলছিলেন। কেন তাঁদের চাঁদা দিতে হবে, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। রাস্তায় অটোরিকশা নিয়ে বের হলেই বিদ্যুতের গতিতে তাঁরা হাজির হতেন। চাঁদা দেওয়া না হলে নানাভাবে নির্যাতন চালাতেন। বহুদিন ধরেই অটোরিকশাচালকদের ওপর চাঁদাবাজির ডান্ডা রেখে আখের গুছিয়ে নিচ্ছিলেন এ দুই ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা। আমাদের ধারণা, মৃদু গোপন চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কেউই হয়তো মুখ খুলতেন না, এটাকে নিয়তি বলে মেনে নিতেন, যদি না এ দুই কর্মকর্তা চাঁদাবাজি নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা করতে গিয়ে মারধরের ঘটনা না ঘটাতেন। সংঘবদ্ধ মানুষ এক হলে যে বড় চাঁদাবাজেরাও থমকে দাঁড়ায়, তার নজির হলো এ দুই কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ নিয়ে এক তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে।

কিন্তু যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়নি, তা হলো এ দুই চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে আসলেই কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে? নিলে কেমন হবে সেই ব্যবস্থা? শাস্তি শেষ হলেই আবার ডিউটি পালনের নামে তাঁরা দুজন চাঁদাবাজি শুরু করবেন না, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? দুই কর্মকর্তার চাঁদাবাজির কথা উল্লেখ করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বারবার জানানো সত্ত্বেও তাঁরা তো এদের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত করেননি, শাস্তি দেননি। এখন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পড়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের টনক নড়ল। তাহলে কি চাঁদাবাজির সঙ্গে মারপিট যোগ না হওয়া পর্যন্ত চাঁদাবাজি বন্ধ হবে না?

এসব ব্যাপারে পুলিশ বিভাগের স্বচ্ছতা খুব জরুরি, কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে তার প্রয়োগ খুব একটা দেখা যায় না। পুলিশ যে জনগণ তথা সব মানুষের বন্ধু, সেটা মুখে বললে হবে না, কাজে প্রমাণ দিতে হবে। দেখা যাক এ দুই কর্মকর্তাকে নিয়ে পুলিশ বিভাগ কী করে!

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত