চুয়াডাঙ্গা-২: দুই দলে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি

মেহেরাব্বিন সানভী, চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৩, ১৩: ১০

জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন চুয়াডাঙ্গা-২। দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলা এবং চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ, বেগমপুর ও গড়াইটুপি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে একসময় দাপট ছিল বিএনপি ও জামায়াতের। তবে ২০০৮ সালে এখানে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। এর পর থেকে এ আসনে পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলী আজগার টগর। সুষ্ঠু ভোট হলে অবশ্য আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলছেন স্থানীয় ভোটাররা। এ ছাড়া বড় ফ্যাক্টর হতে পারে জামায়াতও।

তবে কেউ কেউ বলছেন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সমঝোতা না হলে এ আসন আবার আওয়ামী লীগের দখলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

সম্প্রতি সংসদীয় এলাকাটির বিভিন্ন স্থান ঘুরে জানা গেছে, এ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সহসভাপতি আলী আজগার টগর। সমন্বয় করে অংশ নিচ্ছেন দামুড়হুদা, জীবননগর ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিন ইউনিয়নের দলীয়, সরকারি ও কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠানে। এলাকায় তৈরি করেছেন নিজস্ব বলয়। এলাকায় যথেষ্ট উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন তিনি। তবে এখানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে কোন্দল। এটা তাঁর জন্য নেতিবাচক ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করতে পারে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে এমপি আলী আজগার টগরকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রের নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সদস্য হাশেম রেজা। ভোটের মাঠে হাশেম রেজা খুব একটা সক্রিয় নন। তবে আজাদুল ইসলাম আজাদ ২০ বছর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। দলীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বিভিন্ন এলাকায় কর্মিসভা ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বেশ ভালো। ৫৫ বছর ধরে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। এলাকায় একজন সৎ রাজনীতিবিদ হিসেবেই পরিচিতি তাঁর।

জানতে চাইলে আজাদুল ইসলাম আজাদ বলেন, ‘২০ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা সৎ ও যোগ্যদের অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। আমি আশাবাদী, এবার দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’ 

চুয়াডাঙ্গা-২ বরাবরই বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় দলটি। বিএনপি নেতা প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান তরফদার টিপু, সাবেক সংসদ সদস্য মোজাম্মেল হকের ছেলে শিল্পপতি আতিকুল হক মিথুন ও দর্শনা পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহমুদুর রহমান তরফদার শাওন নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ায় এ আসনে এখন বিএনপির একক প্রার্থী বলা যায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির উপ-কোষাধ্যক্ষ মাহমুদ হাসান খান বাবু (বাবু খান)। দলীয় কোন্দল থাকলেও এখন নেতা-কর্মীরা প্রায় সবাই রয়েছেন তাঁর অধীনে। মাঠ গোছাতে নিয়মিত সভা, সমাবেশ ও কেন্দ্র ঘোষিত আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। তৃণমূলেও তাঁর ব্যাপক সুনাম রয়েছে। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন তিনি। বিএনপির প্রার্থী বাবু খান ক্ষমতার বাইরে থেকেও এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে বেশ জনপ্রিয় অবস্থানে রয়েছেন। এমপি হলে নানা রকম উন্নয়নের আশ্বাসও দিচ্ছেন তিনি।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মোকারম হোসেন বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে চুয়াডাঙ্গা-২ আসন আবার আগের মতো বিএনপির হবে। এ আসনে বিএনপির অবস্থান সব সময়ই শক্ত। আমাদের নেতা বাবু খান দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছেন।’

অন্যদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী জেলা আমির মাওলানা রুহুল আমিন। তিনি দলীয় নির্দেশনা মেনে নিচ্ছেন নির্বাচনের প্রস্তুতি। দলীয় কর্মীদের চাঙা রাখতে তিনি মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।

রুহুল আমিন বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ১৯৯১ সালের মতো এ আসনে আবার আমরা জয়লাভ করব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত