মুজিব শতবর্ষে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তোপধ্বনি, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শোভাযাত্রা, কুচকাওয়াজ, শারীরিক কসরত, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে বিজয় দিবস উদ্‌যাপন করা হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় নানা আয়োজনে মহান বিজয় দিবস পালিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা ৩৮ মিনিটে কালেক্টরেট চত্বরে ৫০বার তোপধ্বনির মাধ্যমে এ দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাইদুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার (এসপি) খাইরুল আলম এর নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, গণপূর্ত বিভাগ, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, ইসলামিয়া কলেজসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ শ্রমজীবী-পেশাজীবী সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে বীর শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়।

পরে আনন্দ শোভাযাত্রা, জেলা স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজসহ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদ্‌যাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে জেলার সব উপজেলাতে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদ্‌যাপিত হয়েছে।

ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মহান বিজয় দিবস। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় শহরের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এ সময় স্মৃতি সৌধে ঢল নামে হাজার হাজার মানুষের। প্রথমে জেলা প্রশাসন এরপর একে একে জেলা পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক ও সামাজিক–সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে স্মৃতি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সকাল ৮টার দিকে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে পতাকা উত্তোলন, পায়রা অবমুক্তকরণ ও বেলুন উড়িয়ে বিজয় দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের উদ্বোধন করা হয়।

সকাল ১১টায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পরে বিকেলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব বর্ষ উপলক্ষে শপথবাক্য পাঠ করা হয়। বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এ শপথবাক্য পাঠ করান।

মুজিবনগর (মেহেরপুর): মেহেরপুরের মুজিবনগরে গতকাল সারা দিন ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন করা হয়েছে। এদিন ভোর ছয়টায় ঐতিহাসিক মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবসের সূচনা করা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল সাড়ে ৬ টায় মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন সরকার এর নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে উপজেলা প্রশাসন। মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদি রাসেলের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানায় মুজিবনগর থানা–পুলিশ। পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগ, অন্যান্য রাজনৈতিক দলসহ সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে সকাল সাড়ে ৮টার সময় উপজেলা পরিষদ চত্বরে আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দীন বিশ্বাস, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন সরকার, মুজিবনগর থানা অফিসার ইনচার্জ মেহেদি রাসেল, এর পর বিজয় দিবস উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন সরকার এর উদ্বোধনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কুচকাওয়াজ ও শরীর চর্চা প্রদর্শন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উপজেলা পরিষদ চত্বরে কুচকাওয়াজ ও শরীরচর্চা প্রদর্শনে অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, বিএনসিসি, আনসার ভিডিপি, বাংলাদেশ স্কাউটস এবং স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে দশটার সময় সকল স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাড়ে ১১ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পরে ক্রীড়া প্রতিযোগী বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

এ ছাড়া বাদ জোহর জাতির শান্তি, অগ্রগতি ও মঙ্গল কামনা করে উপজেলার সকল মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং সুবিধা মতো সময়ে মন্দির গির্জা ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা এবং দুপুরে উপজেলার সকল এতিমখানা ও হাসপাতালে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বিকেল তিনটায় শুরু হয় শৌখিন ফুটবল প্রতিযোগিতা, এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় সকল সরকারি ও বেসরকারি ভবনসমূহে আলোকসজ্জার মধ্যে দিয়ে বিজয় দিবসের দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় যথাযথ মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন করা হয়েছে। ভোর ৬টায় স্থানীয় শহীদ হাসান চত্বরে ৫০ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। অন্যান্য সময় ৩১ বার তোপধ্বনি হলেও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবার তোপধ্বনি ৫০ বার দেওয়া হয়।

এরপর সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে শহীদ হাসান চত্বরের স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতীয় সংগীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. নজরুল ইসলাম সরকার ও পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জাহিদুল ইসলাম।

সকাল ৮টায় চুয়াডাঙ্গা পুরোনো স্টেডিয়ামে শুরু হয় কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান। এতে জেলা পুলিশ, আনসার, স্কাউটস, বিএনসিসি ও জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ সময় জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার জেলাবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা ডিসি সাহিত্য মঞ্চে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।