সাবেক এমপির দখলেই ১৪ বছর, রাজস্ব ফাঁকি

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১: ৪৪
Thumbnail image

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় অবস্থিত ডুগডুগি ও শিয়ালমারী পশুর হাট দুটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড়। টানা ১৪ বছর আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে ছিল হাট দুটি। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর দরপত্র আহ্বান করার কথা থাকলেও এই হাট দুটির ক্ষেত্রে তা হয়নি। উচ্চ আদালতের একটি রিটের বলে বছরের পর বছর রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে প্রভাবশালী ওই মহলটি। এতে প্রায় শতকোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। 

স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, খাস বন্দোবস্তের পাশাপাশি হাট দুটি উদ্ধারে সমাধানের পথ খুঁজছে স্থানীয় প্রশাসন। বর্তমানে মৌখিকভাবে হাট দুটি চালাচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। প্রতি সপ্তাহে ডুগডুগি হাটের জন্য ৪ লাখ ৮৬ হাজার এবং শিয়ালমারী হাটের জন্য ৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা করে সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছেন তাঁরা। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উভয় হাটের জন্য সপ্তাহে দিতেন মাত্র ২ লাখ টাকা করে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুটি হাটই সপ্তাহে এক দিন বসে। এক দিনের হাট দুটিতে লেনদেন হয় কয়েক লাখ টাকা। বিশেষ করে কোরবানির ঈদের আগে লেনদেনের পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যায়। অথচ হাট দুটির টেন্ডার হয়নি টানা ১৪ বছর। স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগের স্থানীয় সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগর টগর ও তাঁর লোকজন হাট দুটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। এতে হাট দখলে রাখা নেতাদের পকেট ভারী হলেও রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। 

অন্য ইজারাদারদের দাবি, সর্বশেষ ২০১০ সালে হাট দুটির টেন্ডার হয়েছিল। তখন দর উঠেছিল প্রায় তিন কোটি টাকা। হাট দুটির ইজারা পেয়েছিলেন সাবেক এমপি টগরের ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগের নেতা সোহরাব হোসেন ও ফরহাদ হোসেন। ইজারার নির্ধারিত সময় শেষ হলে লোকসানের কথা উল্লেখ করে অতিরিক্ত সময় চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন তাঁরা। রিটে ছয় মাস অতিরিক্ত সময় পান ইজারাদারেরা। রিটের পর স্থগিতাদেশ এবং শুরু হয় খাস কালেকশন। 

পরে টগর প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর রিট করে স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়িয়ে চলেছেন। 

জীবননগর উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, সবাই মিলে হাট দুটি পরিচালনা করা হতো। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর টগর বিএনপির লোকজনদের একেবারে বাদ দিয়ে দেন। ১৪ বছরে এই দুটি হাটে কত টাকা ক্ষতি হয়েছে, তা ক্যালকুলেটরে ধরবে না। আগে তাঁরা মাত্র ২ লাখ টাকা দিতেন, এখন আমরা ৫ লাখ টাকা দিচ্ছি।’ 

বিএনপির নেতা আবুল কালাম আরও বলেন, ‘৩০ বছর আমরা ইজারাদার হিসেবে হাট চালাতাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর আমাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর ১৭ বছর ৮ মাস হয়ে গেল, এই হাটের কোনো ডাক হয়নি। আমি মনে করি, যদি চুয়াডাঙ্গার হাটগুলোর ইজারা ঠিক হয়, তাহলে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব এখান থেকেই আসবে। সরকার পরিবর্তনের পর হাটটি পড়েই ছিল। আপাতত সরকারকে রাজস্ব দেওয়ার শর্তে মৌখিকভাবে হাট দুটি আমরা চালাচ্ছি।’ 

দামুড়হুদা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৭ বছর বিপুল রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার। এখন খাস কালেকশন করে প্রতি হাট থেকে ৫ লাখ টাকা রাজস্ব জমা দেওয়া হচ্ছে। 

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার বেশ কয়েকটি হাট-বাজার নিয়ে মামলা চলমান আছে। বিজ্ঞ আদালত থেকে যে জবাব চাওয়া হয়েছে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে সেই জবাব আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি। মামলা চলমান থাকার কারণে স্টে অর্ডার (স্থগিতাদেশ) দেওয়া আছে। মামলাগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত টেন্ডার বা ইজারা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে খাস কালেকশনের বিধান আছে। এ জন্য জেলা পর্যায়ের একটি কমিটি আছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে এই খাস কালেকশন কার্যক্রম চালানো একটু চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এটি যদি নিয়মিত ইজারার মধ্যে আনা যায়, তাহলে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া সম্ভব।

সরকারের স্বার্থে এটির আশু নিষ্পত্তি প্রয়োজন।’ দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলাগুলো আদালতে নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করছেন জেলা প্রশাসক। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত