কোনো রকমের পূর্বঘোষণা ছাড়াই সিএনজিচালিত অটোরিকশার সেই ১২ হাজার সিলিন্ডারের নিলাম প্রক্রিয়া ফের বাতিল করেছে চট্টগ্রাম বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত দিনে শিডিউল নিতে এসে না পেয়ে দরপত্র অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনাও ঘটেছে।

বিআরটিএ তথ্যে জানা গেছে, গত ২৭ অক্টোবর গ্যাস সিলিন্ডারগুলো নিলামে তোলার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৫ নভেম্বর এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি একটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়। এতে আগামী ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত দরপত্র শিডিউল ১ হাজার টাকায় সংগ্রহ করা ও ২৪ নভেম্বর দরপত্র খোলার কথা বলা হয়। তবে দরপত্র অংশগ্রহণকারীদের অনেকের অভিযোগ, নির্ধারিত সময়ে শিডিউল কিনতে গেলেও তাঁদের দেওয়া হয়নি।

এইচ এস করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী মো. শওকত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে সপ্তাহখানেক আগে বিআরটিএ অফিসে দরপত্র শিডিউল কিনতে গিয়েছিলাম। তখন বলা হয়েছিল, ২৩ নভেম্বর শিডিউল দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী গত মঙ্গলবার বিআরটিএ অফিসে যাই। কিন্তু শিডিউল নেই বলে আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।’ এ সময় বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে একপর্যায়ে দরপত্র আহ্বানকারী চট্টগ্রাম সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মো. শাহ আলম তাঁকে অফিস থেকে বের করে দেন বলে শওকত হোসেনের অভিযোগ। পরে কম্পিউটার থেকে একটা নোটিশ প্রিন্ট করে বাইরে টাঙিয়ে দেন কর্মকর্তারা। এতে জানানো হয়, অনিবার্য কারণ বশত গ্যাস সিলিন্ডার নিলামে বিক্রির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। হঠাৎ করে শিডিউল বিক্রি বন্ধের কারণ জানতে চাইলে ওই বিআরটিএ কর্মকর্তা শওকতসহ অন্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।

শওকত হোসেন বলেন, ‘পরে আমরা দরপত্র অংশগ্রহণকারীদের কয়েকজন উপপরিচালক (ডিডি) শফিকুজ্জামান ভূঞার কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে যাই। সেখানে আগে থেকেই শাহ আলম উপস্থিত ছিলেন। পরে ডিডি আমাদের বলেন, “দরপত্রের শিডিউল বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা পুনরায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করব।’ এতে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারবে বলেও আমাদের আশ্বস্ত করেন তিনি।’ এর আগে এই ঘটনাটির ভিডিওচিত্র ধারণ করায় শওকত হোসেনের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে শাহ আলম ছুড়ে ফেলেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

শওকতের অভিযোগ, আগের টেন্ডারেও নিজেদের লোকদের কাজ পাইয়ে দিতে গোপনে দরপত্রের শিডিউল বিক্রি করা হয়। পরে অনিয়মের অভিযোগে সেটি বাতিল হয়। এবারও একইভাবে শিডিউল বিক্রি না করে গোপনে নিজেদের লোকদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত শাহ আলমের সরকারি মোবাইল নম্বরে কল করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে দরপত্র আহ্বানের পর সম্প্রতি তিনি বলেছিলেন, ‘সিএনজি স্ক্র্যাপের পর সিলিন্ডারগুলো বিআরটিএতে যে অবস্থায় পড়ে ছিল, সে অবস্থায় নিলামে দেওয়া হচ্ছে।’

বিআরটিএ সূত্রে গেছে, ২০০১ সাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১৩ হাজার করে ২৬ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধন দেওয়া হয়। এসব গাড়ির মেয়াদ ১৫ বছর করে নির্ধারণ করা হয়। আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাওয়ায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চট্টগ্রামে ১৩ হাজার সিএনজি স্ক্র্যাপ করে নতুন করে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। নগরীতে ২০০১, ২০০০, ২০০৩ ও ২০০৪ মডেলের ১১ হাজার ৮২৯টি অটোরিকশার স্ক্র্যাপ সম্পন্ন হয়েছে। এসব অটোরিকশার মালিকদের অনুকূলে নতুন কেনা গাড়ির নিবন্ধন দিচ্ছে বিআরটিএ।

এসব সিলিন্ডার পরে নিলামে দেওয়ার জন্য একটি নামসর্বস্ব পত্রিকায় গত ২৪ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করে বিআরটিএ। গত ৭ সেপ্টেম্বর বিআরটিএ অফিস থেকে ৫০০ টাকা অফেরতযোগ্য মূল্যে দরপত্র শিডিউল ক্রয় এবং পরদিন ৮ সেপ্টেম্বর দরপত্র খোলা হয়। এতে দেখা যায়, মাত্র ৬টি দরপত্র জমা পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি সিলিন্ডারের দর দিয়েছেন ১৮৫ টাকা থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত।

ওই সময় ভুক্তভোগীরা জানান, পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে শিডিউল বিক্রিতে গড়িমসি করেন বিআরটিএ কিছু অসাধু কর্মকর্তা। অনেকেই দরপত্র নিতে এসে না পাওয়ার অভিযোগ করেন।

লোহা ব্যবসায়ীরা জানান, সিএনজি অটোরিকশার স্ক্র্যাপ করা একটি গ্যাস সিলিন্ডারে ১৭ কেজি লোহা আছে। প্রতি কেজি পুরোনো লোহা ৫০ টাকা দর হলে একটি সিলিন্ডারের দাম পড়ে দেড় হাজার টাকা।