তিস্তা সেচ প্রকল্প: পানিই নেই, যত খরচ খালে

মাসুদ পারভেজ রুবেল, ডিমলা (নীলফামারী)
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১: ০৯

কৃষিজমিতে সেচ সুবিধার স্বার্থে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে তিস্তা সেচ প্রকল্পের খালে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বছরে ৮০০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন বাড়বে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে এ অঞ্চলের ১০ লাখ মানুষের।

তবে কৃষক ও নদীবিষয়ক সংগঠনের নেতারা বলছেন, এক-দেড় বছর আগে মূল খালের যেসব শাখা সংস্কার করা হয়েছিল, পানির অভাবে সেগুলোর অনেক অংশ ইতিমধ্যে নষ্ট হয়েছে। তিস্তার পানি বণ্টনই যেখানে অনিশ্চিত, সেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে আবার খাল সংস্কার করলেও তা কাজে আসবে না। 

প্রকল্পের খাল যেসব এলাকার মধ্য দিয়ে গেছে সেগুলো ‘কমান্ড এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। ২০২১ সালে প্রকল্পের এই কমান্ড এলাকার সংস্কার ও সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালের এপ্রিলে তৃতীয় দফায় ভার্চুয়াল আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত হয় এ প্রকল্পের রূপরেখা। ১ হাজার ৪৫২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বরাদ্দের পর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় পাউবো।

তিস্তা ব্যারাজ থেকে শুরু হয়ে সেচ প্রকল্পের খাল নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর ও সদরে বিস্তৃত। অন্যদিকে রংপুরের গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ এবং দিনাজপুরের খানসামা ও চিরিরবন্দর মিলিয়ে মোট দৈর্ঘ্য ৭৬৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে পুরো অংশের পাড় শক্তিশালীকরণ করা হবে। এ ছাড়া ৭২ কিলোমিটারে সেচ পাইপ, পাড় রক্ষায় কংক্রিটের ব্লক বসবে ১০ দশমিক শূন্য ৮ কিলোমিটারে, বাইপাস সেচখাল নির্মাণ হবে ৭ দশমিক ১৩ কিলোমিটার।

২৭টি কালভার্ট নির্মাণ, ২৭০ হেক্টরে জলাধার পুনঃখনন, সাড়ে ৯ কিলোমিটার নালা পুনঃখনন, ৫২ কিলোমিটার পরিদর্শন রাস্তা মেরামত, ২০টি রেগুলেটর নির্মাণ ও ৮৭ হাজারের বেশি গাছ রোপণ করা হবে। 

এ পর্যন্ত কত অংশের কাজ শেষ হয়েছে, সে তথ্য জানাতে পারেনি পাউবো। সম্প্রতি ডিমলার সোনাখুলি, চাপানি এলাকা ঘুরে শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা যায়। তাঁরা খালের তলদেশ ঢালাই করছিলেন। ডালিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, ২০২৪ সালে সংস্কারকাজ শেষ হবে।

তখন ৭৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সেকেন্ডারি ও টারসিয়ারি সেচ ক্যানেলের মাধ্যমে ১ লাখ হেক্টর কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হবে। এতে প্রতিবছর অতিরিক্ত ১০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা যাবে। এ ছাড়া ভূগর্ভস্থ পানির স্তর, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রকল্প এলাকায় বসবাসরত মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থারও উন্নতি হবে। 

তবে ভিন্ন চিত্রের কথা বলছেন প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা। তিস্তায় স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ৫ হাজার কিউসেক থাকার কথা থাকলেও উজানে একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে কোনো কোনো সময় তা ৪০০ কিউসেকে নেমে আসে। তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, শুকনো মৌসুমে তিস্তা নদী শুকিয়ে বালুচর পড়ে মরুভূমির মতো হয়ে যাচ্ছে। নদীতে পানি না থাকায় তাঁরা আবাদ নিয়ে বেকায়দায় আছেন। পানির প্রবাহ নিশ্চিত না করায় বেশির ভাগ সেচনালা কোনো কাজেই আসছে না। 

সেচ প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ১৯৯০ সালে প্রথম দফায় কাজ শেষ হওয়ার পর নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ৮৪ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রকল্পটি চালু করা হলেও কখনোই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। এর মূল কারণ শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না থাকা। ফলে চড়া দামে ডিজেল কিংবা বিদ্যুৎ-চালিত সেচযন্ত্রের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে কৃষকদের। 

ডিমলার সাতজান এলাকার বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম জানান, ‘আমার জমি সেচনালার পাশে হলেও প্রয়োজনের সময় পানি পাই না। শ্যালো মেশিন ব্যবহার করে জমিতে সেচ দেওয়া লাগে।’ নীলফামারীর ইটাখোলা ডাঙ্গাপাড়া এলাকার আব্দুল গফুর জানান, শ্যালো মেশিন আর বৈদ্যুতিক সেচপাম্প ব্যবহার করায় অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়। ফলে ফসল আবাদ করে বেশি লাভ হয় না।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নদীবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, গত দুই যুগেও সেচের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি পানির অভাবে। সেখানে এই সেচখাল সংস্কার বা সম্প্রসারণের নামে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থ জলে যাচ্ছে কি না, সেটা ভেবে দেখা দরকার। উজানে ভারত নতুন করে খাল নির্মাণ করছে। ফলে পানি পাওয়ায় আরও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত