এনআইডি সার্ভার বিভ্রাট, দ্বিতীয় দিনেও ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০: ২৩

জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সার্ভার বিভ্রাটে গতকাল বুধবারও দিনভর ভোগান্তির শিকার হয়েছেন নাগরিকেরা। এদিন ব্যাংক, বিমাসহ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ১৭৪টি প্রতিষ্ঠান এনআইডির তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ পেয়েছেন। তবে নতুন ভোটার নিবন্ধন, সংশোধনসহ এনআইডির অন্যান্য সেবা পাননি সাধারণ নাগরিকেরা।

ইসি সূত্র বলেছে, নির্বাচন কমিশন নিজেদের কর্মকর্তাদের বার্তা দিয়েছিল, বুধবার বেলা ২টায় এনআইডি সার্ভার চালু হবে। কিন্তু গতকাল রাতেও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলেছে। আজ বৃহস্পতিবার এই সেবা পুরোদমে চালু হতে পারে।

আগাম ঘোষণা ছাড়াই গত মঙ্গলবার থেকে এনআইডির সার্ভার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন নাগরিকেরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম গতকাল নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সার্ভার কখনো শাটডাউন হয়ে যায়, কখনো শাটডাউন করতে হয়। এটা আগাম জানানো সম্ভব হয় না। ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেকোনো সময় শাটডাউন হতে পারে।

রক্ষণাবেক্ষণ নাকি সাইবার হামলার আশঙ্কায় এনআইডি সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে—এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে সচিব বলেন, এটি ১২ কোটি মানুষের ডেটাবেইস। এখানে সাইবার হামলার ঝুঁকি তো থাকবেই। যখন যে পরিস্থিতি আসবে, সে অনুযায়ী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার মূল্যবান একটা সম্পদ। সার্ভার প্রতিনিয়ত আপডেট করা হচ্ছে। এটা গতানুগতিক কাজ। আর এক দিন–দুদিনের জন্য সার্ভার সারা দুনিয়ায় বন্ধ হয়।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ইসির সার্ভার থেকে তথ্য নেওয়ার ব্যাপারে ১৭৪টি সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের চুক্তি রয়েছে। ওই চুক্তি অনুযায়ী তারা সাধারণ নাগরিকের এনআইডির তথ্য যাচাই করতে পারে। গতকাল সকাল থেকে এই সেবা চালু করেছে ইসি। কিন্তু সাধারণ মানুষের এনআইডিসংক্রান্ত সেবা গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চালু হয়নি। ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন, সার্ভার বন্ধ থাকার বিষয়ে অনেক নাগরিক জানেন না। তাঁরা সেবা পেতে কার্যালয়গুলোয় ভিড় জমিয়েছেন। সেবা না পেয়ে অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ইসি জাতীয় পরিচয়পত্র দেবে সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব বলেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনের নতুন আইন সংসদে পাস হলেও তা কার্যকর হবে সরকারের নির্ধারিত তারিখে। এর আগ পর্যন্ত জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশন দেবে। তিনি বলেন, যতক্ষণ সরকার আইন কার্যকর হওয়ার তারিখ নির্ধারণ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এনআইডি কার্যক্রম যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে।

এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ভোটার তালিকার জন্য পৃথক আইন আছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনই করবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে রোডম্যাপ থেকে এগিয়ে আছি, কোথাও পিছিয়ে নেই। আমরা টাইমলাইনের মধ্যে ঢুকে গেছি। সুতরাং একটা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য কমিশন যখন যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য কমিশন সচিবালয়কে তার সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে।’

নির্বাচনী প্রশিক্ষণের বিষয়ে সচিব বলেন, এখন প্রশিক্ষক তৈরির প্রশিক্ষণ চলছে। এই প্রশিক্ষকরা ১০ লাখ ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন। এ ছাড়া ইউএনও, জেলা নির্বাচন কমিশনার, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ সুপার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, পুলিশ কমিশনারদের প্রশিক্ষণ অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ধাপে ধাপে শুরু হবে। প্রশিক্ষণে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা, আরপিও সংশোধন, বিধি সংশোধন ইত্যাদি সম্পর্কে ব্রিফিং হবে। নভেম্বর মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা কে হবেন তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কবে তফসিল ঘোষণা করা হবে সেই সিদ্ধান্তও হয়নি। কমিশন বৈঠকে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত