Ajker Patrika

পাচারের অর্থে বিদেশে বাড়ি: বাংলাদেশি মালিকদের নাম জানে না কোনো সংস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
পাচারের অর্থে বিদেশে বাড়ি: বাংলাদেশি মালিকদের নাম  জানে না কোনো সংস্থা

পাচারের অর্থে বিদেশে অনেক বাংলাদেশির বাড়ি করার অভিযোগটি আড়াই বছর আগের। বিষয়টি নিয়ে ওই সময় কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। পরে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট। পাচার করা অর্থে বিদেশে বাড়ি তৈরি করা ব্যক্তিদের বিস্তারিত তথ্য জানতে চান আদালত। এরপর এই বিষয়ে রিটও দায়ের করা হয়। নির্দেশের পর আড়াই বছরে বেশ কয়েকবার বিষয়টি শুনানির জন্য উঠেছে হাইকোর্টে। তবে বিদেশে যেসব বাংলাদেশির বাড়ি আছে, সেই তথ্য এখনো জানাতে পারেনি কোনো সংস্থা।

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ এসেছে, এ রকম একটি তালিকা হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে যাঁরা বিদেশে বাড়ি করেছেন, সেই তালিকা এখনো হয়নি। অনুসন্ধান চলছে।

আর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এই বিষয়ে কাজ করছে। এটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। কেননা যাঁরা অর্থ পাচার করেন, তাঁদের হাত শক্তিশালী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে কানাডায় টাকা পাচারের সত্যতা পাওয়ার কথা জানান। তবে সেখানে তিনি কারও নাম প্রকাশ করেননি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ওই বছরের ২২ নভেম্বর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন। ওই আদেশে অর্থ পাচারে জড়িতদের নাম, ঠিকানা, পাচার করা অর্থে বিদেশে বাড়ি তৈরিসহ বিস্তারিত তথ্য জানতে চান হাইকোর্ট। একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর বিষয়টি আবার শুনানির জন্য ওঠে। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর ফের শুনানিতে ওঠে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদেশি ব্যাংকে বিশেষত সুইস ব্যাংক গোপনে জমা রাখা বিপুল অর্থ উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস রিট করেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত রুলসহ আদেশ দেন। বিদেশি ব্যাংকে অর্থ পাচারকারীদের নাম-ঠিকানা, অর্থের পরিমাণ এবং ওই অর্থ উদ্ধারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে বলা হয়। সেই সঙ্গে অর্থ পাচার, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের বিষয় নিরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।

১৪ জন বিবাদীর প্রতি নির্দেশনা থাকলেও কেবল পুলিশের মহাপরিদর্শকের পক্ষ থেকে ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিল করা হয় আদালতে। তাতে অর্থ পাচারের সাত মামলায় ১২ ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৮ টাকা পাচারের তথ্য জানানো হয়। ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর বিষয়টি আবারও শুনানির জন্য উঠলে দুদক আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। তাতে বিদেশে অর্থ পাচার করে যাঁরা বাড়ি কিনেছেন, তাঁদের খুঁজে বের করার বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি দুদক। তবে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে প্যারাডাইস পেপারস ও পানামা পেপারসে অর্থ পাচারকারী হিসেবে প্রকাশিত ৪৩ জনের নাম আদালতে জমা দেওয়া হয়।

২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি বিএফআইইউ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পক্ষ থেকে পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আসা মোট ৬৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পূরক তালিকা দাখিল করা হয় হাইকোর্টে। এরপর ৩০ জানুয়ারি বিষয়টি আবারও শুনানির জন্য ওঠে। ওই সময় পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আসা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে অনুসন্ধানের অগ্রগতি জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয় সিআইডি ও দুদককে।

নির্দেশ অনুযায়ী সিআইডি ও দুদক ২০২২ সালের ৬ মার্চ প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থ পাচার ঠেকাতে ৭ সদস্যের কমিটি করেছে সিআইডি।

এদিকে তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির সম্পদ কেনা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এই বিষয়ে অনুসন্ধান করতে সম্পূরক আবেদন করেন আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস। শুনানি শেষে হাইকোর্ট চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি বিষয়টি অনুসন্ধান করতে দুদক, বিএফআইইউ, সিআইডি ও এনবিআরকে নির্দেশ দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান হওয়া ইরানি নারী এখন পানামার জঙ্গলে

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত