সেতু দেবে যাওয়ার দায় কার

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪: ২৭

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় ফানাই নদের বিভিন্ন স্থানে ছয়টি সেতু ভেঙে ও দেবে গেছে। প্রায় দেড় বছর ধরে এসব সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন চারটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।

এদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সেতু দেবে যাওয়ার দায়ভার দিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো)। তারা বলছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিতভাবে নদ পুনর্খননের কারণেই সেতুগুলো দেবে গেছে। অন্যদিকে পাউবো বলছে, এলজিইডি নদের পরিমাপ বিবেচনায় না নিয়ে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় সেতুগুলো দেবে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফানাই নদের ওপর ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে হাসিমপুর-লক্ষ্মীপুর সড়কে একটি, ভবানীপুর-নর্তন-তিলাসীজুড়া সড়কে একটি, মুকুন্দপুর-কবিরাজী সড়কে একটি ও গুতগুতি-কবিরাজী সড়কে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপির) আওতায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উদ্যোগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবানীপুর-হেলাপুর সড়কে একটি ও ২০১১-১২ অর্থবছরে ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে মুকুন্দপুর-পালগ্রাম সড়কে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়।

২০২১-২২ অর্থবছরে পাউবো প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ফানাই নদের প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকা খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে পুনর্খনন করে। কাজ শেষ হওয়ার আগেই অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল নামে। তখন এসব সেতুর মধ্যবর্তী স্থান দেবে যায় ও সংযোগ সড়কের দুই পাশ থেকে মাটি সরে যায়।

সরেজমিনে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে। ছয়টি সেতুর মধ্যে তিনটি সেতু পুরোপুরি ভেঙে গেছে। পাঁচ মাস আগে উজানের ঢলে মুকুন্দপুর-পালগ্রাম সড়কে নির্মিত সেতুটি দুই পাশ ভেঙে গিয়ে পুরোপুরি দেবে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নদী পুনর্খননের পর থেকেই সেতুগুলো দেবে গেছে। তিনটি সেতু দিয়ে পায়ে হেঁটে পারাপার হতে হয়। দুটি সেতু একেবারে ভেঙে গেছে। কুলাউড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শিমুল আলী বলেন, এডিপির আওতায় নির্মিত সেতু দুটি এখন আর সংস্কারের কোনো সুযোগ নেই। নতুন করে বরাদ্দ হলে পুনর্নির্মাণ করা হতে পারে।

এলজিইডি মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আজীম উদ্দীন সরদার বলেন, অপরিকল্পিত নদ পুনর্খননের কারণে এ অবস্থা হয়েছে। ওই স্থানে চারটি সেতু নির্মাণের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।

আজীম উদ্দীন সরদার আরও বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ইউনিয়ন ও প্রধান সড়কে চলাচলের জন্য নদের ওপর সেতু নির্মাণের প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু এ সেতুগুলো গ্রামীণ সড়কের আওতায়, সে জন্য অনুমোদন হবে কি না জানি না। তবে আমরা এগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ দেখিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এখন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে হয়তো সেতু করা যাবে।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পাউবো মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘নদের পরিমাপ অনুযায়ীই পুনর্খনন কাজ হয়েছে। সেতুটি অনেক আগে করা হয়েছে। এ সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নদের পরিমাপ বিবেচনায় আনেনি। ফলে, সেতুর এ অবস্থা ঘটেছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত