রাষ্ট্র সংস্কারে প্রত্যাশার যাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৪, ০৮: ১৮

রাষ্ট্র সংস্কারের প্রত্যাশায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হলো। বঙ্গভবনে গতকাল বৃহস্পতিবার শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা শপথ গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন রাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও উপদেষ্টাদের শপথবাক্য পাঠ করান।

প্রধান উপদেষ্টা ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা থাকছেন ১৬ জন। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সরকারবিহীন অবস্থার অবসান হলো। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রূপ নিলে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। পতন ঘটে দীর্ঘ ১৫ বছরের আওয়ামী লীগের শাসনের। সেদিন থেকে কার্যত সরকারবিহীন ছিল দেশ। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি অনুযায়ী গতকাল ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কও হয়েছেন উপদেষ্টা।

গতকাল ফ্রান্স থেকে দেশে ফেরার পর ড. ইউনূস ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বলেন, ‘সরকারকে দেখে মানুষের বুক ফুলে উঠবে, যে আমাদের সাহায্য করবে, রক্ষা করবে। যে সরকার হবে, সে সরকার মানুষকে রক্ষা করবে, মানুষের আস্থাভাজন হবে।’

বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয় রাত ৯টা ১০ মিনিটে। এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রবেশ করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনূস। জাতীয় সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সময় ছাত্রদের অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। রাত ৯টা ২০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টাকে শপথ পড়ানো শুরু করেন। ৯টা ৩২ মিনিটে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষ হয়।

একে একে শপথ নেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৩ জন উপদেষ্টা। তাঁরা হলেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ, আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, হাসান আরিফ, তৌহিদ হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, ফরিদা আখতার, খালিদ হাসান, নুরজাহান বেগম ও শারমিন মুরশিদ। ঢাকার বাইরে থাকায় অপর তিন উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায়, ফারুক-ই-আজম ও সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না।

শপথ অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান, জাসদের (রব) সভাপতি আ স ম আবদুর বর, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান, বিকল্প ধারার মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি নুরুল হক নুর, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে তিন বাহিনীর প্রধানেরা, সামরিক-বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কূটনীতিকেরা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবেরা উপস্থিত ছিলেন। তবে শপথ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে দেখা যায়নি।

ড. ইউনূস রাত ৮টা ২৫ মিনিটে বঙ্গভবনে আসেন। এ সময় সড়কের দুই পাশে অপেক্ষমাণ জনতা তাঁকে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান, বিভিন্ন স্লোগান দেন। এর আগে বেলা ২টা ১০ মিনিটে তিনি প্যারিস থেকে ঢাকায় পৌঁছালে তাঁকে স্বাগত জানান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ তিন বাহিনীর প্রধানেরা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

শপথ গ্রহণের পর উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা একটা স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়েছি। সবাইকে আমি একটা কথা সব সময় বলি, যে অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি, আমরা যেন সেই শক্তির মতো হয়ে না যাই। তাহলে আমাদের ছাত্র-জনতা যে অভাবনীয় একটা সুযোগ আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে, দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ সম্পন্ন করেছে, সেটার অর্জন ও মাহাত্ম্য ম্লান হয়ে যাবে। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল কাজ কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কার চাই। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, বৈষম্য দূর করা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করাই হবে সরকারের মূল উদ্দেশ্য।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত