কর্তাদের গাড়ি রাখতে নির্মাণ হচ্ছে ৬৪ কোটি টাকার ভবন

তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, ঢাকা
আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১১: ১৯
Thumbnail image

রাজধানীর নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেট ধরে বটতলার দিকে এগোলে চোখে পড়ে বিশাল আকারের নির্মাণাধীন একটি স্থাপনা। সম্পূর্ণ স্টিলের কাঠামোতে বানাতে থাকা এ স্থাপনা ঘিরে পথচারীরাও বেশ কৌতূহলী।

সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে রিকশাচালক থেকে শুরু করে নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা অনেক মানুষকেও রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে স্থাপনাটির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। বিশাল আকারের হ্যান্ডলিং মেশিনের মাধ্যমে একের পর এক অ্যালুমিনিয়ামের কম্পোজিট প্যানেল বসানোর দৃশ্য দেখছিল তারা। আবার অনেকেই ওপরে তাকিয়ে গুনে দেখছিল ভবনটি কয় তলা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশাল আকারের এই স্থাপনা বানানো হচ্ছে মূলত আজিমপুর কলোনিতে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য। আগামী তিন মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হবে। 

যদিও শতভাগ বিদ্যুৎ-নির্ভর এমন ব্যয়বহুল পার্কিং স্থাপনা নির্মাণ করা অযৌক্তিক মনে করছেন পরিকল্পনাবিদেরা। গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আজিমপুর সরকারি কলোনিতে বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১৩ তলাবিশিষ্ট এই স্বয়ংক্রিয় কার পার্কিং বানানো হচ্ছে। ৭ হাজার ২০০ বর্গফুট আয়তনের এ স্থাপনায় মোট ২৪০টি গাড়ি রাখা যাবে। স্থাপনাটি নির্মাণ করতে খরচ হচ্ছে ৬৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান স্যামজাংটেক লিমিটেড থেকে সামগ্রী সরবরাহ নিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রওশন এলিভেটরস লিমিডেট। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে গাড়ি রাখার জন্য এখানে মোট ৫০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ লাগবে।

প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী নিয়াজ তানভীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইতিপূর্বে অধিদপ্তর এমন অত্যাধুনিক কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এখানে পার্কিং ভবনটির ফ্যাকাড বা ক্ল্যাডিংয়ে ফায়ার রেটেড অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে। সম্পূর্ণ স্টিল স্ট্রাকচারের হওয়ায় ভবনটি দুই ঘণ্টা ফায়ার রেটেড কোটিং দিয়ে রং করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফায়ার প্রোটেকশনের জন্য স্প্রিংকলার ব্যবহারসহ অন্যান্য অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার আওতাভুক্ত থাকবে।’ 

তবে অনেক কম খরচে বহুতল ভবনগুলোর বেসমেন্টে পার্কিং বানানো সম্ভব বলে মনে করেন নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, এ ধরনের পার্কিং স্থাপনা করতে হলে ওয়েটিং-বে বা বড় জায়গার প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া অনেক কম খরচে বহুতল ভবনগুলোর বেসমেন্টে এই পার্কিং বানানো সম্ভব ছিল।

কিন্তু দুঃখজনক হলো—আজিমপুরে মাঠ ও গাছপালা বিনষ্ট করে এ ধরনের স্থাপনা করা হলো। সেখানে শতভাগ বিদ্যুৎ-নির্ভর একটি স্টিল স্ট্রাকচার করার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছি না। অথচ সবকিছু ঠিক রেখে স্বল্প খরচে নির্মিত ভবনগুলোর মধ্যেই তা সমন্বয় করা সম্ভব ছিল। এটা উচ্চ খরচের মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত