দিনে দিনে দীর্ঘ হচ্ছে আমের মৌসুম

রিমন রহমান, রাজশাহী
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৩, ০৯: ২৪

দেশের সোনা ফলা মাটির সেরা ফল আম। পছন্দ না হলে দু-চারজন হয়তো দ্বিমত করতে পারেন, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনের তোড়ে তা যে টিকবে না, দ্বিমত পোষণকারীরাও তা মানবেন। সেই আমের মিষ্টি ঘ্রাণ আর মধুর রসের অপেক্ষা শুরু হয় মূলত বৈশাখে। গাছে তখন ঝুলতে থাকে ডাগর-ডাগর আম। এরপর বৈশাখের শেষভাগ থেকে জ্যৈষ্ঠ আষাঢ়-শ্রাবণ।

এই তো ছিল দেশের আমের মৌসুম। শেষ দিকে শ্রাবণ-ভাদ্রে দু-চারটা ফজলি-আশ্বিনা। স্বাদে খুব মজা না হলেও তাই সই। এরপর আবার অপেক্ষা পরের বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যের জন্য। কিন্তু গত এক-দেড় দশকে এই চিত্র বদলে গেছে অনেকটাই। এখন আশ্বিনাতে আর আম শেষ হয় না। তখনো বাজারে আম থাকে।

 সেই আমগুলোর একটি বারি-১২। চাষিরা অবশ্য আমটিকে এ নামে চেনেন না। তাদের কাছে এর নাম ‘গৌড়মতি’। আশ্বিনা শেষ হওয়ার এক মাস পরেও গৌড়মতি ঝোলে গাছে গাছে। গৌড়মতি শেষ হওয়ার পর প্রকৃতিতে নামে কার্তিকের শীত। সেই শীতেও পাওয়া যায় আরেকটি সুস্বাদু আম। এই আমের নাম ‘কাটিমন’। থাইল্যান্ডের এই আম পাওয়া যায় বছরে তিনবার। রাজশাহী অঞ্চলে গৌড়মতির পর অক্টোবর-নভেম্বর মাসেও আমটি পাওয়া যায়।

কৃষিবিদেরা বলছেন, কয়েক বছর আগেও ল্যাংড়া ও ফজলির পর বাজারে তেমন সুস্বাদু আম পাওয়া যেত না। এখন লেট ভ্যারাইটির গৌড়মতি ও কাটিমন ছাড়া পাওয়া যায় বারি-৩, বারি-৪, বারি-১১ এবং ভিনদেশি আম ব্যানানা, তাইওয়ান রেড ও কিউজাই। তবে আমের মৌসুম বড় করতে রাজশাহী অঞ্চলে বড় ভূমিকা রাখছে গৌড়মতি ও কাটিমন।

কৃষি বিভাগের হিসাবে, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার ২৯৮ হেক্টর জমিতে গৌড়মতি চাষ হয়েছে। আম পাওয়া যেতে পারে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টন। একইভাবে এই চার জেলায় কাটিমনের বাগান রয়েছে ৬০৯ হেক্টর। সেখান থেকে পাওয়া যেতে পারে সাড়ে ৫ হাজার টনের বেশি। আর চার জেলায় ৩ হাজার ২৭৬ হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৩৯ হাজার টন পাওয়া যাবে বারি-৪ জাতের আম।এ ছাড়া চার জেলা থেকে বারি-১১ প্রায় ৩ হাজার টন, ব্যানানা সোয়া ১ হাজার টন পাওয়া যেতে পারে।

অন্য সব আমকে ছাড়িয়ে রাজশাহীর এই চার জেলায় এখন সবচেয়ে বেশি আমবাগান রয়েছে মৌসুমের শেষ দিকের আম্রপালি জাতের আমের। চার জেলায় মোট ২৩ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে রয়েছে এই আমের বাগান। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮৬ হাজার টন। মৌসুমের শেষ দিকে আমে ভালো দাম পান চাষিরা। এতে তাঁরা লাভবান হন।

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় পুকুরপাড়ে ২ হাজার কাটিমন আমের গাছ লাগিয়েছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, বছরে তিনবার ফলন পাওয়া যাচ্ছে গাছ থেকে। এবার আরও দেড় মাস পর তাঁর বাগান থেকে আম উঠবে। এগুলো ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করা যাবে। এরপর অক্টোবর-নভেম্বরে আবার আম বিক্রি করা যাবে। তখন ১২ থেকে হাজার ১৬ হাজার টাকা মণ দরে আম বিক্রি করা যায়। কাটিমনে ফলন একটু কম হলেও পুষিয়ে যায়।

নওগাঁর পত্মীতলা উপজেলার কাটাবাড়ি ও ধামইরহাটের তালপুকুরে ৭০ বিঘার করে দুটি মিশ্র ফলের বাগান আছে মোশাররফ চৌধুরীর। বাগান দুটিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাছ রয়েছে গৌড়মতি আমের। তিনি জানান, গত বছর ১২ হাজার টাকা মণ দরে এই আম বিক্রি করেছিলেন তিনি। আমটি ল্যাংড়ার মতো সুস্বাদু

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমের মৌসুম আগের চেয়ে বড় হয়েছে। এটাকে আরও বড় করার জন্য গবেষণা চলছে। কাটিমনটাকে নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। তাহলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেও আম পাওয়া যাবে।’

আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শামছুল ওয়াদুদ বলেন, ‘লাভ বেশি বলে কৃষক এখন লেট ভ্যারাইটির আম চাষের দিকে ঝুঁকেছে। ফলে লম্বা সময় ধরে আম পাওয়া যাচ্ছে।’

সারা বছর আম খাওয়ার আরও একটি ব্যবস্থা হয়েছে। শামছুল ওয়াদুদ জানালেন, রাজশাহী অঞ্চলে আগে আম সংরক্ষণের কোনো উপায় ছিল না। ফলে মৌসুম শেষে আম পাওয়া যেত না। এ বছর বেসরকারি উদ্যোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের হিমাগার উদ্বোধন হয়েছে।

সেখানে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টন আম রাখা যাবে। এই আম সারা বছর পাওয়া যাবে। যাঁরা আম খেতে পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য এটা দারুণ খবর।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত