বিলীন স্থাপনা, বাস্তুচ্যুত মানুষ

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২২, ০৬: ৪২
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২২, ১৪: ২১

শেরপুরের নকলা উপজেলার চর অষ্টধর ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙন। ইতিমধ্যে এ অঞ্চলের প্রায় ১ হাজার ৫০০ একর ফসলি জমি নদে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া রাস্তাসহ নানা স্থাপনা ভেঙে পড়েছে নদে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে কয়েক শ পরিবার। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দিন দিন বাড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তর পাড়ের ভাঙনে গত দুই বছরে নারায়ণখোলা গ্রামের প্রায় ১ হাজার ৫০০ একর আবাদি জমি নদে চলে গেছে। বিলীন হয়েছে হাজার হাজার গাছপালা, ৫ শতাধিক ঘরবাড়িসহ ২টি মসজিদ ও খেলার মাঠ। বাস্তুচ্যুত হয়েছে কয়েক শ পরিবার। ভাঙনের ভয়ে নারায়ণখোলা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন একতলা পাকা ভবনটি নিলামে বিক্রি করে পাঠদান চলছে একটি পরিত্যক্ত আধা পাকা ঘরে। সেটিও বিলীনের পথে। এটি বিলীন হয়ে গেলে এলাকায় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাবে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা।

নারায়ণখোলা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির মুশফিকা খাতুন বলে, ‘স্কুলডা নদীত চইলা গেলে আমার লেহাপড়াও বন্ধ অইয়া যাইব। দূরের কোনো স্কুলে যাইয়া আমার আর পড়ালেহা অইব না।’

চতুর্থ শ্রেণির সিয়াম হোসেন বলে, ‘পত্তিদিন স্কুলঘরের কাছ থাইক্যা মাডি নদীত ভাইঙা পড়তাছে। কবে জানি পুরা স্কুলডাই নদীত চইলা যায়। তাইলে আমার লেহাপড়া শেষ অইয়া যাইব।’

অভিভাবক জুলহাস মিয়া বলেন, ‘স্কুল নদীত চইলা গেলে আমার পক্ষে দূরের কোনো স্কুলে নিয়া মেয়েডারে পড়ানি সম্ভব অইত না।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামছুন নাহার জানান, ভাঙনকবলিত বিদ্যালয়ের পাকা ভবনটি নিলামে বিক্রির পর থেকে পরিত্যক্ত পুরোনো আধা পাকা ঘরে শ্রেণিপাঠ চলছে। বিষয়টি বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানোর পরও কোনো সুব্যবস্থা হচ্ছে না।

কলেজছাত্র আল মামুন বলেন, গত বছর যেখানে একটি বিশাল খেলার মাঠ ছিল, তা এখন নদে বিলীন হয়ে গেছে। এখন খেলাধুলা করার মতো আর কোনো মাঠ নেই। তা ছাড়া নারায়ণখোলা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়া জনচলাচলের একমাত্র কাঁচা রাস্তাটি নদে বিলীন হয়ে যাওয়ায় কৃষক পরিবারগুলো চরম বিপাকে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা হযরত আলী বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর আগে নদের ভাঙনে আবাদি জায়গাজমি, বাড়িঘর, পুকুর, গাছপালা সবকিছু হারিয়ে ধারকর্জ করে আবার ঘরবাড়ি করেছিলাম। এখন সেটাও ভাঙনের মুখে।’

স্থানীয় বাসিন্দা আলমাছ আলী (৬০) বলেন, ‘একসময় আমার সবকিছুই ছিল। ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব। পরিবার-পরিজন নিয়ে কী করব, কী খাব, কোথায় যাব ভেবে পাচ্ছি না।’

চর অষ্টধর ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানী বলেন, নারায়ণখোলা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরোনো ঘরটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়বে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফজিলাতুন নেছা জানান, নারায়ণখোলা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পুনঃস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে নতুন জায়গায় অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড শেরপুরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শাহজাহান জানান, নদীর ভাঙন রোধে ইতিপূর্বে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত