আজ থেকে তিনদিনের অবরোধ, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে বিরোধীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৮: ৩৬
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৮: ৩৭

ঢাকার মহাসমাবেশে খানিকটা বিপর্যয়ে পড়েও সরকার পতনের চলমান আন্দোলন থেকে পিছু হটেনি বিএনপি। মহাসমাবেশের পর দেশব্যাপী হরতাল করার পর দাবি আদায়ে এবার তিন দিনের টানা অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছে দলটি। আজ মঙ্গলবার থেকে সড়ক, রেল ও নৌপথে এই অবরোধ কর্মসূচি পালন শুরু করবে তারা।

এদিকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশও দেশব্যাপী আজ মঙ্গলবার থেকে তিন দিনের লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

পূর্বঘোষিত এই কর্মসূচি সফল করতে সমমনা দল ও জোটগুলোকে সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। এই কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে রাজপথের চলমান আন্দোলনে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা করছেন তাঁরা।

আজ থেকে দেশব্যাপী শুরু হতে যাওয়া বিএনপি ও জামায়াতের তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির মধ্যেও পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহন চালানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। গতকাল সোমবার বিকেলে সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

অন্যদিকে ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার জানান, অবরোধে ট্রেনের কোনো সময়সূচি পরিবর্তন হবে না। ট্রেন সময়মতো চলবে।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে চলমান এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। গোলাগুলি, হামলা, ভাঙচুর ও রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষে সমাবেশ পণ্ড হয়।

ওই ঘটনার পরে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের বিপরীতে অধিকতর কঠোর অবস্থানে নিয়েছে সরকার। একের পর এক মামলা আর দেশব্যাপী চলমান অব্যাহত ধরপাকড়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। মহাসমাবেশের পরদিন গত রোববার গ্রেপ্তার হন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের আরও অনেক শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে এখনো। এই অবস্থায় মামলা, গ্রেপ্তারসহ নানা ধরনের আতঙ্কে দলের নেতা-কর্মীরা।

দলটির নেতারা মনে করছেন, হরতালের দিন নেতা-কর্মীরা পুরো শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে না পারলেও জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার মধ্য দিয়ে ওই কর্মসূচি সফল হয়েছে। এর ফলে নেতা-কর্মীরা আবারও চাঙা হয়ে উঠছেন। এবার অবরোধের মধ্য দিয়ে নেতা-কর্মীরা আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে নেতৃত্বের কোনো সংকট হবে না বলেও মনে করছেন তাঁরা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যে গ্রেপ্তার হয়, হবে। মাঠে যারা থাকবে, তারা নেতৃত্ব দেবে, আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। নেতৃত্বের কোনো সংকট হবে না। আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।’

এদিন বিকেলে ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে অবরোধ প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘এটা হবে সর্বাত্মক অবরোধ। সর্বাত্মক বলতে রাজধানীর সঙ্গে জেলার যে পথগুলোতে সংযোগ রয়েছে, জেলার সঙ্গে উপজেলা বা উপজেলার সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের যে পথগুলোতে সংযোগ রয়েছে, সেসব পথে অবরোধ হবে, রেলপথগুলোতে অবরোধ হবে, নৌপথগুলোতে অবরোধ হবে।’ সংবাদপত্রের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন সিলিন্ডার, জরুরি ওষুধ পরিবহন অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে বলেও জানান রিজভী।

এদিকে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গেও সভা করছে বিএনপি। এসব বৈঠক থেকে দেশব্যাপী বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি পালন করতে শরিক দলগুলোকে বলা হয়েছে। কর্মসূচি সফল করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানাচ্ছে তারাও।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘আন্দোলনের যত ফর্ম আছে, সব ফর্ম ব্যবহার করব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠ ছাড়ব না। রাজপথে আছি, রাজপথে থাকব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত