বারবার আগুন, দোষারোপেই দায় শেষ

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

শনিবার সকালে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লেগে কয়েক শ দোকান পুড়েছে, ক্ষতিও হয়েছে কয়েক শ কোটি টাকার। এক মাসের কিছু বেশি সময়ের ব্যবধানে ঢাকা শহরেইকয়েকটি স্থানে আগুন লাগার খবরে এখন জনমনে একধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এই সময়কালে আগুন লেগেছে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায়, গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে, বঙ্গবাজারে, হাজারীবাগে চামড়া কারখানায়, নবাবপুরে গুদামঘরে এবং শেষে নিউ সুপার মার্কেটে। সবার মনেই প্রশ্ন, এরপর কোন মার্কেট বা বিপণিবিতানে আগুন লাগার খবর শুনতে হবে?

২০১৯ সালে ফায়ার সার্ভিস ঢাকার ১ হাজার ৪৮টি বিপণিবিতান ঝুঁকিপূর্ণ ও অতিঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল। এর মধ্যে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি বিপণিবিতান ও নিউ সুপার মার্কেটও ছিল। ফায়ার সার্ভিসের অভিযোগ, একাধিকবার চিঠি দিলেও ঝুঁকিপূর্ণ ও অতিঝুঁকিপূর্ণ বিপণিবিতানগুলোর সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্ট মালিক সমিতি কোনো উদ্যোগ নেয়নি। কেন এই উদ্যোগহীনতা, সে প্রশ্নের জবাব কারও কাছ থেকেই পাওয়া যাবে না। কারণ জবাবদিহির সংস্কৃতি থেকে আমরা অনেক দূরে সরে এসেছি।

তাহলে কি এভাবে একের পর এক আগুন লাগার ঘটনা প্রতিকারহীনভাবে ঘটতেই থাকবে? মানুষের ব্যবসা, আয়-উপার্জনের উপায় এবং ভবিষ্যৎ স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে যাবে? একেকটি ঘটনার জন্য দু-এক দিন কিছু বিলাপ করে সব দায়মোচন হয়ে যাবে?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো নাশকতা কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি-সন্ত্রাসের কথা ভুলে না যেতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা একটির পর একটি হওয়ায় নাশকতার বিষয়টি অনেকের মাথায়ই ঘুরছে। কারও উদাসীনতা, অবহেলা, অসতর্কতার কারণে আগুন লাগতে পারে না, তা নয়। দুর্ঘটনাবশতও যেমন আগুন লাগতে পারে আবার কেউ পরিকল্পিত বা উদ্দেশ্যমূলকভাবেও আগুন লাগিয়ে দিতে পারে। একই রকমের ঘটনা যখন পরপর ঘটতে থাকে, তখন তাকে দুর্ঘটনা বলে মেনে নিতে কারও মন সায় না-ও দিতে পারে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দ্বারাও এমন দুষ্কর্ম ঘটতে পারে; বিশেষ করে আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ যখন বিদ্বেষময়, তখন সন্দেহ হওয়াও অযৌক্তিক নয়।

প্রধানমন্ত্রী নাশকতার যে কথা বলেছেন তা মোটেও অমূলক নয়। তবে তিনি যখন এই নাশকতার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে কোনো দিকে ইঙ্গিত করেন, তখন বিষয়টি একটু গোলমেলে হয়ে যায়। যাদের দায়িত্ব তদন্ত করে প্রকৃত সত্য বের করা, তারা তদন্তকাজ শেষ করার আগেই যদি সরকারপ্রধান কারও দিকে আঙুল তোলেন, তাহলে তদন্ত কর্মকর্তারাও প্রভাবিত হয়ে

ওই দিকেই সব মনোযোগ আটকে রাখতে পারেন। দোষারোপ করা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আগুনের জন্য বিএনপি-জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করলে তারাও সরকারের দিকেই আঙুল তুলবে। হচ্ছেও তাই। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগই অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী। রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে মানুষ কোনো হাস্যকর বক্তব্য নয়, দায়িত্বশীলতা আশা করে। আগুন নিয়ে ছেলেখেলা ভালো নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত