মুরগির বিষ্ঠা দিয়ে মাছ চাষ, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

মুজাহিদ বিন জালাল, কটিয়াদী
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২২, ১২: ২৯

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে মুরগির খামারের নিচে মাছের চাষ করা হয়েছে। খামারের মুরগির বিষ্ঠাই ব্যবহার করা হচ্ছে মাছের খাদ্য হিসেবে। মাছের খাদ্য হিসেবে মুরগির বিষ্ঠার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তা মানছেন না খামারিরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুরগির বিষ্ঠায় থাকা জীবাণু মাছের পেটে গিয়ে রোগবালাই বাড়ছে। আবার সেই মাছ খেয়ে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাণিজ্যিক ও সমন্বিত খামারের মাছের প্রধান খাদ্য হচ্ছে মুরগির বিষ্ঠা। উপজেলার বিভিন্ন মুরগির খামার থেকে বিষ্ঠা সংগ্রহ করে ফেলা হয় পুকুরে। এলাকার বিত্তবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তি দ্বারাই এই খামারের ব্যবসা চলছে বলে দাবি স্থানীয় সচেতন মহলের।

তবে মাছচাষিরা জানান, মাছের খাদ্যমূল্য অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় এখন আর আগের মতো পুষিয়ে উঠতে পারছেন না তাঁরা। ফলে মাছের খাদ্য হিসেবে মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার করছেন। একশ্রেণির ব্যবসায়ীর মাধ্যমে উপজেলাসহ আশপাশের এলাকার মুরগির খামারগুলো থেকে বিষ্ঠা সংগ্রহ করে থাকেন তাঁরা। কম দামে পাওয়া ওই বিষ্ঠা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও মাছের খাদ্য হিসেবে খামারে তা ব্যবহার করছেন মাছচাষিরা।

উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কটিয়াদীতে ২ হাজার ১৭০ জন মাছচাষি রয়েছেন। এর মধ্যে ৫২টি বাণিজ্যিক মৎস্য খামারে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ হয়। খামারগুলোতে বছরে উৎপাদন হয় প্রায় ৫ হাজার ৩৫৪ টন মাছ। উপজেলায় মাছের চাহিদা রয়েছে ৬ হাজার ৮৮৮ টন। ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ৫৩৩ টন।

উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন জানান, মুরগির বিষ্ঠায় অ্যান্টিবায়োটিক রেসিডিও, ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ডিজিজ ইনফেকট্যান্ট থাকে। মুরগির বিষ্ঠা মাছে খাওয়ার পর সেই মাছ খেলে সেগুলো মানবদেহে প্রবেশ করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তা ছাড়া, মুরগির বিষ্ঠায় থাকা অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম, ফসফরাস পুকুরের পরিবেশ নষ্ট করে।

মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন আরও জানান, মুরগির বিষ্ঠায় ক্ষতিকর উপাদানগুলো পানিতে অক্সিজেনের স্বল্পতা ঘটানোর মাধ্যমে মাছের স্বাস্থ্যের ক্ষতি ও রোগব্যাধি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই সব খামারে মাছের রোগবালাই দেখা দিলে কোনো ওষুধে কাজ করে না।

মাছচাষিদের মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার না করার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা সেমিনারের মাধ্যমে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উসমান গণি বলেন, মৎস্য খামারের ওপরে পোলট্রি ফার্ম স্থাপন করে মুরগির বিষ্ঠার মাধ্যমে উৎপাদিত মাছ স্বাস্থ্যকর নয়। এ জন্য মৎস্য খামারের ওপর কোনো পোলট্রি খামারের অনুমোদন দেওয়া হয় না। তারপরেও বেশির ভাগ খামারে মাছের খাদ্য হিসেবে বিষ্ঠা ব্যবহার করার জন্য পোলট্রি ফার্ম তৈরি করা হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তাজরিনা তৈয়ব বলেন, মুরগি পালনে নানা রকম অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।যেগুলো বিষ্ঠার মাধ্যমে মাছের শরীরে প্রবেশ করে। এগুলো ধ্বংস হয় না। এই সব খামারের মাছ খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরে রোগজীবাণু প্রবেশ করে, যা মানবদেহের জন্য অনেক ক্ষতিকর। বিশেষ করে কিডনি ও লিভারের বেশি ক্ষতি করে।

ডা. তাজরিনা তৈয়ব আরও বলেন, জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষ্ঠার ব্যবহার বন্ধে জনপ্রতিনিধি, সমাজসচেতন মানুষসহ সবাইকে নিজের অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত